মহাবিশ্বের নিখোঁজ পদার্থের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা
Published: 28th, April 2025 GMT
মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের সংখ্যা জানতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বিভিন্নভাবে চেষ্টার পরও মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের অর্ধেকের বেশি অংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে এবার মহাবিশ্বের দৃশ্যমান পদার্থের বাকি অর্ধেক অংশের সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ইন্টারগ্যালাক্টিক বা আন্তগ্যালাক্টিক স্থানে বিশাল আয়নিত হাইড্রোজেনের মেঘের মধ্যে দৃশ্যমান পদার্থের বাকি অংশ লুকিয়ে রয়েছে।
গবেষণার তথ্যমতে, হাইড্রোজেনের একটি আন্তগ্যালাক্টিক কুয়াশার মতো মেঘ আছে। সেখানেই নিখোঁজ অর্ধেক পদার্থ লুকিয়ে রয়েছে। সক্রিয় একটি গ্যালাক্টিক কোর থেকে বেশ দূরে অবস্থান করছে এই মেঘ। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলের বিজ্ঞানী বোরিয়ানা হাদজিইস্কা জানিয়েছেন, ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি থেকে অনেক দূরে সমস্ত নিখোঁজ পদার্থের খোঁজ পাওয়া গেছে। সাধারণ বা ব্যারিয়নিক পদার্থ মহাবিশ্বের মোট বস্তুশক্তির মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি অংশের মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার, যার পরিমাণ ২৭ শতাংশ এবং ডার্ক এনার্জি ৬৮ শতাংশ। ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। অনেক বছর ধরেই নিখোঁজ ব্যারিয়নিক পদার্থের রহস্য বিজ্ঞানীদের চিন্তায় ফেলছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, পরমাণুর সংখ্যা অনুসারে মহাবিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ভরের দিক থেকে ৭৩ শতাংশ হাইড্রোজেন। খোঁজ না পাওয়া পদার্থগুলোকে ব্যারিয়নিক পদার্থ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এত দিন মহাবিশ্বের অর্ধেকের বেশি হাইড্রোজেনের খোঁজ জানা ছিল না। মহাকাশে হাইড্রোজেন বিকিরণের কারণে আয়নিত হতে পারে। যার ফলে তখন ক্ষীণ আলো দেখা যায়। গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী স্থানে থাকা এসব গ্যাস এতটাই পাতলা ও দুর্বল যে সহজে শনাক্ত করা যায় না। সেই সমস্যা সমাধানে আলোর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করার জন্য মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাবিশ্বের প্রথম সময়কার এই আলো এখনো অনেকটা ফসিলের মতো মহাজগতকে পূর্ণ করে রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী সিমোন ফেরারো জানিয়েছেন, ‘মহাবিশ্বে আমরা যা কিছু দেখি, তার পেছনে রয়েছে মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড। এটি আসলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের প্রান্ত। গ্যাস কোথায় আছে, তা দেখার জন্য তার ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। আলো যখন আয়নিত হাইড্রোজেনের পাতলা মেঘের মধ্য দিয়ে যায়, তখন গ্যাসের ইলেকট্রনের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে তা উজ্জ্বল বা ম্লান হতে পারে। একে কাইনেমেটিক সানিয়াভ-জেল্ডোভিচ প্রভাব বলা হয়। যদিও মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ডও সত্যিই ক্ষীণ এবং দেখা কঠিন। সেই কঠিন পরিস্থিতিতেও মেঘের খোঁজ মিলেছে। গ্যাস ও ডার্ক ম্যাটারের মধ্যে সংযোগের প্রকৃতি জানতে ভবিষ্যতের কসমোলজি বিশ্লেষণে নতুন তথ্য জানা যাবে।
সূত্র: এনডিটিভি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক পদ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।