যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সঙ্গে রয়েছে হর্নের বিকট শব্দ। এর মধ্যেই একের পর এক গাড়ি এসে থামছে টোল প্লাজার সামনে। চালক-যাত্রী সবার চোখেমুখেই বিরক্তির চাপ। গত মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু এলাকায় দেখা যায় এ দৃশ্য।

অবশ্য টোল আদায়কে কেন্দ্র করে সেতু এলাকাটিতে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এ সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, ১৫ বছরে সেতুটি দিয়ে যান চলাচল কয়েক গুণ বেড়েছে। টোলও নেওয়া হচ্ছে শুরু থেকে। এত দিনে সেতুর খরচ উঠে যাওয়ার কথা। তবে এখনো টোল নেওয়া হচ্ছে। ফলে গাড়ির চাপ বেশি হওয়ায় টোল প্লাজার যানজটে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি বাড়ছে। এ কারণে তাঁরা এ সেতুতে টোল প্রত্যাহার চান। ইতিমধ্যে কয়েকবার এ দাবিতে আন্দোলনও করেছেন তাঁরা।

সেতুটি দিয়ে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার গাড়ি বেশি চলাচল করে। এই তিন দিন গড়ে ৩০ হাজার গাড়ি সেতুটি দিয়ে পারাপার হয়। অন্য দিনগুলোতে পারাপার হয় ২৪ থেকে ২৬ হাজার। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

শাহ আমানত সেতুটি কর্ণফুলী নদীর ওপর তৃতীয় সেতু। ৫৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৬ সালের ৮ আগস্ট সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। ৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম নগর থেকে জেলার দক্ষিণের বিভিন্ন উপজেলা এবং কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় যাওয়া যায়।

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, চালু হওয়ার পর থেকে সেতুটিতে টোল নেওয়া হচ্ছে। কয়েক দফা এ টোলের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে তিন চাকার গাড়ি ৩০ টাকা, মিনিবাস ৫০ টাকা, প্রাইভেট কার ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, বড় বাস ১৫৫ টাকা, মিনিট্রাক ১৩০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ২০০ টাকা, বড় ট্রাক ৩০০ টাকা ও লম্বা লরি ৭৫০ টাকা করে টোল পরিশোধ করে।

টোল আদায়কারীদের সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি দিয়ে সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার গাড়ি বেশি চলাচল করে। এই তিন দিন গড়ে ৩০ হাজার গাড়ি সেতুটি দিয়ে পারাপার হয়। অন্য দিনগুলোতে পারাপার হয় ২৪ থেকে ২৬ হাজার। গাড়ির চাপ বেশি থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার সেতু এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

যদি আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হয়, তবে আমরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।এস এম ফোরকান, আহ্বায়ক, কর্ণফুলী নাগরিক পরিষদ

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শাহ আমানত সেতুর টোলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারের সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরে আসা-যাওয়া করতে তাঁদের বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তাই সেতুটি উভয় পারের মানুষের জন্য সম্পূর্ণ টোলমুক্ত করার দাবি করেছেন তাঁরা। এ দাবিতে আন্দোলনও করে আসছেন।

কর্ণফুলী নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক এস এম ফোরকান বলেন, তাঁরা টোল প্রত্যাহারের পক্ষে আন্দোলন জোরদার করবেন। এ লক্ষ্যে আগামী ১ থেকে ১৫ নভেম্বর গণস্বাক্ষর কর্মসূচি রয়েছে তাঁদের। তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হয়, তবে আমরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেব।’

সেতুটি থেকে এখন টোল আদায় করে সেল-ভ্যান জেভি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক পল্লব বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেতুর রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খরচের পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের জন্য টোল আদায় করে সরকার। তাই টোল নেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এতে আমাদের এখতিয়ার নেই।’

সড়ক ও জনপথ বিভাগ চট্টগ্রামের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো.

নিজাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টোল প্রত্যাহার নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসূচির কথা শুনেছি। তবে এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। আমরা এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র প র হয় আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিচয় শনাক্তে তোলা হচ্ছে ১১৪ জুলাই শহীদের লাশ 

পরিচয় শনাক্ত করতে রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অজ্ঞাতনামা ১১৪ জনের লাশ তোলা হচ্ছে। 

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লাশ উত্তোলন শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

আরো পড়ুন:

এনজিওর ৬০০ কোটি টাকা প্রতারণা, সিআইডির অভিযানে তনু গ্রেপ্তার 

১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. ছিবগাত উল্লাহ বলেন, “আনাসের মতো যারা বুকের রক্ত ঢেলে দেশের জন্য রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।” 

তিনি আরো বলেন, “এই কবরস্থানে যারা নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় শুয়ে আছেন, তাদের পরিচয় তখন যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তাদের পরিচয় উদঘাটন করা জাতির প্রতি আমাদের একটি দায়িত্ব। আজ সেই মহান কাজের সূচনা হলো।” 

জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার (ওএইচসিএইচআর) মাধ্যমে আর্জেন্টিনা থেকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার ঢাকায় এসে পুরো কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি গত ৪০ বছরে ৬৫টি দেশে এ ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেছেন বলে বাসসের খবরে বলা হয়। 
 
সিআইডি’র প্রধান বলেন, “লাশ শনাক্তের জন্য এরইমধ্যে ১০ জন আবেদন করেছেন। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে শহীদের সংখ্যা ১১৪ জনের বেশি। প্রকৃত সংখ্যা লাশ উত্তোলনের পর জানা যাবে।”

তিনি আরো বলেন, “সব লাশের পোস্টমর্টেম করা হবে এবং ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করে ধর্মীয় সম্মান বজায় রেখে পুনঃদাফন করা হবে।” 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিচয় শনাক্ত হলে, পরিবার চাইলে লাশ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও তিনি জানান। 

তিনি আরো বলেন, “ডিএনএ সংগ্রহের পর, যে কেউ আবেদন করলে সহজেই শনাক্ত করা যাবে। সিআইডির হটলাইন নম্বরগুলো জানিয়ে দেওয়া হবে, যাতে যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন।” 

এ সময় ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের (ইউএনএইচআর) সহযোগিতায় আগত আর্জেন্টিনার আন্তর্জাতিক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ লুইস ফন্ডিব্রাইডার বলেন, “আমি গত তিন মাস ধরে সিআইডির সঙ্গে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।” 

ঢাকা/ইভা   

সম্পর্কিত নিবন্ধ