আ. লীগ নিষিদ্ধের জন্য পাড়ায়-মহল্লায় জনতার আদালত তৈরি করব: নাহিদ ইসলাম
Published: 2nd, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পাড়ায়-মহল্লায় ফ্যাসিবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরির আহ্বান জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি দ্রুত সংগঠিত হবে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি শৃঙ্খলিত দল হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাব। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব। প্রতিটি দরজায় গিয়ে এনসিপির বার্তা পৌঁছে দেবো। আপনারা প্রস্তুত হন। জেলায় জেলায়, ইউনিয়নে ইউনিয়নে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় আমরা আসছি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য আমরা জনতার আদালত তৈরি করব।
গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, দলটির নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার বিকেলে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ বলেন, ‘যদি এই সরকার বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয় তবে আমরা বসে থাকব না। জনতার আদালতে আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিজমের বিচার নিশ্চিত করা হবে। যে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং যেই সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের উদ্দেশ্যে আমরা এনসিপি গঠন করেছি, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং জলবায়ু এবং প্রযুক্তির জন্য একটি নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করব এবং মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠা করব।’
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জুলাই সনদ কার্যকর করতে হবে এবং সনদে স্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা থাকতে হবে।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নয় মাস পরেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে, আমাদেরকে রাজপথে কথা বলতে হচ্ছে। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা বলেই আমরা মনে করি,’ বলেন তিনি
নাহিদ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে অংশ নিয়েছিলাম সেই সরকারের কাছে আমাদের অন্যতম দাবি ছিল জুলাই গণহত্যাসহ বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিজম স্বৈরাচারের বিচার নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘১৯৯০ সালের গণভুত্থানের পর স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৩০ বছর পর বাংলাদেশের জনগণকে আবার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে নামতে হয়েছিল। কারণ ওই গণঅভ্যুত্থানের রাজনৈতিক দলগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি।’
‘গত ১৬ বছরেও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বে জনগণ রাজপথে নেমে আসেনি। বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাজপথে নেমে এসেছিল ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে,’ যোগ করেন তিনি।
এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিল তিনটি ভোটে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে। তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছিল। শাপলায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, মোদি-বিরোধী আন্দোলনে তারা হত্যাকাণ্ড এবং দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। জনগণের ওপর তারা এই দেশের পুলিশকে দিয়ে, সেনাবাহিনীকে দিয়ে, বিজিবিকে দিয়ে গুলি চালিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর কোনো আলোচনার প্রশ্ন থাকে না। এজন্য আমরা বলছি যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করে তার রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বিচার চলা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন মিডিয়ায় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করছে, শেখ হাসিনা গণহত্যাকারী, সেটা কি প্রমাণিত হয়েছে কি হয় নাই? সেই সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সাংবাদিক নন আপনারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর।’
‘জাতিসংঘের রিপোর্ট স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের নির্দেশে আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায় জুলাই-আগস্টে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তাই আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, অবিলম্বে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে, নৌকা মার্কাকে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে,’ বলেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম আওয় ম ল গ র জন ত ক গণহত য র জন য আম দ র সরক র মহল ল র জপথ এনস প আওয় ম জনত র
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা জুলাই অভ্যুত্থানের সাংঘর্ষিক : কমরেড রতন
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাংলাদেশের লড়াকু জনগণ কোনো অন্যায় জবরদস্তি, দুঃশাসন মেনে নেয় না।
কোনো স্বৈরাচারকেই ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। বুকের রক্ত ঢেলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, জীবন দিয়ে জীবনের মর্যাদা অংশগ্রহণ করে, তা আবারও প্রমাণ করেছে ‘২৪ সালের জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে।
‘৫২-র ভাষা আন্দোলন, ‘৬২-র শিক্ষার আন্দোলন, ‘৬৬-র ৬ দফা আন্দোলন ‘৬৯-র এর গণ অভ্যুত্থান ‘৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৫৩ বছর ধরে শাসকরা ধনিকশ্রেণির স্বার্থে দেশ পরিচালনার কারণে মুক্তিযুদ্ধের অপূর্ণ আকাক্সক্ষা মানুষকে বারবার আন্দোলনে পথে নামিয়েছে।
একদলীয় শাসন, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইÑমূলত, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। এদেশের মানুষ অন্যায়ের কাছে মাথা নত করে নাই বলে ’৯০ ও ২০২৪ সালে অভ্যুত্থান করেছে।
কিন্তু জনগণ জীবন ও রক্তের বিনিময়ে যে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে পরবর্তীতে শাসকেরা পরাজিতদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এবং তাদের পথই অনুসরণ করে। এক দখলবাজের পরিবর্তে আর এক দখলবাজ, এক দুর্নীতিবাজের পরিবর্তে আর একজন ক্ষমতায় আসীন হয়। তাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বারবার ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসাবে নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে আয়োজিত গণসামবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার (১ আগস্ট) বিকালে ৩টায় চাষাড়া কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এ গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে শহরে গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সদস্যসচিব আবু নাঈম খান বিপ্লবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ১৫ নং ওর্য়াডের সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ^াস, বাংলাদেশ জাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সোলেমান দেওয়ান, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি সেলিম মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য এস এম কাদির।
এ সময় কমরেড রতন আরও বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি হবে। অভ্যুত্থানের ঠিক এক বছর যেতে না যেতেই অভ্যুত্থানের আকাঙখা পদদলিত করা শুরু হয়েছে। সারা দেশে জোরপূর্বক চাঁদাবাজি-তোলাবাজি পরিলক্ষিত হচ্ছে। সে সময় মানুষ স্লোগান তুলেছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, লুটপাট-দূর্নীতি, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, কর্তৃত্ববাদ ও স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে।
মানুষ চেয়েছিল এসব থেকে মুক্ত একটা সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ। কিন্তু বছর না পেরোতেই মানুষের সেই আশা ক্রমশ: ফিকে হয়ে আসছে। এক বছর পার হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য-বিবৃতি, নানা পদক্ষেপ; যথা বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের কাজে মনোযোগ না দিয়ে এখতিয়ার বর্হিভূতভাবে চট্রগ্্রাম বন্দর টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়া, রাখাইনে করিডোর প্রদান, তুরস্ককে অস্ত্র তৈরির কারখানা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া ও স্টার লিংকের সাথে চুক্তি ইত্যাদি কাজ করায় জনগণের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ^াসের জন্ম দিচ্ছে।
অন্যদিকে সরকার এখনও পর্যন্ত আহত-নিহতদের একটা পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে পারল না, যা গোটা জাতির জন্য দুঃখজনক। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে চলছে নানা তালবাহানা।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনের পর থেকেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সুযোগ নিয়ে সারা দেশে মব সন্ত্রাস সংঘটিত হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এই মবকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে বরং কিছু ক্ষেত্রে উসকানোর ঘটনাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। এই মবের কাছে সরকার জিম্মি হয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনের অন্যতম অগ্রণী শক্তি ছিলেন এদেশের নারীরা। অথচ সেই নারীদের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে সবার আগে।
উগ্র ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট শক্তি সারা দেশেই নারীদের স্বাধীন চলাফেরার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে, হামলা হয়েছে আদিবাসীদের উপর ও মাজারে, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে। এসকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ধ্বংস করার ঘটনা ঘটে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধ এই জাতির সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা। এক্যমত্যের নামে বিভিন্ন দলের মতামত উপেক্ষা করে জুলাই সনদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধান থেকে ৪ রাষ্ট্রীয় মূলনীতি বাদ দেয়ার পরিকল্পনা করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধী শক্তিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের চেতনার সাথে যা সাংঘর্ষিক।
এ সময় অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, পূর্ববর্তী হাসিনা সরকারের মতো এই সরকারের নানা কুশীলবদের বিরুদ্ধেও শত শত কোটি টাকা লোপাট, চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তোষণ ইত্যাদি নানা কিছু ঘটিয়ে এরা জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিটের বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছেন।
নেতৃবৃন্দ সরকারের এক বছরের কাজের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান। নেতৃবৃন্দ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্ন হতে পারে এমন পদক্ষেপ গ্রহন থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান।
নারায়ণগঞ্জে ডিএনডি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন- কথার ফুলঝুড়ি নয়, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের সোয়ারেজের কাজের দীর্ঘ সূত্রিতায় মানুষ ভয়াবহ বর্ষায় ভয়াবহ জলাবন্ধতায় পড়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করার দাবি জানান।
বিভিন্ন শিল্প কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই চলছে, অতর্কিতে কারখানা বন্ধ করা হচ্ছে, শ্রমিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। কারখানায় স্থিতিশীলতার জন্য এগুলো বন্ধ করার জন্য নেতৃবৃন্দ দাবি জানান।