মুজাফফরাবাদ ও পাঞ্জাবে ভারতের হামলায় মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত: বিবিসিকে প্রত্যক্ষদর্শী
Published: 7th, May 2025 GMT
ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদ এবং পাঞ্জাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে আঘাত হেনেছে বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা। তাঁদের মধ্যে মুজাফফরাবাদের বাসিন্দা মুহাম্মদ ওয়াহিদ ও পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা মুহাম্মদ ইউনিস শাহের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন তাঁরা।
মুজাফফরাবাদে ওয়াহিদের বাড়ি যেখানে, তার পাশেই বিলাল মসজিদ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘প্রথমবারের বিস্ফোরণে আমার বাড়ি যখন কেঁপে ওঠে, তখন আমি গভীর ঘুমে। আমি দৌড়ে রাস্তায় বের হই, সেখানে আগেই অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। কী ঘটছে, আমরা সেটা বুঝে ওঠার আগেই আরও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে, যার ফলে ওই এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।’
ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সেখানে নারীসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওয়াহিদ বলেছেন, আহত ব্যক্তিদের কাছের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ওয়াহিদ আরও বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, কেন আমাদের স্থানীয় মসজিদে হামলা চালানো হয়েছে। এটি বাড়ির কাছের খুবই সাধারণ একটি মসজিদ ছিল, যেখানে আমরা দিনে পাঁচবার নামাজ পড়তাম। আমি কখনো এটি ঘিরে কোনো ধরনের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড দেখিনি।’
স্থানীয় লোকজন এখন তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান ওয়াহিদ। তিনি বলেন, চরম অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
পাঞ্জাব প্রদেশের মুরিদকে শহরের বাসিন্দা ইউনিস শাহ বিবিসিকে বলেছেন, ভারতের ছোড়া চারটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র পরপর এবং চতুর্থ ক্ষেপণাস্ত্রটি পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর আঘাত হানে।
ইউনিস শাহ বলেন, হামলায় সেখানে একটি স্কুল, একটি কলেজ, একটি ছাত্রাবাস, একটি চিকিৎসাকেন্দ্র এবং পাশাপাশি একটি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে একটি আবাসিক এলাকাও আছে, যেখানে কয়েকটি পরিবার বসবাস করত।
ইউনিস শাহ বলেন, উদ্ধারকর্মী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। এলাকাজুড়ে ভয় ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বডিতে যাবে এই ছবি: Bilal Mosque (ইন্টারন্যাশনাল ফোল্ডারে আছে) ভারতের হামলায় আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদের বিলাল মসজিদের একাংশ ধসে পড়েছে। ৭ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ফফর ব দ ইউন স শ হ মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ফলেন পরিচয়েৎ
অন্তর্বর্তী সরকার বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ প্রণয়নের যেই উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছে, আমরা উহাকে স্বাগত জানাই। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানাইয়াছে, নানা আলোচনা-পর্যালোচনার পর অধ্যাদেশটির খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়াছে উপদেষ্টা পরিষদ।
ইহাতে সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত ৯টি ধারা বাতিল করা হইয়াছে, তবে মতপ্রকাশের সহিত সম্পর্কিত দুইটি অপরাধ রহিয়া গিয়াছে। অপরাধ দুইটি হইল– নারী ও শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতনমূলক আধেয় প্রকাশ ও হুমকি এবং ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্য বা আধেয়ের মাধ্যমে সহিংসতায় উস্কানি প্রদান। খসড়ায় এই প্রথম আন্তর্জাল সেবাকে নাগরিক অধিকাররূপে স্বীকৃতি প্রদান করা হইয়াছে। উপরন্তু, নিষিদ্ধ হইয়াছে অনলাইন জুয়া।
মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করিয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাইয়াছেন আইন, বিচার ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তাঁহার ভাষ্য অনুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি যাচাইয়ের পর অধ্যাদেশটি জারি এবং চলতি সপ্তাহের মধ্যেই কার্যকর হইবে। আইন উপদেষ্টার মতে, সাইবার নিরাপত্তা আইনের যেই ৯টি ধারা বাতিল হইয়াছে, উক্ত আইনে ইতোমধ্যে দায়েরকৃত ৯৫ শতাংশ মামলাই ছিল এই সকল ধারার। ফলে নূতন আইন কার্যকর হইবার পর ঐ মামলাগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হইয়া যাইবে। ইতোপূর্বে সাইবার নিরাপত্তা আইনের অন্য সকল ধারায় দায়েরকৃত মামলাগুলিও বাতিল হইয়া যাইবে। বিষয়টি নিঃসন্দেহে স্বস্তিদায়ক। কারণ এই সকল মামলা প্রধানত হয়রানির উদ্দেশ্যে দায়ের হইয়াছিল। বিশেষত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং সরকারের সামলোচক সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের কণ্ঠরোধই ছিল মামলাগুলির উদ্দেশ্য।
স্মরণ করা যাইতে পারে, বিগত সরকার ২০১৮ সালে বিভিন্ন সাইবার অপরাধ হইতে নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে, যাহা বাস্তবে ছিল ভয়ংকর নিবর্তনমূলক। সেই সময় এক গবেষণায় দেখা গিয়াছিল, উক্ত আইনে দায়েরকৃত মামলার মাত্র ২ শতাংশ আদালতে টিকিয়াছিল। তথাপি সরকার মাসের পর মাস আইনটি চালাইয়া যায়। এক পর্যায়ে জনপরিসরে সৃষ্ট ব্যাপক সমালোচনার মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের স্থলে ২০২৩ সালে বাতিল হইবার প্রক্রিয়ায় থাকা সাইবার নিরাপত্তা আইনটি চালু করে। কিন্তু উহাও ছিল শুভঙ্করের ফাঁকিতে পূর্ণ। স্বীকার করিতে হইবে, সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা অবসানের নিরীহ আন্দোলনটি যে গত বৎসর জুলাই-আগস্টে সরকার পতনের আন্দোলনের রূপ গ্রহণ করিয়াছিল, তাহার নেপথ্যে অন্য কিছু গুরুতর অপকর্মের সহিত আইন দুইটির মাধ্যমে গণহয়রানির বিরুদ্ধে জনরোষ সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখিয়াছে। সেই দিক হইতে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম আশু কর্তব্য।
কিন্তু গৃহদগ্ধ গরু যদ্রূপ সিঁদুরবর্ণ মেঘ দর্শনেই ভীত হয়, তদ্রূপ আমাদেরও মনে নূতন আইন দেখিয়া কিছু শঙ্কা জাগিতে পারে। বিশেষত প্রস্তাবিত আইনে যেই দুইটি বিষয়ে মতপ্রকাশ করিতে গিয়া অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা প্রকাশ করা হইয়াছে, সেইগুলি বরাবরের ন্যায় এখনও স্পর্শকাতর। আইনের খসড়া না দেখিয়া বলা যায় না, উক্ত অপরাধের সংজ্ঞা যথাযথভাবে নির্ধারণ করা হইয়াছে কিনা। দ্বিতীয়ত, উক্ত ক্ষেত্রে পুলিশের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রণে কী প্রতিষেধক রাখা হইয়াছে, তাহাও আপাতত স্পষ্ট নহে। এহেন অপরাধের ক্ষেত্রে কতিপয় রক্ষাকবচের কথা বলিয়া আইন উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করিতে চাহিয়াছেন, সত্য। বাস্তবে উহার রূপ কী ধারণ করিবে, তাহা এখনই বলা দুরূহ।
অধ্যাদেশের খসড়া করিতে গিয়া নাগরিক সমাজের সমালোচকদের সহিত বিভিন্ন পর্যায়ে পরামর্শ করা হইয়াছে বলিয়া আইন উপদেষ্টার বক্তব্যটি অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা কাউন্সিলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি রাখার বিধানও গুরুত্বপূর্ণ। তবে আইনটি লইয়া আপাতত শেষ কথা হইল– ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী? ফলেন পরিচয়েৎ।’