মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের সংখ্যা জানতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বিভিন্নভাবে চেষ্টার পরও মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের অর্ধেকের বেশি অংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে এবার মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের বাকি অর্ধেক অংশের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ইন্টারগ্যালাক্টিক বা আন্তগ্যালাক্টিক স্থানে বিশাল আয়নিত হাইড্রোজেনের মেঘের মধ্যে দৃশ্যমান পদার্থের বাকি অংশ লুকিয়ে রয়েছে।

গবেষণার তথ্যমতে, হাইড্রোজেনের একটি আন্তগ্যালাক্টিক কুয়াশার মতো মেঘ আছে। সেখানেই নিখোঁজ অর্ধেক পদার্থ লুকিয়ে রয়েছে। সক্রিয় একটি গ্যালাক্টিক কোর থেকে বেশ দূরে অবস্থান করছে এই মেঘ। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের বিজ্ঞানী বোরিয়ানা হাদজিইস্কা জানিয়েছেন, ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি থেকে অনেক দূরে সমস্ত নিখোঁজ পদার্থের খোঁজ পাওয়া গেছে। সাধারণ বা ব্যারিয়নিক পদার্থ মহাবিশ্বের মোট বস্তুশক্তির মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি অংশের মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার, যার পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং ডার্ক এনার্জি ৬৮ শতাংশ। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। অনেক বছর ধরেই নিখোঁজ ব্যারিয়নিক পদার্থের রহস্য বিজ্ঞানীদের চিন্তায় ফেলছে।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, পরমাণুর সংখ্যা অনুসারে মহাবিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ভরের দিক থেকে ৭৩ শতাংশ হাইড্রোজেন। খোঁজ না পাওয়া পদার্থগুলোকে ব্যারিয়নিক পদার্থ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এত দিন মহাবিশ্বের অর্ধেকের বেশি হাইড্রোজেনের খোঁজ জানা ছিল না। মহাকাশে হাইড্রোজেন বিকিরণের কারণে আয়নিত হতে পারে। যার ফলে তখন ক্ষীণ আলো দেখা যায়। গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী স্থানে থাকা এসব গ্যাস এতটাই পাতলা ও দুর্বল যে সহজে শনাক্ত করা যায় না। সেই সমস্যা সমাধানে আলোর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার জন্য মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাবিশ্বের প্রথম সময়কার এই আলো এখনো অনেকটা ফসিলের মতো মহাজগতকে পূর্ণ করে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী সিমোন ফেরারো জানিয়েছেন, ‘মহাবিশ্বে আমরা যা কিছু দেখি, তার পেছনে রয়েছে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড। এটি আসলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের প্রান্ত। গ্যাস কোথায় আছে, তা দেখার জন্য তার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। আলো যখন আয়নিত হাইড্রোজেনের পাতলা মেঘের মধ্য দিয়ে যায়, তখন গ্যাসের ইলেকট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে তা উজ্জ্বল বা ম্লান হতে পারে। একে কাইনেমেটিক সানিয়াভ-জেল্ডোভিচ প্রভাব বলা হয়। যদিও মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডও সত্যিই ক্ষীণ এবং দেখা কঠিন। সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও মেঘের খোঁজ মিলেছে। গ্যাস ও ডার্ক ম্যাটারের মধ্যে সংযোগের প্রকৃতি জানতে ভবিষ্যতের কসমোলজি বিশ্লেষণে নতুন তথ্য জানা যাবে।

সূত্র: এনডিটিভি

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক পদ র থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ