দুর্দশা কাটেনি শ্রীবরদী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের
Published: 5th, May 2025 GMT
শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র চৌরাস্তা মোড়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি রয়েছে অযত্ন ও অবহেলায়। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহীদ মিনারের বেদিতে চলে জুতা পায়ে আড্ডা, বসে লুডু খেলার আসর। সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত কোলাহল পূর্ণ জায়গা থেকে শহীদ মিনার অন্যত্র স্থানান্তর করা হোক।
এলাকাবাসী জানান, শ্রীবরদী পৌরসভা ভবন থেকে মাত্র ৫০ ফুট দূরত্বে শহীদ মিনারটির অবস্থান। প্রতিবছর ২১ ফেব্রুয়ারির আগের দিন ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে নতুন রং করা হয় শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদদের প্রতি এই শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে, দিনের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারো পুরাতন চেহারায় ফিরে যায় শহীদ মিনারটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রীয় পোগ্রাম থাকে। এ কারণে উপজেলা ও পৌর প্রশাসনের কর্মচারীরা রাষ্ট্রের আদেশ পালন করেন। শহীদ মিনারের মর্মার্থ কী তারা তা মনে ধারণ করেন না। শহীদ মিনারের চারপাশে একটা বাউন্ডারি দেয়াল তুলে গেট লাগালেই কিন্তু সব ঠিক হয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন, কিন্তু তার চোখে এটা পরে না। ভাষার জন্য জীবন ত্যাগের কারণে আমরা ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু সম্মানের জায়গায় তাকালে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা দেখে আমাদের লজ্জা হয়।
ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, “ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর অতিবাহিত হয়েছে। আমরা প্রতিদিন শহরের চৌরাস্তা মোড়ে আসা যাওয়া করি। কোনদিন জুতা পায়ে শহীদ মিনারে দাঁড়াইনি। শহীদ মিনারে এখন নেশার আড্ডা, লুডু দিয়ে জুয়ার আসর বসছে। পৌরসভা এতো কাছে হওয়া সত্ত্বেও শহীদ মিনারটির প্রতি প্রশাসনের উদাসিনতা আমাদের হতাশ করে।”
শাহিনুর বারী নামে পৌরসভার এক বাসিন্দা বলেন, “উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারে, কিন্তু শহীদ মিনার রক্ষণাবেক্ষণে তাদের বরাদ্দ থাকে না। পৌরসভার কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনারটি সম্মান অক্ষুন্ন রাখতে প্রশাসন যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। প্রয়োজনে জিরো পয়েন্ট থেকে শহীদ মিনারটি ভালো কোনে স্থানে স্থানান্তর করতে হবে।”
শ্রীবরদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম দুলাল বলেন, “বিষয়টি ইতোমধ্যে আমরা উপজেলা প্রশাসনের নজরে দিয়েছি। তারা এটা রেজুলেশনের আওতায় এনেছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা করব।”
শ্রীবরদী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “শহীদ মিনারটি আসলে কোনো সম্মানজনক স্থানে তৈরি হয়নি। জায়গাটি জিরো পয়েন্টে বাজারের মধ্যে। ফলে সেখানে প্রতিদিন হাজারো মানুষ আসেন। আমি আসার পরেই জেলা পরিষদের কাছে প্রকল্প চাওয়া হয়েছে। আমরা উপযুক্ত জায়গা নির্ধারণ করে শহীদ মিনারটি স্থানান্তরের চেষ্টা করছি। শহীদ মিনারটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন লোক নিয়োগ করব।”
শেরপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোসা.
ঢাকা/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ২১ ফ ব র শ র বরদ উপজ ল প রসভ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন
গাজীপুরের সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনার বিচার ও সারাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছেন রাবিতে কর্মরত সাংবাদিকরা।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তুহিন হত্যার ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে এবং সারাদেশে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান না হলে আরো কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।
আরো পড়ুন:
অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
চটের বিছানা নিয়ে বাগবিতণ্ডা, যুবককে হত্যা
বিক্ষোভ সমাবেশে রাবি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি সৈয়দ সাকিব বলেন, “সাম্প্রতিক যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে, এ রকম নৃশংসভাবে সাংবাদিককে হত্যা সর্বশেষ কবে হয়েছে আমার মনে পড়ে না। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে আমি বলতে চাই, আপনার কাছ থেকে একটি সুস্পষ্ট বার্তা আমরা শুনতে চাই। আপনি এ সংবাদকর্মীদের অভিভাবক, কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমরা আপনার কোনো প্রতিবাদ দেখিনি, এমনকি একটি ফেসবুক পোস্টও না। এভাবে একদম প্রকাশ্যে ও নৃশংসভাবে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যার পরো আপনার পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না আসা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা আজ এখানে সমগ্র দেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তার দাবি নিয়ে দাঁড়িয়েছি। অবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং আমরা যারা সাংবাদিক আছি, আমাদের নিরাপত্তাও আপনাদের নিশ্চিত করতে হবে। রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি লক্ষ্য করছি, তাই আমাদের নিরাপত্তা এখন সময়ের দাবি।”
বিক্ষোভ সমাবেশে বর্তমান সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মনির হোসেন মাহিন বলেন, “সাংবাদিক তুহিনকে প্রকাশ্যে যেভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তা আমরা সবাই দেখেছি। জুলাই-পরবর্তী সময়েও যদি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের এখানে দাঁড়ানোর কথা নয়। এখন আমাদের রাষ্ট্র নিয়ে ভাবার কথা, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করার কথা। কিন্তু আজ দাঁড়িয়েছি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাইতে। সাংবাদিকদের অবহেলার চোখে দেখার কোনো সুযোগ নেই। সাংবাদিকরা যেমন রাষ্ট্রের প্রয়োজনে কলম দিয়ে লিখতে পারে, তেমনি প্রয়োজনে সেই কলমকে অস্ত্রে পরিণত করতে পারে। তাই আমরা সতর্ক করছি—এ ধরনের সাহস যেন আর কেউ না দেখাতে পারে, তার জন্য আমরা ন্যায়সঙ্গত ও যথাযথ বিচার চাই।”
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরো বলেন, “আপনারা গদিতে বসেছেন শুধু এসির হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। হাজারো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আপনারা এ গদিতে বসেছেন। যদি সেই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন, তাহলে গদি ছেড়ে দিন। আপনাদের বাইরে বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন, যারা দেশকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।
রাবি প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের জিসানের সঞ্চালনায় অর্ধশতাধিক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী