আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পাড়ায়-মহল্লায় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি দ্রুত সংগঠিত হবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি শৃঙ্খলিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাব। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব। প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেবো। আপনারা প্রস্তুত হন। জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমরা আসছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।

গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ বলেন, ‘যদি এই সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না। জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে। যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং যেই সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের উদ্দেশ্যে আমরা এনসিপি গঠন করেছি, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু এবং প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করব এবং মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব।’

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে এবং সনদে স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা থাকতে হবে।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নয় মাস পরেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে, আমাদেরকে রাজপথে কথা বলতে হচ্ছে। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা বলেই আমরা মনে করি,’ বলেন তিনি

নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে অংশ নিয়েছিলাম সেই সরকারের কাছে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিজম স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করা।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সালের গণভুত্থানের পর স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ বছর পর বাংলাদেশের জনগণকে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নামতে হয়েছিল। কারণ ওই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি।’

‘গত ১৬ বছরেও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে জনগণ রাজপথে নেমে আসেনি। বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে,’ যোগ করেন তিনি।

এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল তিনটি ভোটে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। শাপলায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, মোদি-বিরোধী আন্দোলনে তারা হত্যাকাণ্ড এবং দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। জনগণের ওপর তারা এই দেশের পুলিশকে দিয়ে, সেনাবাহিনীকে দিয়ে, বিজিবিকে দিয়ে গুলি চালিয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর কোনো আলোচনার প্রশ্ন থাকে না। এজন্য আমরা বলছি যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তার রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বিচার চলা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন মিডিয়ায় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে, শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী, সেটা কি প্রমাণিত হয়েছে কি হয় নাই? সেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সাংবাদিক নন আপনারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর।’

‘জাতিসংঘের রিপোর্ট স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নির্দেশে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে, নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে,’ বলেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম আওয় ম ল গ র জন ত ক গণহত য র জন য আম দ র সরক র মহল ল র জপথ এনস প আওয় ম জনত র

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতি অস্বীকার করেছে

গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে অস্বীকার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি অতিদ্রুত দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং (গণহত্যার) বিচার চলাকালীন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

আজ শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাহিদ ইসলাম।

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, এই রায় দেশের জনগণ গত ৫ আগস্ট দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জনরোষে ফ্যাসিস্ট সরকারের নেতাদের দেশ থেকে পালাতে হয়েছে। এরপর আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করবে কি না, এই আলোচনাই আসতে পারে না।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, সংস্কার, নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিচার—কোনোটিই একে অন্যের বিরোধী নয়। তিনটির সমন্বয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রূপান্তর সম্ভব। তিনি আরও বলেন, মৌলিক সংস্কারের জায়গায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতে হবে। যে সংস্কারের মাধ্যমে শাসনব্যবস্থা ও ক্ষমতার কাঠামো পরিবর্তন হতে পারে। তা না হলে জনগণের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হবে না।

নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচন মানেই ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া নিয়ে বাংলাদেশে সব সময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন এবং দলগুলোর নিজেদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করতে হবে। তাঁর আশা, এবার শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করা সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যার বিচারে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে
  • এমন আবহ তৈরি করা হচ্ছে, নির্বাচন চাওয়া যেন অপরাধ
  • নারায়ণগঞ্জে আর কোনো মাফিয়ার জন্ম চাই না : নুর
  • আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ
  • ফরিদপুরের ঈশান গোপালপুর গণহত্যার ৫৪তম বার্ষিকী পালিত
  • নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলসহ সব দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি হেফাজতের
  • গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণ আওয়ামী লীগের রাজনীতি অস্বীকার করেছে
  • গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • ‘ফুল স্টপ মারেন’—মানবিক করিডর প্রসঙ্গে সরকারকে নুরুল হক