প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার প্রধান আসামি মেহেরাজ ইসলাম ও অপর আসামি হৃদয় মিয়াজীকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এদিন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক এ কে এম মাইন উদ্দিন। মেহেরাজের আইনজীবী জামিন আবেদন করেন। তবে হৃদয় মিয়াজীর পক্ষে কেউ জামিন আবেদন করেনি।

শুনানি শেষে বিচারক মেহেরাজের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতের বনানী থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার উপপরিদর্শক মোক্তার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ২৩ এপ্রিল দুপুরে গাইবান্ধা থেকে মেহেরাজকে গ্রেপ্তা‌র করা হয়। পরে ২৫ এপ্রিল তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে ২১ এপ্রিল হৃদয় মিয়াজী রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে গ্রেপ্তা‌র করে র‍্যাব। ২৩ এপ্রিল তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।  আলোচিত এ হত্যা মামলায় ইতোমধ্যে দুই আসামি দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, জাহিদুল ইসলাম পারভেজ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১৯ এপ্রিল বিকাল ৪টার পর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ওই ঘটনার এক পর্যায়ে ছুরিকাঘাতে জাহিদুল ইসলাম পারভেজ নিহত হন।

এ ঘটনার পরের দিন ২০ এপ্রিল পারভেজের ফুফাতো ভাই হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারীসহ আটজনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ এপ্রিল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে পুরি-সিংগারার দোকানে আড্ডা ও হাসাহাসি করছিল। বিকাল ৩ টায় আসামি ১ থেকে ৩ নাম্বার আসামি তার কাছে হাসাহাসির কারণ জানতে চাওয়ার উভয়ের মাঝে তর্ক শুরু হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকসহ প্রক্টর মীমাংসা করেন। বিকাল ৪ টা ৪০ মিনিটে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা আসামিরা চুরি, চাকু, চাপাতি ও লাঠিসোঁটা নিয়ে পারভেজ ও তার বন্ধুদের উপর হামলা করে। এতে পারভেজ মারাত্মক আহত হয়। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ