ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ সড়ক ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী-চালাকচর সড়কে চলাচলকারী কয়েকটি পরিবহনের মালিক-শ্রমিকের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন। ‘গেটলক’ সার্ভিসের নামে বাড়তি টাকা নেওয়া হলেও সেবা দেওয়া হচ্ছে ‘লোকাল’ সার্ভিসের। প্রতিবাদ করলে নাজেহাল হন যাত্রীরা। কখনও কখনও তারা পরিবহন শ্রমিকদের মারধরের শিকার হন। 
পরিবহন মালিক-শ্রমিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কাপাসিয়া হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া, হোসেনপুর ও কিশোরগঞ্জ সদরে চলাচল করে জলসিঁড়ি এক্সপ্রেসের ৬৪টি, অনন্যা পরিবহনের ৪৭টি, উজানভাটি পরিবহনের ২৬টি ও অনন্যা ক্ল্যাসিকের ৫৪টি বাস। এর বাইরে মহাখালী বাস টার্মিনালের উত্তর পাশের একটি পেট্রোল পাম্প এলাকা থেকে কাপাসিয়া হয়ে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চালাকচর পর্যন্ত চলাচল করে সম্রাট পরিবহনের ৪৫টি ও সম্রাট ট্রান্সলাইনের ১৯টি বাস। তা ছাড়া গাজীপুর সদর থেকে কাপাসিয়া উপজেলার সর্বউত্তরের জনবহুল স্থান টোক বাজার পর্যন্ত যাতায়াত করে পথের সাথী রাজদূত পরিবহনের প্রায় ৪০টি বাস। 

যাত্রীদের ভাষ্য, এক সময় ঢাকা পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ও ভাওয়াল পরিবহনের শতাধিক বাস কাপাসিয়া সদর থেকে ঢাকা আসা-যাওয়া করত। কয়েক বছর ধরে কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা বা গাজীপুর সদরগামী কোনো বাস চলছে না। ফলে যাত্রার শুরুতে কিশোরগঞ্জ বা নরসিংদীর চালাকচর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে আসন পান না স্থানীয় যাত্রীরা। এমনকি লোকাল সার্ভিসের মতো সেবাদাতা দুটি পরিবহনের বাসছাড়া অন্যান্য বাসকে কাপাসিয়া সদর বা আশপাশের বেশির ভাগ স্টপেজে যাত্রী ওঠানামা করতে দেওয়া হয় না। 
কাপাসিয়া সদরের বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে কাপাসিয়ার দূরত্ব মাত্র ২৯ কিলোমিটার। এই পথে অনন্যা পরিবহন, অনন্যা ক্ল্যাসিক ও জলসিঁড়ি এক্সপ্রেসের বাসে যাতায়াত করতে হলে ২০০ টাকার টিকিট কাটতে হয়। প্রতিবাদ করলে কাউন্টার থেকে বলা হয়, যেহেতু কাপাসিয়ায় তাদের স্টপেজ নেই, তাই টোক বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত টিকিট কিনে কাপাসিয়া যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে কটু কথা শুনতে হয়। কখনও কখনও হেনস্তার শিকার হতে হয় যাত্রীদের।
উপজেলার টোক ইউনিয়নের বীর উজুলী এলাকায় বাড়ি মোজাম্মেল হোসেনের। তাঁর ভাষ্য, বীর উজুলী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তার দূরত্ব ৪৪ কিলোমিটার। এই পথের জন্য অনন্যা ক্ল্যাসিক পরিবহনের টিকিটে ১৫০ টাকা ভাড়া লেখা থাকে। কিন্তু ভাড়া আদায় করা হয় ১৯০ টাকা। 
টোক এলাকার ব্যবসায়ী আমানউল্লাহ বলেন, টোক থেকে কাপাসিয়ার দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার। কিন্তু পথের সাথী রাজদূত পরিবহনে ভাড়া আদায় করা হয় ৫০ টাকা। গাজীপুরের দূরত্ব ৫২ কিলোমিটার হলেও ভাড়া নেওয়া হয় ১৫০ টাকা। অন্যান্য পরিবহনেও গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টোক পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয় ১৭০ থেকে ২০০ টাকা। 
ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী-চালাকচর সড়কের যাত্রীরা সম্রাট পরিবহন ও সম্রাট ট্রান্সলাইনের কাছে জিম্মি বলে মন্তব্য করেন খিরাটি এলাকার মো.

জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি বলেন, ওই পরিবহন ছাড়া অন্য কোনো পরিবহনের বাস এ পথে নেই। তাই যাত্রীরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। কাপাসিয়া থেকে সালদৈ চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা। 
কিশোরগঞ্জের বাসিন্দা মো. আলী হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা হয়ে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১০২ কিলোমিটার। এই পথের জন্য অনন্যা পরিবহন ভাড়া আদায় করে ৩৩০ টাকা। এই রুটে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। 

জ্বালানি তেলের দর ওঠানামার পর ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল সর্বশেষ দূরপাল্লার বাসে প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১২ পয়সা ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। ডিজেলচালিত বাসের জন্য নতুন ভাড়ার হার প্রযোজ্য হবে জানিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়, সিএনজিচালিত বাসে ভাড়া ১ পয়সাও বাড়ানো যাবে না। কিন্তু ঢাকা-কাপাসিয়া-কিশোরগঞ্জ ও ঢাকা-কাপাসিয়া-মনোহরদী সড়কে চলাচলরত সাতটি কোম্পানির বাসের টিকিটেই নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া লেখা থাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিটে নতুন সিল বসিয়ে সাড়ে ৩ থেকে ৫ টাকা কিলোমিটার হারে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সরকারি ভাড়ার পরিবর্তে নিজেরা ভাড়ার তালিকা করেছে। সাধারণ যাত্রীরা তালিকা দেখতে চাইলে সেই তালিকা দেখিয়ে জিম্মি করে বাড়তি টাকা নেওয়া হয়। 
একাধিক যাত্রী জানিয়েছেন, কোনো কোনো কোম্পানির বেশির ভাগ বাস সিএনজিচালিত। কিন্তু তারা তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাড়া বাড়তি আদায় করে। কিন্তু তেলের দাম কমার পর সরকার ভাড়া কমালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। পরিবহন কোম্পানির মালিকরা সংঘবদ্ধ ও প্রভাবশালী হওয়ায় এই রুটের যাত্রীরা ভাড়া নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেও সুফল পান না। 
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে বাসচালক বা সহকারীরা কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন নেতার দাবি, এ সড়কে যাত্রীবাহী বাসের সংখ্যা বেশি। সড়কে ভয়াবহ যানজটের কারণে তাদের বাসগুলো পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছে না। একই সঙ্গে যাতায়াতে সময় বেশি লাগে বলে ট্রিপ কমে গেছে। তা ছাড়া রাস্তায় নানা খরচ মিটিয়ে বাসমালিকদের টিকে থাকাই মুশকিল।
গাজীপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য, কোনো অবস্থাতেই এসব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। এ বিষয়ে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা আক্তারের ভাষ্য, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি জানতেন না। শিগগিরই তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ পর বহন র অনন য

এছাড়াও পড়ুন:

গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা

শীর্ষ তারকা হওয়ার দৌড়ে কখনও অংশ নিতে দেখা যায়নি তাঁকে। যদিও ২০০৮ সালে ‘ক্লোজআপ ওয়ান: তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় সেরা শিল্পীর মুকুট মাথায় উঠেছিল, তবু ধীরলয়ে পথ হেঁটে গেছেন। নিজের কাজে অতিমাত্রার উচ্ছ্বাসও দেখাননি কখনও। নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সবসময়। গানে গানে কুড়িয়ে চলেছেন শ্রোতার ভালোবাসা। এ কারণে সমসাময়িকদের চেয়ে আলাদা করে তাঁকে চিনে নেওয়া যায়। বলছি, কণ্ঠশিল্পী সানিয়া সুলতানা লিজার কথা। গানের ভুবনে অন্তহীন পথচলায় যিনি এরই মধ্যে পেরিয়ে এসেছেন প্রায় দেড় যুগের পথ। সমান জনপ্রিয়তা নিয়ে এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার রহস্যটা কী? শুরুতে যখন এ প্রশ্ন লিজার সামনে তুলে আনা হলো, তখন দেখা গেল, লিজা নিজেই এর উত্তর খুঁজতে বসে গেছেন। এ পর্যায়ে হেসে বললেন, ‘না, এর উত্তর সত্যি জানা নেই। আসলে আমি তো গান গাই শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ আর ভালোবাসা কুড়ানোর জন্য। হ্যাঁ, শিল্পীসত্তাকে খুশি রাখতে গানের চর্চা ধরে রেখেছি বললে ভুল হবে না। তারপরও প্রতিটি আয়োজনে শ্রোতার ভালোলাগা, মন্দলাগাকে প্রাধান্য দিয়েছি। এতে করে কতটুকু জনপ্রিয়তা পেয়েছি। সেই জনপ্রিয়তা শুরু থেকে একই রকম আছে কিনা– সেটি তো শ্রোতারা ভালো বলতে পারবেন।’ লিজার এ কথা থেকে বোঝা যায়, যাদের কারণে শিল্পীজীবন বেছে নেওয়া, সেই শ্রোতা তাঁর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেখানে তাঁর গানগুলো ছিল চালিকাশক্তি। তবে ১৭ বছরের সংগীতের এ পথচলায় লিজার কণ্ঠে মেলোডি গান বেশি শুনতে পাওয়া গেছে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই দেড় যুগে নানা ধরনের গান গেয়েছি, তবু কেন জানি শ্রোতারা আমাকে মেলোডি গানের শিল্পীদের দলে রেখে দিয়েছেন। অস্বীকার করব না যে, আমার কণ্ঠে যে ধরনের গান ভক্তরা বেশি শুনতে চান, সে ধরনের গান বেশি গাই। এটিও ঠিক যে, মেলো কিংবা স্যাড-রোমান্টিক গানের প্রতি শ্রোতার ভালোলাগা সবসময় ছিল। এখনও অনেকে মেলোডি ছাড়া গানের কথা ভাবতে পারেন না। এজন্য নিরীক্ষাধর্মী কাজ করলেও আমি চাই না মেলোডি থেকে কখনও দূরে সরে থাকতে। তাই মেলোডি গান যেমন গাইছি, তেমনি গানের নিরীক্ষাও চালিয়ে যাচ্ছি।’ লিজার এ কথা যে মিথ্যা নয়, তা সর্বশেষ প্রকাশিত গানগুলোর শুনলে প্রমাণ মেলে। ক’দিন আগে বিটিভির ‘বৈঠকখানা’ অনুষ্ঠানে ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিনের সঙ্গে গাওয়া ‘তোমার নামে’ গানে যে লিজাকে শ্রোতা আবিষ্কার করবেন, তার সঙ্গে মেলানো কঠিন হবে সামজ ও রিজানের সঙ্গে ‘তিতা কথা’ গানের লিজাকে। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ‘খুব প্রিয় আমার’, ‘তুমি এলে’, ‘পূর্ণিমা চাঁদ’ গানগুলোয় লিজা অতীতের গায়কীকে ছাপিয়ে কীভাবে আরও নতুন হয়ে নিজ কণ্ঠ তুলে এনেছেন। 

মাঝে কিংবদন্তি শিল্পীদের বেশ কিছু কালজয়ী গানের রিমেকে কণ্ঠ দিয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন সংগীতবোদ্ধাদের। স্টেজ শো, রেডিও, টিভির আয়োজন থেমে শুরু করে সিনেমার প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে প্রমাণ দিয়েছেন, তিনি অন্যদের চেয়ে কোনোভাবে পিছিয়ে নন। এককথায়, বহমান সময়টিকে সুরেলা করে রেখেছেন অনিন্দ্য কণ্ঠ জাদুতে। 

আগামীতেও লিজার কণ্ঠ বাতাসে ভেসে বেড়াবে– এ অনুমান করা যায়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রক্তবর্ণ চাঁদ
  • মিষ্টি মেয়ের গল্প
  • চেন্নাইয়ের ঘরে বিষাদের বাজনা, ধোনির চোখে বিদায়ের আভা
  • গানের ভুবনে লিজার অন্তহীন পথচলা
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ