বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, “ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় সে জন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

বুধবার (৭ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলশান-১ এর বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক শুটিং প্রতিযোগিতা-২০২৪ সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

বাহারুল আলম বলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সীমান্তবর্তী জেলা ৩০টি এবং মিয়ানমারের সঙ্গে তিনটি। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয় এবং কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী যেন দেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো, যেন আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।”

আরো পড়ুন:

এএসপি পলাশের আত্মহত্যার কারণ জানালেন তার ভাই

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ডাকাতি চেষ্টার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

এসময় বাংলাদেশ পুলিশ ক্লাবের সভাপতি ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত আইজিপি মো.

মোস্তফা কামালসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার জের ধরে মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে পাকিস্তানের মূল ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ভারত। ভারতের এ হামলায় এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ২৬ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারত শাসিত কাশ্মীরে অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ৩২ জন। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে পাকিস্তান।

ঢাকা/মাকসুদ/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন হাবিবুর

ছাত্র–জনতার আন্দোলন দমন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যদের চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান। পুলিশের নিজস্ব ওয়্যারলেসে (বেতারবার্তা) এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ দেওয়া জবানবন্দিতে এ বিষয় উল্লেখ করেছেন ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়্যারলেস অপারেটর মো. কামরুল হাসান।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় ৫০তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন কামরুল।

গত বছরের ১৭ জুলাই ডিএমপির ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে ওয়্যারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন কামরুল। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে তিনি জবানবন্দিতে বলেন, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত তাঁর ডিউটি (দায়িত্ব) ছিল। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ওয়্যারলেসে (কল সাইন ভিক্টর মাইক ওয়ান–১) সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন হাবিবুর রহমান। তখন চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বার্তাবাহক হিসেবে তিনি (কামরুল) ও তাঁর দল ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটে ওই বার্তা পৌঁছে দেন।

হাবিবুর রহমানের সেই ওয়্যারলেস বার্তার অডিও রেকর্ড জবানবন্দি দেওয়ার শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ট্রাইব্যুনালে সেই অডিওটি দুবার শোনানো হয়।

সাক্ষী কামরুল হাসান জবানবন্দি দেওয়ার পর ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। তাঁকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘অডিও বার্তা যেটা শুনলাম, সেখানে উনি (হাবিবুর রহমান) বলেছেন যে জানমাল রক্ষায়, সরকারি সম্পত্তি রক্ষায়, হাঁটু গেড়ে কোমরের নিচে গুলি করতে। বিষয়টিকে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) কীভাবে ব্যাখ্যা করছে?’

জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এটি মামলার আর্গুমেন্টের (যুক্তিতর্ক) জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। সেদিন আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন। সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, যাতে গুলি করতে হবে। কোমরের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।

আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, সাক্ষী বলেছেন ডিএমপি কমিশনার চায়নিজ রাইফেল ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অডিওতে এ রকম কিছু পাওয়া যায়নি।

এর জবাবে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, চায়নিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এ বিষয়টি ম্যাটার অব আর্গুমেন্ট (যুক্তিতর্কের বিষয়)। উনি বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা যখন আর্গুমেন্ট করবেন, তখন বিষয়টা ফেস (মোকাবিলা) করবেন।

এ মামলায় গতকাল আরও দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। তাঁরা হলেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার এসআই (উপপরিদর্শক) কামরুল হোসাইন ও মো. আনিসুর রহমান। এ ছাড়া সিআইডির ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাবের এসআই মো. শাহেদ জোবায়েরের পুনঃ জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিলেন।

শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন এ মামলায় ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আজ সাক্ষ্য দেবেন বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা, হবে সরাসরি সম্প্রচার

ট্রাইব্যুনালে কর্মরত সাংবাদিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে গতকাল রাতে এক ভিডিও বার্তায় প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম জানান, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা এ মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা বুধবার (আজ) সাক্ষ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্তের সময় শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি ফোনালাপ জব্দ করেছেন, সেই ফোনালাপের রেকর্ড ট্রাইব্যুনালে শোনানো হবে।

উত্তরা ও সিলেটের মামলায় প্রতিবেদন

দাখিলের সময় বাড়ল

গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর উত্তরা এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ অক্টোবর নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল–১। এই মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ১০ আসামিকে গতকাল ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

এ ছাড়া গণ–অভ্যুত্থানের সময় সিলেটে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়িয়ে আগামী ২৪ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোর মামলায় গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–২–এ দুজন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ