Samakal:
2025-06-17@14:32:44 GMT

রক্তবর্ণ চাঁদ

Published: 2nd, May 2025 GMT

রক্তবর্ণ চাঁদ

আমরা সাধারণত চাঁদকে রাতের পর রাত তারার আকাশে রুপালি থালার মতো ঝুলে থাকতে দেখি। তবে মাঝেমধ্যে এটি কিছু অসাধারণ রূপ ধারণ করে, যা তার অর্ধচন্দ্র বা পূর্ণিমার অবস্থার চেয়েও আশ্চর্যজনক। কখনও কখনও এটি সম্পূর্ণরূপে অপ্রত্যাশিত লাল রং ধারণ করে। এটিকে অনেকটা অতিপ্রাকৃত কিছু বা বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনের প্রভাব বলে মনে হতে পারে; কিন্তু আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন– এই কথিত ‘ব্লাড মুন’ কোনো অশনিসংকেত নয়। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
ব্লাড মুন আসলে কী?
জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞরা জানান, চাঁদ শুধু একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় লাল হয়। যখন সূর্য, পৃথিবী এবং চাঁদ প্রায় সরলরেখায় সারিবদ্ধ হয় এবং চাঁদ সম্পূর্ণরূপে পৃথিবীর ছায়ায় 
ঢেকে যায়। ফলে সৃষ্ট লাল আভাযুক্ত চাঁদ, যা শুধু এই ছায়াবৃত অবস্থায় দৃশ্যমান তাকে ‘ব্লাড মুন’ বলা হয়।
ব্লাড মুন তুলনামূলকভাবে বিরল। গড়ে প্রতিবছর এক থেকে তিনটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়। তবে কোনো কোনো বছর একটিও হয় না। আবার সব চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর সব অংশ থেকে দেখা যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বশেষ দৃশ্যমান পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে। সেই পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়েছিল। কখনও কখনও এটি মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। তার আগে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়েছিল ২০২২ সালে।
চাঁদ কেন লাল হয়?
টোলেডো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষক জিলিয়ান বর্নাক বলেন, ‘পৃথিবীর ছায়ায় রং থাকাটা অদ্ভুত। কারণ আপনি ভাবতে পারেন, পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে আলো আটকে দেয়। পৃথিবী আসলে এমনটাই করে। সব দোষ আমাদের বায়ুমণ্ডলের।’ এই বিজ্ঞানী আরও বলেন, ‘একটি সহজ বিজ্ঞান পাঠের জন্য প্রস্তুত হোন। প্রথমে আপনাকে যা জানতে হবে তা হলো– বাতাস আলোকে প্রতিসরণ বা বাঁকাতে পারে। একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের ক্ষেত্রে, সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়ের সময় বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে সরাসরি আসা কিছু আলো বেঁকে যায় এবং পৃথিবীর ছায়ায় পুনঃনির্দেশিত হয়। পৃথিবীর ছায়ার সবচেয়ে অন্ধকার অংশ, যেখানে চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদ অবস্থান করে তাকে বলা হয় আম্ব্রা।’ জিলিয়ান বলেন, ‘সূর্যের রশ্মি বিভিন্ন রঙের আলোর তরঙ্গ দিয়ে তৈরি। নীল আলোর তরঙ্গ সবচেয়ে ছোট এবং পৃথিবীতে আঘাত করলে তা ছড়িয়ে পড়ে; কিন্তু লাল আলোর তরঙ্গ দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। এই আলো ছায়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারে। আপনি বলতে পারেন, পৃথিবীর ছায়ায় সবসময় গ্রহজুড়ে একই সময়ে ঘটতে থাকা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের একটি ক্ষুদ্র অংশ থাকে। যখন এই লাল আলো আম্ব্রায় চাঁদে আঘাত করে, তখন চাঁদ লাল দেখায়। এটিই ব্লাড মুনের কারণ!’
ব্লাড মুন কতটুকু লাল হয়?
একটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের রং গাঢ় কমলাবর্ণ থেকে লালচে হয়। মজার বিষয় হলো– প্রতিটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের সময় এই বর্ণ কিছুটা পরিবর্তিত হয়। কারণ প্রতিবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কিছু পার্থক্য থাকে। আকাশে দূষণ, মেঘ, ধুলো বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কণার কারণেও এই পরিবর্তন হতে পারে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান লাডা। পরবর্তী ‘ব্লাড মুন’ হবে এ বছরের ৭ সেপ্টেম্বর, যা এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপ ও আফ্রিকার কিছু অংশে দৃশ্যমান হবে। যুক্তরাষ্ট্রে দৃশ্যমান পরবর্তী ব্লাড মুন হবে আগামী বছরের ৩ মার্চ।
নাসা জানিয়েছে, ব্লাড মুন দেখতে আপনার কোনো বিশেষ সরঞ্জামের প্রয়োজন নেই। একমাত্র জিনিস যা বিষয়টি জটিল করতে পারে, তা হলো মেঘ।v
রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছোট্ট মেয়েকে কেন নিয়মিত ই মেইল পাঠাচ্ছেন আলিয়া
  • মেয়েকে কেন ই মেইল পাঠাচ্ছেন আলিয়া
  • নদীর কোলে শিক্ষার সংগ্রাম: চরের শিশুদের গল্প
  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে