বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম
Published: 27th, April 2025 GMT
‘জন্মই আমার আজন্ম পাপ’- পংক্তিমালার কবি দাউদ হায়দার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ৭৩ বছর বয়সে শনিবার রাতে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের একটি বয়স্ক নিরাময় কেন্দ্রে তিনি মারা যান। কবি দাউদ হায়দার একাধারে একজন লেখক ও সাংবাদিক ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি একজন ব্রডকাস্টিং সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার একজন আধুনিক কবি ছিলেন, যিনি সত্তর দশকের কবি হিসেবে চিহ্নিত।
‘বঙ্গীয় সংস্কৃতি বিদেশে, বাঙালি একাত্ম’ লেখাটি ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সমকালে প্রাকাশিত হয়। কবির স্মৃতিতে পাঠকদের জন্য লেখাটি পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
স্বর্গ কেউ দেখেছেন, অজানা। শুনিনি। ওখানে আবার ঢেঁকিও আছে! কী করে এই প্রবাদ তৈরি, কবে থেকে, হলফ করে কেউ বলতে অপারগ। হতে পারে, বাঙালি যেখানে যায় স্বভাব বদলায় না। কেন বদলাবে? নিজস্বতা হারালে ট্র্যাডিশন বরবাদ।
আমাদের জানা আছে, ‘বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’-এর বয়স চার কুড়ির বেশি। দেশভাগের আগে থেকে। নামে বঙ্গ। প্রতিষ্ঠা পশ্চিমবঙ্গে। ধরে নেওয়া হয়, কলকাতায় গোড়াপত্তন হলেও পূর্ববঙ্গ যুক্ত। তখন একই বঙ্গ, বিভাজন পূর্ব-পশ্চিম নামে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে কী কাণ্ডই না ঘটেছিল!! ইতিহাস বিস্তৃত।
না-ঘটলে আমরা কি ‘আমার সোনার বাংলা’ গান পেতুম? ‘ও আমার দেশের মাটি’?
বঙ্গ বিভাজন হলেও এখনও ‘ইস্ট বেঙ্গল’ ফুটবল ক্লাব কলকাতায় বহাল তবিয়তে। দেশভাগের আগে ইস্ট বেঙ্গল। ১৯৪৭ (১৪ আগস্ট)-এ ভারত খণ্ডিত। ইস্ট বেঙ্গলের নামকরণ পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১-এ ১৬ ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশ।
লক্ষণীয়, বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন-এর নাম বদলায়নি। ভারতের নানা রাজ্যে ছড়িয়েছে। একই নামে। যেখানে বাঙালি আছে, ৫ বছর পরপর (গত শতকের আশির দশকের আগে ৩ বছর পরপর) সম্মেলন। বেছে নেওয়া কোনো রাজ্যের বিশেষ শহর। এখন বিশ্বের নানা দেশে। উত্তর আমেরিকার যেখানে সরগরম বাঙালি। নাম বঙ্গ সম্মেলন। নামে ‘বঙ্গ’ হলেও প্রাধান্য পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির। বাংলাদেশ থেকে কেউ আমন্ত্রিত নয়।
নিউইয়র্কে বিশ্বজিৎ সাহার প্রতি বছর ‘মুক্তধারা’ (ঢাকার মুক্তধারা প্রকাশনের কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহার ভাইপো বিশ্বজিৎ) দুই বাংলার লেখক, শিল্পী, বই নিয়ে তিন দিন বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন। ভেদাভেদ নেই বঙ্গের। প্রত্যেকে বাঙালি। দুই বাংলার মিলিত সম্মেলন। এলাহি কাণ্ড। বঙ্গ নানা সাজে ঝলমলে। বই প্রদর্শন, সাহিত্যিককুলের জমজমাটই নয় কেবল। বক্তৃতা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। যোগদান উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্য, জার্মানিসহ ইউরোপের বাঙালির। মূল উদ্দেশ্য বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির পরিচয় বহুলতায়। শুরুতে বিশ্বজিৎ সাহার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। এখন অনেকেই সঙ্গী। স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান।
বেলজিয়াম প্রবাসী ব্রাসেলসের লিপিকা ভট্টাচার্য, তাঁর স্বামী লীলাঞ্জন ভট্টাচার্য ইউরোপে বঙ্গীয় সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, সংস্কৃতি বিস্তারিত করার মহৎ উদ্যোগী। নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের। জানা ছিল, বাংলার শিল্প, সাহিত্য, সংগীত তাঁর আরাধ্য।
লিপিকা ভট্টাচার্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজির ছাত্রী। চমৎকার সুন্দরী। গুণবতী। কলকাতার দূরদর্শনে (টিভি) জনপ্রিয় উপস্থাপিকা।
কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যে বঙ্গ ও ভারতীয় সংগীত, সংস্কৃতির প্রচারে নিরলস। অক্লান্ত কর্মী। ইউরোপেও। আয়োজন করেন তিন দিনের অনুষ্ঠান (৭-১০ সেপ্টেম্বর) হল্যান্ডের আইন্ডহোভেনে। প্রতিষ্ঠানের নাম ‘সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদ’। সর্বভারতীয় নামে ভ্যাবাচ্যাকা খাই। মূলত বঙ্গীয়। কাজল সেনগুপ্তর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গের বহুমান্য শিল্পী-সাংস্কৃতিকজন সংযুক্ত। সেতারি মণিলাল নাগ, নৃত্যশিল্পী অমিতা দত্ত প্রমুখ একাসনে। ভারত সরকারের আর্থিক সাহায্যেও সর্বভারতীয় সংগীত ও সংস্কৃতি পরিষদ স্ফীত। কাজলের মূল উদ্দেশ্য বঙ্গীয় সংস্কৃতি, সংস্কৃতির নানা রূপ, সংগীত বিস্তারণ।
লিপিকা ভট্টাচার্য দায় নিয়েছেন ইউরোপে (ব্রিটেন বাদে)। কয়েক মাসে দিনরাত খেটে, লিপিকা ভট্টাচার্যের ভাষায় ‘অক্লান্ত’, প্রথম অধিবেশন (পোশাকি নাম ‘ফার্স্ট ইউরোপিয়ান কনভোকেশন কনফ্লুয়েন্স’)।
লিপিকার সঙ্গে বহুজন একত্রিত। ডক্টর শান্তনু সেনগুপ্ত নিরলস কর্মী। সঙ্গী প্রজনা ভট্টাচার্য, অনিন্দিতা ভট্টাচার্য, মহুয়া মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রত্যেকের দায় অনুষ্ঠান সুচারুর। যাকে বলে ‘ভ্যারাইটি অনুষ্ঠান’। নাচ। গান। কাব্যপাঠ। ছোটদের নাটক। ডাচ কবি/সাহিত্যিক/শিল্পীও অংশী। লিপিকা ভট্টাচার্য বললেন, ‘বঙ্গ সংস্কৃতির রূপ, ঐতিহ্য কতটা প্রাচীন, কতটা ঐশ্বর্যে ভরপুর, গরীয়ান তুলে ধরার প্রচেষ্টা।’ অনুষ্ঠানের আলাদা ঘরে অনিন্দিতার শিল্পকর্ম, প্রদর্শনী। দেখে আনন্দিত। সুখী।
নামে সর্বভারতীয়, বাংলাদেশিও একাত্ম। ফ্রাঙ্কফুর্ট থেকে হাজির আতিক (সংগীতশিল্পী), ইউটিউবের ‘শুদ্ধস্বর ডটকম’-এর হাবিবুল্লাহ বাবুল। হল্যান্ডে বসবাসরত বহু বাংলাদেশি। তারাও নানা অনুষ্ঠানমালায় অংশী। দুই বঙ্গের বঙ্গীয় আত্মিকতা। কতটা, বললেন হাবিবুল্লাহ বাবুল। তিনিও ফ্রাঙ্কফুর্টে দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সম্মিলনে বহু বছরই কর্মী। অনুষ্ঠানের ইতি পর্বে লিপিকা ভট্টাচার্য জানান, ‘পরবর্তী আয়োজনে দুই বঙ্গের মিলন আরও নিবিড়, ঘনিষ্ঠতায় সমুজ্জ্বল হবে। বঙ্গীয় সংস্কৃতির নানা রূপই ইউরোপে তুলে ধরব। বঙ্গ কেবল পশ্চিমবঙ্গ নয়, বাংলাদেশও।’
প্রেক্ষাগৃহে তুমুল করতালি।
দাউদ হায়দার: কবি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত অন ষ ঠ ন ইউর প কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
একজন মার্করাম, একটি সেঞ্চুরি এবং ২৭ বছর পর একটি ট্রফি
কে বেশি ক্লান্ত—ক্রিকেট না দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্রিকেটের ক্লান্তি দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছু দিতে না পারার আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্লান্তি ক্রিকেটের কাছ থেকে বৈশ্বিক কোনো শিরোপা নিতে না পারার! অবশেষে ক্লান্তির সেই কবিতার ক্লাস শেষ হলো। ক্রিকেট দক্ষিণ আফ্রিকাকে কিছু দিল অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট খেলাটিকে দায়মুক্ত করল তার কাছ থেকে একটি বিশ্বকাপ নিয়ে! ক্রিকেটকে দায়মুক্ত করা বা দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যর্থতার একঘেয়ে ক্লান্তি ঘোচানোর নায়ক কে? লর্ডসে ২০২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচটি বিশ্লেষণ করলে প্রশ্নটিকে অতীব সহজ মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। উত্তরটাও সবার এখন জানা। একবাক্যে সবাই বলবেন, নায়কের নাম এইডেন মার্করাম।
টেস্ট, ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি—ক্রিকেটের যে সংস্করণের কথাই বলুন, দক্ষিণ আফ্রিকা খেলাটির অন্যতম পরাশক্তি। কিন্তু ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে হওয়া আইসিসি নকআউট ট্রফি (মিনি বিশ্বকাপ) ছাড়া আজকের আগপর্যন্ত কোনো বৈশ্বিক ট্রফি প্রোটিয়াদের ছিল না।
অবশেষে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মাথায় বিশ্বসেরার মুকুট উঠল, ক্রিকেট-তীর্থ নামে পরিচিত লর্ডসে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক মেইস বা গদা তুলে ধরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই দলটির অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। ২৭ বছর পর বড় কোনো টুর্নামেন্টে দক্ষিণ আফ্রিকা বলতে গেলে একা হাতে শিরোপা জিতিয়েছেন মার্করাম। আরও স্পষ্ট করে বললে আসলে প্রোটিয়াদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দিয়েছে মার্করামের ইতিবাচকতা, আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ব নিয়ে খেলার দৃঢ়তা।
ঠিক ১১ বছর আগে মার্করাম নিজেকে ঠিক এ রকম তিনটি শব্দেই বর্ণনা করেছিলেন। সালটা ২০১৪, সেবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ছিলেন মার্করাম। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আইসিসির এক অনুষ্ঠানে মার্করামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—নিজেকে তিনটি মাত্র শব্দে কীভাবে বোঝাবেন। উত্তর যেন মুখস্থ, এমনভাবেই ১৯ বছর বয়সী তরুণ মার্করামের উত্তর ছিল—ইতিবাচক, আত্মবিশ্বাসী ও দায়িত্ববান।
সেঞ্চুরির পর মার্করাম