কাজ নাকি কাজের ‘রেজাল্ট’কে প্রাধান্য দেবেন?
Published: 29th, April 2025 GMT
একটি দিন সবার জন্যই ২৪ ঘণ্টা সময় প্রদান করে। একথা সত্য যে বেশিরভাগ মানুষের সময়ের সমস্যা নেই। তাদের সমস্যা সময়কে প্রায়োরিটি বা প্রাধান্য দেওয়াতে। একটি পার্থক্য মানুষের জীবনে অনেক বড় ব্যবধান তৈরি করে দেয়। জীবন আপনাকে একটি দর্শন দেয়। এখানে প্রধান এবং অপ্রধান অনেক কিছু আছে। সারাদিন ব্যস্ত থাকা সহজ। কিছু মানুষ একের পর এক কাজ করে যান। আর যারা সফল হতে চান, তারা শুধু কাজকে প্রাধান্য দেন না, কাজের ফলাফলকে বেশি প্রাধান্য দেন। সফল হতে চাওয়া মানুষেরা শুধু সময়কে প্রাধান্য দেন না, সময় কীভাবে কাজে লাগাবেন তার ওপর গুরুত্ব দেন।
‘‘আমেরিকান উদ্যোক্তা, লেখক এবং মোটিভেশনাল স্পিকার জিম রবিন বলেন, বিলিয়নিয়ার, লেখক, নেতা কিংবা যেকোনো স্বপ্নবাজ মানুষ প্রত্যেকেই একটি দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় পেয়ে থাকেন। কোনো মানুষ এক দিনে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পান না। পার্থক্য তৈরি হয়, কে কীভাবে এই সময় ব্যবহার করছে তার ওপর।’’
আরো পড়ুন:
৮ মিনিটের ‘পাওয়ার ন্যাপ’ শরীরে যা ঘটায়
আড়িয়াল বিলের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় চেষ্টা চলছে: উপদেষ্টা
জিম রবিন
সাফল্য নির্মাণ করতে হয় সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দিনে দিনে একটু একটু করে এগোতে হয়।
জিম রবিনের ভাষায়, ‘‘সাফল্য এমন নয় যে আপনি একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন আর উঠে দাঁড়ালেন। সাফল্য নির্মাণ করতে হয় প্রত্যেক ঘণ্টায়। প্রত্যেক সিদ্ধান্তে। এখানে আমার একটি প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি আপনার ২৪ ঘণ্টাকে কীভাবে কাজে লাগান? ’’
বেশির ভাগ মানুষ সকালে জেগে ওঠেন। তারপর তাদের ফোন চেক করেন। চারপাশের ঘটনা জেনে বুঝে তারা তাদের ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেন। এই প্রভাব পরে তাদের মনে ও কাজে। আশাবাদী মানুষ রাতে ঘুমানোর আগে পরের দিন কি করবেন, কীভাবে করবেন সেই পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলেন। এজন্য ১০ মিনিট সময় নিয়ে থাকেন তারা। তারপর সারাদিনের কাজগুলো গুরুত্বেরভিত্তিতে সম্পাদন করার পরিকল্পনা করেন।
জিম রবিন বলেন, ‘‘যারা দিনের শুরুটা দেরিতে করেন, তারা শুরুতেই পিছিয়ে যান। সকালে আপনার দুইটি পছন্দকে প্রাধান্য দিন কোনো অ্যালার্ম সেট করা ছাড়াই সকালে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। এরপর আপনার আপনার নিজের কাজ ও সম্পর্কগুলো প্রাধান্য দিন।– সকালটা সুশৃঙ্খলভাবে শুরু করুন। এতে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। আপনার মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে। ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠুন। শুধু জেগে উঠতে হবে এই জন্য নয়, আপনি একটি লক্ষ্য পূরনের উদ্দেশ্যে দিনটি শুরু করুন। সকালের শুরুটা আপনার দিন বদলে দিতে পারে। আপনি নিজের জন্য পরিকল্পনা সাজান, এবং নিজেই নিজের বস হয়ে উঠুন।’’
আপনি যখন ঘুম থেকে ওঠেন, তখন আপনার দিনটি শুরু হয়। সুতরাং ভোরে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। সারাদিনে শুধুমাত্র কাজের ওপর গুরুত্ব দেবেন না, গুরুত্বের ভিত্তিতে কাজকে প্রাধান্য দিন।
জিম রবিন আরও বলেন, ‘‘অনেক মানুষ সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। কিছু ব্যস্ত মানুষ জানেন না, কীভাবে দ্রুত এগোতে হয়। কারণ তারা জানেন না দিনের শুরুটা কোন কাজ দিয়ে করবেন। ‘কনফিউজ মুভমেন্ট’ তাদের এগোতে দেয় না।’’
সূত্র: জন রবিনের বক্তব্য থেকে অনূদিত
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।