নরসিংদীর রায়পুরায় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের জেরে সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
Published: 6th, May 2025 GMT
নরসিংদীর রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার ও প্রায় ২৫ বছর ধরে চলমান গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম (১৭) নামের এক দিনমজুর নিহত হয়েছে। এ সময় ধারালো অস্ত্রর আঘাতে রাহাত মিয়া (২২) নামের আরেক তরুণকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাইফুল একই ইউনিয়নের নজরপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে। হতাহত দুজনই আবিদ হাসানের সমর্থক। আবিদের গোষ্ঠীর সঙ্গে স্থানীয় আবদুল বাছেদ গোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রায় ২৫ বছর ধরে উপজেলার চান্দেরকান্দি ইউনিয়নের আবিদ হাসান গোষ্ঠী ও আবদুল বাছেদ গোষ্ঠী পরস্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত। তাঁদের দ্বন্দ্বের জেরে বহু সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গতকাল সোমবার গভীর রাতে মেথিকান্দা রেলস্টেশনসংলগ্ন নজরপুর এলাকায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। তাদের মধ্যে রাতভর গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর আজ সকাল ৯টার দিকে আবিদের পক্ষের সাইফুল ও রাহাতকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপান প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় ঘটনাস্থলেই সাইফুলের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ব্যক্তিরা আহত অবস্থায় রাহাতকে উদ্ধার করে রাজধানী ঢাকায় পাঠিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে দুই গোষ্ঠীর প্রধান আবিদ হাসান ও আবদুল বাছেদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
সংঘর্ষে হতাহতের খবর পেয়ে আজ বেলা বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা। জানতে চাইলে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সুজন চন্দ্র সরকার জানান, পূর্ববিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঢাকায় পাঠানো অন্য আহত ব্যক্তির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। হতাহত ব্যক্তিরা গুলিবিদ্ধে হয়েছেন কি না, তা ময়নাতদন্তের পর নিশ্চিত করে বলা যাবে। এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক মিয়া (৫৫) ও সংরক্ষিত নারী ইউপির সাবেক সদস্য কল্পনা বেগম (৩২) নিহত হন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতাদের পুরস্কৃত করলেন পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুরেভেসতনিক’ ও সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’-এর নির্মাতাদের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে সম্মানিত করেছেন।
সামরিক কিছু বিশ্লেষকদের মতে, ক্রেমলিনের এই পদক্ষেপ আদতে ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে পশ্চিমাদের নিরুৎসাহিত করতে রুশ প্রচেষ্টার সর্বশেষ সংকেত। খবর সিএনএনের।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনের ৯৮টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার
ট্রাম্পের নির্দেশে ৩০ বছর পর মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুরস্কার অনুষ্ঠানে পুতিন দাবি করেন, ‘পোসেইডন’ সুপার টর্পেডো ও ‘বুরেভেসতনিক’ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মতো পারমাণবিক-সক্ষম অস্ত্রগুলো কেবল বর্তমানের জন্য নয়, বরং পুরো একবিংশ শতাব্দীর জন্য রাশিয়ার জন্য কৌশলগত ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির অগ্রগতির প্রশংসা করে পুতিন বলেন, “উড়ার ক্ষমতার দিক থেকে বুরেভেসতনিক বিশ্বের পরিচিত সব দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে।”
রুশ প্রেসিডন্ট আরো দাবি করেন, এই অনন্য অস্ত্রগুলো কোনো দেশের কাছে নেই এবং এগুলো যেকোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে সক্ষম।
পুতিন আরো জানান, রাশিয়া আরেকটি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ওরেশনিকের ধারাবাহিক উৎপাদন শুরু করেছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইউক্রেনের ডিনিপ্রোতে অঞ্চলে এক হামলায় ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল রাশিয়া, যা ইতিহাসে কোনো যুদ্ধে মধ্যম-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম হামলা।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের গড়িমসির কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত মাসে রাশিয়ার শীর্ষ দুটি তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে প্রস্তাবিত বৈঠক বাতিল করার পর, মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কয়েকদিন পর, পুতিন গত ২৬ অক্টোবর ঘোষণা করেন যে, রাশিয়া বুরেভেসতনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। ক্রেমলিন কর্তৃক প্রকাশিত একটি ভিডিওতে, সামরিক পোশাক পরা পুতিনকে রুশ সামরিক বাহিনীর প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেখা যায়। ওই বৈঠকে পুতিনকে জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ জানান, বুরেভেসতনিক ১৪ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার ৭০০ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করেছে এবং প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে আকাশে ছিল।
এর ঠিক দুইদিন পর গত ২৮ অক্টোবর পুতিন দাবি করেন, সুপার টর্পেডো ‘পোসেইডন’ এর সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া।
পারমাণবিক শক্তি চালিত ‘বুরেভেসতনিক’ কিংবা ‘পোসেইডন’- দুটির কোনোটিই নতুন অস্ত্র নয়। পুতিন ২০১৮ সালে দুটি অস্ত্রই উন্মোচন করেছিলেন। এমনকি বুরেভেসতনিকের সফল পরীক্ষার কথা ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিলেন।
তবে, সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, ‘রাশিয়া আগে উন্মোচিত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির নতুন পরীক্ষা চালিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন পারমাণবিক হুমকি পাঠাচ্ছে।’
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস) মঙ্গলবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের দূরত্বের ক্ষমতার উপর বারবার জোর দেওয়া এবং যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভাঙার ক্ষমতার উপর জোর দেওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, লক্ষ্যবস্তু হবে যুক্তরাষ্ট্র; কোনো আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ নয়, যা রাশিয়া অনেক সস্তা স্বল্প-পাল্লার সিস্টেম দিয়ে হামলা করতে পারে।’
প্রতিবেদনে বিদেশি হামলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের ‘গোল্ডেন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ২৬ অক্টোবর বুরেভেসতনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণায় স্পষ্টভাবে গোল্ডেন ডোমের নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে বিশ্বের যেকোনো ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উড়িয়ে দিতে বার বার ক্ষেপণাস্ত্রটির সক্ষমতার প্রশংসা করেছেন।
সিএসআইএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পুতিন দূরপাল্লার পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ভয় দেখাতে চাইছেন, যাতে করে মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের রাশিয়ার স্বার্থের জন্য হুমকিমূলক নীতি অনুসরণ করতে নিরুৎসাহিত করা যায়।’
ট্রাম্প মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েকদিন পর ক্রেমলিনে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি ‘অন্যান্য দেশের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের কারণে’ এই আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার পুতিন তার ভাষণে দাবি করেন, রাশিয়া ‘কাউকে হুমকি দিচ্ছে না’।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, “অন্যান্য সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মতো রাশিয়াও তার পারমাণবিক সক্ষমতা ও কৌশলগত সক্ষমতা বিকাশ করছে। আমরা এখন যা কিছু করছি তা অনেক আগেই ঘোষণা করা কাজের ধারাবাহিকতা।”
ঢাকা/ফিরোজ