পাকিস্তানের যে কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারত, তার মধ্যে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে আগে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন ঘুমাচ্ছিলেন; বিস্ফোরণের বিকট শব্দে তাদের ঘুম ভেঙে যায়।  

বিস্ফোরণের পর স্থানীয়রা তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন।

মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের পাশে বসবাস করেন মোহাম্মদ ওহিদ। এই মসজিদটি ভারত হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে বলে দাবি করেছেন ওহিদ।

বিবিসি লিখেছে, ওহিদ বলেন, “আমি গভীর ঘুমে ছিলাম। হঠাৎ একটি বিস্ফোরণ আমার ঘর কাঁপিয়ে দেয়।”

“আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই, দেখি অন্যরাও একইভাবে ছুটে বের হচ্ছে। কী ঘটছে, তা বোঝার আগেই আরো ক্ষেপণাস্ত্র এসে আঘাত হানে, চারদিকে আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।”

ওহিদ জানান, ডজনখানেক মানুষ আহত হয়েছেন এবং তাদের প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।

বিবিসিকে তিনি বলেন, “শিশুরা কাঁদছে, মহিলারা দিগদ্বিদিক ছুটছেন নিরাপদ জায়গার খোঁজে। আমরা সবাই আতঙ্কিত, জানি না কী করব। মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, চারপাশে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে আছে।”

ওহিদ বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত, তবে তিনি বুঝতে পারছেন না কেন একটি মসজিদ লক্ষ্যবস্তু করা হলো।

“এটা ছিল একটি সাধারণ মহল্লার মসজিদ, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। এর চারপাশে কখনো কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখিনি,” যোগ করেন ওহিদ।

বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯টি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে অবশ্য বলা হয়েছে, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানের ৫টি স্থানে আঘাত করেছে।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন লিখেছে, ৭ মে গভীর রাতে ভারতের এই হামলায় পাকিস্তানের অন্তত তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। 

বিবিসি লিখেছে, ভারত সরকার বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন সিন্দুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যার লক্ষ্য পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অবস্থিত ‘সন্ত্রাসবাদী অবকাঠামো’, যেখান থেকে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনা ও হামলা পরিচালিত হচ্ছে।

ভারত নিজস্ব আকাশসীমা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে: পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
বিবিসি লিখেছে, পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ তাদের দেশের জিও টিভিকে বলেছেন, “ভারত তাদের নিজস্ব আকাশসীমা থেকে পাকিস্তানের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই হামলাগুলো বেসামরিক এলাকায় আঘাত হেনেছে। ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে’ বলে ভারত যে দাবি করেছে, সেটি মিথ্যা।” 

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগামে ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ২৬ জন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক। এই হামলায় পাকিস্তানের দায় দেখছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, সন্ত্রাসীদের মদদ দেয় ইসলামাবাদ। এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর তাতে সমর্থন দেয় ভারতের সব রাজনৈতিক দল।

সেই থেকে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেই উত্তেজনার মধ্যেই ৭ মে গভীর রাতে পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলা করল ভারত। এখন পাকিস্তান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায় বা জবাব দেয়, তারপর ওপর নির্ভর করছে বাকিটা।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর লক ষ য মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

চলে গেলেন সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম

ফরিদপুরের বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও প্রবীণ শিক্ষক ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলু ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। সোমবার সকাল ৯টা ২০মিনিটের দিকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলু বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। সোমবার বাদ আছর শহরের ভাটিলক্ষীপুর ইয়াছিন মঞ্জিল জামে মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে আলীপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম নীলুর মৃত্যুর সংবাদে ফরিদপুর সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ফরিদপুরের সংগীত জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। ওস্তাদ খায়রুল ইসলাম ফরিদপুর ললিতকলা একাডেমির  প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দীর্ঘ দিন তিনি ফরিদপুর শিল্পকলা একাডেমির সংগীত শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ফরিদপুর খেলাঘর তাকে তপন বোস স্মৃতি পদক এবং শিল্পকলা একাডেমি সংগীত গুণী সম্মাননা পদক প্রদান করে। এছাড়া খেয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন, ফরিদপুর প্রবীণ হিতৈষী সংঘ তাঁকে সম্মাননা প্রদান করেছে।

খায়রুল ইসলামের মৃত্যুতে ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক এম এ সামাদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, ফরিদপুর সাহিত্য ও সংস্কৃতি উন্নয়ন সংস্থার আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলাম স্টালিন, সদস্য সচিব মো. হাসানুজ্জামান, ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবীরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন পিয়াল, এফডিএফের আজহারুল ইসলাম, বিএফএফর নির্বাহী পরিচালক অনম ফজলুল হাদি, চাঁদের হাট ফরিদপুরের সভাপতি শাহাদৎ হোসেন তিতু, সুর লহড়ী একাডেমির সভাপতি শরীফ সোহানসহ প্রমুখ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ