পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুল কবিরের বিরুদ্ধে ঈশ্বরদীর সাড়া এলাকায় নিয়মবহির্ভূতভাবে অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযানে ড্রেজার, নৌকার সেলফ, ব্যাটারি, টুলবক্স, মোবাইল ও নগদ টাকা লুট করার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (৩ মে) বিকেলে ঈশ্বরদী উপজেলার সাড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাটে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

ভুক্তভোগীদের মধ্যে সুলতান আলী বিশ্বাস টনি বলেন, ‘‘সরকারি সকল পাওনাদি পরিশোধ এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করে আমরা সাড়া এলাকার পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন করে আসছি। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে শুক্রবার (২ মে) পার্শ্ববর্তী নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুল কবির সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে এই এলাকায় এসে অভিযান চালিয়েছেন এবং চার জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। অভিযানে ড্রেজার, নৌকার সেলফ, ব্যাটারি, টুলবক্স, মোবাইল ও নগদ টাকা জব্দ করে নিয়ে গেছেন।’’  

আরো পড়ুন:

ফেনীতে শিয়ালের মাংস বিক্রি, ৬ মাসের কারাদণ্ড

রাজউকের দুই এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা পাবনা ও ঈশ্বরদী প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, এই অভিযানে তাদের অনুমতি ছিল না। আজিজুল কবির অবৈধভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই অভিযান চালিয়েছেন। চারজনকে কারাদণ্ড দিলেও মালামালগুলো জব্দ না দেখিয়ে লুট করা হয়েছে।’’ 

আরেকজন ভুক্তভোগী মেহেদী হাসান বলেন, ‘‘আমরা সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়ে বৈধভাবে এখানে ব্যবসা করছি। কিন্তু এইভাবে নিয়মবহির্ভূতভাবে অভিযান চালানোর কারণে সবাই ভয়ের মধ্যে আছি।’’ তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুল কবির বলেন, ‘‘আমরা ঈশ্বরদীর সীমানায় অভিযান চালাইনি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের আটক করতে আমাদের একটি আভিযানিক দল শুধু ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট ব্যবহার করেছে। বিষয়টি পরে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে। আটককৃতরা অবৈধভাবে পদ্মানদীর বালু মহাল থেকে বালু উত্তোলনসহ সরবরাহ কাজে জড়িত ছিলেন। অভিযোগের ভিত্তি নেই।’’  

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, ‘‘বালু মহলে অভিযান পরিচালনা করা নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু এক জেলা থেকে অপর জেলায় অভিযান চালাতে হলে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ অভিযান চালাতে হয়। কিন্তু লালপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুল কবির আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে আইন ভঙ্গ করে ঈশ্বরদী সীমানায় অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আটকসহ ড্রেজার ও নৌকা জব্দ করেছেন। এটা অন্যায় করেছেন।’’ 

বিষয়টি তিনি পাবনা জেলা প্রশাসককের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র স সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাক্সিম গোর্কির আবাসস্থলে

মস্কোর আকাশে আজ মেঘ ঘনিয়েছে। সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। এমনিতে গরমকাল, তবে বৃষ্টি পড়ার কারণে ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসছে। মস্কোতে আমার দিনগুলো উড়ে উড়ে পার হয়ে যাচ্ছে। অল্প দিন হাতে আছে রাশিয়ায়। এর মাঝে কত কিছু যে দেখার বাকি!

আমি এসেছিলাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বাড়িতে। রাশিয়ার বিখ্যাত এই লেখক পাঁচবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েও পুরস্কার জেতেননি। এমন অসামান্য লেখকের প্রাসাদতুল্য বাড়ির সামনে এসে দেখি দুয়ার তালাবদ্ধ। আজ আর দুয়ার খুলবে না। দোতলা এই বাড়িটিতে লেখক জীবনের শেষ কয়েক বছর বসবাস করেছিলেন। বাড়ির সামনে প্রশস্ত আঙিনা। সেখানে উঁচু উঁচু গাছ অন্য পাশ থেকে বাড়িকে ঢেকে দিয়েছে। বাড়ির চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।

প্রাচীন এই বাড়ির আশপাশে ঘুরেফিরে আবার ফিরে গেলাম। আজ তিনি দুয়ার না খুললে কাল নিশ্চয়ই খুলবেন। রাশিয়ার অন্যান্য বিখ্যাত লেখকের বাড়ির মতো তাঁর বাড়িটিকেও মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ায় জনপ্রিয়তা পেলেও আমাদের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি আজ অবধি সবচেয়ে জনপ্রিয় রুশ লেখক।

আগের দিন লেখকের হাউস মিউজিয়াম বন্ধ ছিল। তাই দুয়ার থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমি হচ্ছি বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী ধরনের মানুষ। এত সহজে এ বাড়ি না দেখে আমি মস্কো ছাড়ব না।

আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বয়স যখন চব্বিশ তখন এক পত্রিকায় লেখা পাঠানোর সময় আলেক্সেই লেখকের নামে নিজের নাম লেখেন ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’। রুশ ভাষায় ম্যাক্সিম শব্দের অর্থ—তিক্ত। জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর তিক্ততার স্বাদ অল্প বয়সে গ্রহণ করায় তিক্ত নামেই পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন।

আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ ১৮৬৮ সালে রাশিয়ার নিঝনি নভোগরদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এগারো বছর বয়সে অনাথ হয়ে যাওয়ার পর দিদিমা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাখেন। কিন্তু বারো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালান। এরপর বছর পাঁচেক রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। কখনো পেট চালানোর জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ করতে হয়েছে। পথেই থাকতে হয়েছে। এ সময়ে আলেক্সেই মুচির কাজও করেছিলেন।

ম্যাক্সিম গোর্কির বাড়ি

সম্পর্কিত নিবন্ধ