সদর উপজেলার ফতুল্লার মুসলিমনগরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এবং পানি নিষ্কাশনের  অভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে ঐ এলাকার সাধারণ জনগন ও ব্যবসায়ীরা।

দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সরকারি ভাবে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় পানি ভেঙ্গে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে এলাকার জনগন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ উপজেলা প্রশাসন সু-নজর না থাকায় জলাবদ্ধতা দুর হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। 

এলাকাবাসী জানান, ফতুল্লার মুসলিমনগর-বিসিক সড়কের নয়াবাজার এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায়  জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকা হিসেবে ড্রেন সরু হওয়ায় বাড়ির ড্রেনের পানি সরতে পাড়ছে না।

এতে করে রাস্তায় হাটু পানি জমে গিয়ে মানুষের চলাচলের অনুপোযি হয়ে পড়ে। এমনকি একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় পানি জমে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে নারী পুরুষ ও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ময়লা পানি ভেঙ্গে চলাচলে বাধ্য হচ্ছে।

এমনকি নয়াবাজার মসজিদের সামনে সব সময় হাটু পানি জমে থাকায় মুসল্লীরা যেতে সমস্যা হচ্ছে। পানির কারণে অনেক মুসল্লীরা মসজিদে আসতে না পাড়ায় অনেকে নামাজ আদায় করতে পারছে না এবং অনেকে বাড়িতে নামাজ আদায় করছে। 

মুসলিমনগর নয়াবাজার বাসিন্দা মো: আলম মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে নয়াবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার লোকের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। সরকারি ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ না করায় জলাবদ্ধতা দুর হচ্ছে না। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দা সহ স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বিশেষ করে বিসিক শিল্পনগরীর পাশ্ববর্তী এলাকা হিসেবে হাজার হাজার শ্রমিকের যাতায়াতের একটা মাত্র রাস্তা। তারা পানি ভেঙ্গে কর্মস্থলে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হচ্ছে। ময়লা পানি ভেঙ্গে চলাচল করার কারণে পানি জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অতি শিগগিরই জলাবদ্ধতা দুর করা না হলে নারী পুরুষ মিলে আন্দোলন করার চিন্তা ভাবনা করছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন। 

নয়াবাজার এলাকার ব্যবসায়ী বি-ডাক্তার মফিজুল ইসলাম স্বপন জানান, মুসলিমনগর নয়াবাজার এলাকাটি ঘনবসতি এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার লোকের চলাচল করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে একদিকে যেমন মানুষের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

অনেকের ব্যবসা এতোটাই খারাপ হয়েছে দোকান ভাড়াও দিতে পাড়ছে না। বিশেষ করে আমার দোকানের পাশে মসজিদ রয়েছে। রাস্তায় জমে থাকা পানির কারণে মুসল্লীরা ঠিকমত মসজিদে আসা করতে পারছে না। 

এনায়েতনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল জলিল জানান, এই রাস্তাটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক। নয়াবাজার রাস্তায় অনেকদিন জলাবদ্ধতার কারণে হাজার হাজার লোকের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে।জলাবদ্ধতা দুর করার জন্য বহু চেষ্টা করা হচ্ছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসেছি। জলাবদ্ধতা দুর করার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে অবহিত করে খুব শিগগিরই তা ব্যবস্থা নেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। 

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, বিষয়টি নিয়ে অবগত নই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম এবং খোজ খবর নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জলাবদ্ধতা দুর করার ব্যবস্থা নেয়া হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব যবস য় র ব যবস ব যবস থ এল ক র দ র কর উপজ ল সমস য মসজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

যেমন ছিল মহানবী (সা.)–এর জুমার খুতবা

কল্পনা করুন, জুমার দিন, মদিনার মসজিদে নববিতে বসে আছি। হৃদয়ে এক অদ্ভুত উত্তেজনা, প্রতীক্ষার এক মধুর অনুভূতি। নবীজি মুহাম্মদ (সা.) এখনই মিম্বরে উঠবেন, খুতবা দেবেন। তাঁর কথা শোনার জন্য হৃদয় যেন অধীর হয়ে আছে। তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে, তাঁর কণ্ঠে আল্লাহর বাণী শুনব—এই মুহূর্তটি যেন জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়।

ইসলামে জুমার দিন একটি উৎসবের মতো, যেমন নবীজি (সা.) বলেছেন: ‘এই দিনটি আল্লাহ মুসলিমদের জন্য একটি উৎসব হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। যে জুমার নামাজে আসে, সে যেন গোসল করে, সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে এবং মিসওয়াক করে।’ (সুনানে ইবন মাজাহ, হাদিস: ১,০৯৮)

এই কথাগুলো আমাকে মনে করিয়ে দেয় জুমার দিনটি কতটা বিশেষ।

নবীজি (সা.)–এর জুমার প্রস্তুতি

নবীজি (সা.) নিজেই এই শিক্ষার জীবন্ত উদাহরণ ছিলেন। জুমার নামাজের আগে তিনি গোসল করতেন, যাতে তাঁর শরীর পবিত্র ও সতেজ থাকে। তিনি সেরা সুগন্ধি ব্যবহার করতেন, শরীরের প্রতিটি অংশে তা ছড়িয়ে দিতেন।

যদি কারও সামর্থ্য থাকে, তবে জুমার জন্য তার কাজের পোশাক ছাড়া আলাদা পোশাক কিনুক।সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৮

মিসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতেন, আর সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরতেন। তাঁর এই প্রস্তুতি যেন আমাদের শেখায়, জুমা কেবল একটি নামাজ নয়, এটি একটি উৎসব, যেখানে আমরা আমাদের সেরাটা দিয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হই।

একবার হজরত উমর (রা.) বাজারে একটি সুন্দর রেশমি পোশাক দেখে তা নবীজি (সা.)–এর জন্য কিনে আনেন, যাতে তিনি তা জুমার খুতবায় বা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতে পরেন। কিন্তু নবীজি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেন, কারণ রেশম মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ।

তিনি বললেন, ‘যদি কারও সামর্থ্য থাকে, তবে জুমার জন্য তার কাজের পোশাক ছাড়া আলাদা পোশাক কিনুক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৭৮)

এই ঘটনা আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে। নবীজি (সা.)-এর সরলতা, তাঁর নীতির প্রতি অটলতা আমাদের শেখায়, জুমার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে হৃদয়ের পবিত্রতা ও নিষ্ঠা দিয়ে।

আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর ‘পেটে পাথর বাঁধা’ হাদিসের ব্যাখ্যা কী২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫মসজিদে নবীজির উপস্থিতি

মসজিদে প্রবেশ করে নবী (সা.) মিম্বরে উঠতেন, সবাইকে সালাম দিতেন। তাঁর হাতে একটি লাঠি থাকত, যা তিনি ধরে বসতেন। তারপর হজরত বিলাল (রা.) আজান দিতেন। সেই সময়ের মানুষ দেয়ালের কাছে বসার চেষ্টা করতেন না, যেমনটা আজকাল অনেকে করে।

তাঁরা নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা মেনে ইমামের কাছাকাছি বসতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘খুতবায় উপস্থিত হও এবং ইমামের কাছে বসো। যে দূরে থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করলেও পিছিয়ে থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)

এই কথা নবীজি (সা.)-এর কাছাকাছি থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগায় সাহাবিদের হৃদয়ে।

যখন তিনি বিশ্বাসীদের একটি ভবনের মতো শক্তিশালী বলে বর্ণনা করতেন, তখন তাঁর হাত দুটি শক্ত করে ধরতেন। যখন জিভের বিপদের কথা বলতেন, তখন নিজের মুখের দিকে ইশারা করতেন।

নবীজির খুতবা ছিল এমন এক মুহূর্ত, যেখানে হৃদয় আর মন এক হয়ে যেত। তিনি সবাইকে লক্ষ করতেন, প্রতিটি বিষয়ে নজর রাখতেন। একবার আবু কায়স (রা.) মসজিদে এসে দেখলেন নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছেন। তিনি রোদে দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। নবীজি তাঁকে ছায়ায় বসতে ইশারা করলেন।

আরেকবার সুলাইক আল-গাতাফানি (রা.) মসজিদে এসে দুই রাকাত নামাজ না পড়ে বসে পড়লেন। নবীজি খুতবা থামিয়ে তাঁকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে বললেন। কেউ কেউ বলেন, সুলাইকের দরিদ্র অবস্থা সবাইকে দেখানোর জন্যই নবীজি (সা.) এটা করেছিলেন, যাতে নামাজের পর মানুষ তাঁকে সাহায্য করে।

নবীজির সহানুভূতি, তাঁর দৃষ্টি যেন প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে পৌঁছাত। (আল-আযিমাবাদি, মুহাম্মদ শামসুল হক, আউন আল-মাবুদ, ৩/১২৫, দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৮)

নবীজির খুতবা

নবীজি (সা.)–এর খুতবা ছিল যেন একটি সমুদ্র—গভীর, বিস্তৃত, মনোমুগ্ধকর। তিনি হাতের ইশারা, চোখের ভাষা আর কণ্ঠের সুরে কথা বলতেন।

যখন তিনি বিশ্বাসীদের একটি ভবনের মতো শক্তিশালী বলে বর্ণনা করতেন, তখন তাঁর হাত দুটি শক্ত করে ধরতেন। যখন জিভের বিপদের কথা বলতেন, তখন নিজের মুখের দিকে ইশারা করতেন। জান্নাতের দরজা খোলার কথা বলতে গিয়ে তিনি হাত দিয়ে দরজা খোলার ভঙ্গি করতেন।

তাঁর কথাগুলো এত স্পষ্ট ছিল যে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে তিনি নিশ্চিত করতেন সবাই তা বুঝেছে। তাঁর চোখ আর কণ্ঠে আবেগ ফুটে উঠত—আনন্দের কথায় তাঁর মুখ উজ্জ্বল হতো, দুঃখের কথায় চোখে বিষাদ নামত।

আরও পড়ুনহজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি২৮ জুন ২০২৫

উম্মে হিশাম, হারিস ইবনে নুমানের মেয়ে, বলেছিলেন, ‘আমি নবীজির জুমার খুতবা শুনে সুরা কাফ মুখস্থ করেছি।’

তিনি প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করতেন, কারণ এটি জীবন ও মৃত্যুর গভীর আলোচনা করে। খুতবায় তাঁর উপস্থাপিত দৃষ্টান্ত আর উপমা ছিল এত জীবন্ত যে সাহাবিরা তাঁর কথা হৃদয় দিয়ে শুনতেন। তাঁদের শরীর এত নিশ্চল থাকত যেন মাথায় পাখি বসে আছে।

এসব বর্ণনা আমার হৃদয়ে একটি ছবি আঁকে—নবীজির সামনে বসে আছি, তাঁর কথায় হৃদয় ভরে যাচ্ছে, মন শান্ত হচ্ছে।

হৃদয়ের সাক্ষাৎ

একবার নবীজি (সা.) খুতবা দিচ্ছিলেন, তাঁর নাতি হাসান ও হোসাইন (রা.) লাল পোশাকে তাঁর দিকে দৌড়ে এলেন। তাঁরা ছোট্ট শিশু ছিলেন, পোশাকের কারণে বারবার হোঁচট খাচ্ছিলেন। নবীজি খুতবা থামিয়ে মিম্বর থেকে নেমে তাঁদের কোলে তুলে নিলেন। তিনি আয়াত পড়লেন: ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান কেবল একটি পরীক্ষা।’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত: ১৫)

তারপর তাঁদের জন্য দোয়া করে কোলে নিয়ে মিম্বরে ফিরলেন।

এক জুমায় পুরুষ সাহাবিরা এত কাঁদছিলেন যে নারীরা নবীজির খুতবা শুনতে পাননি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, নবীজি (সা.) কবরের পরীক্ষা ও কষ্ট নিয়ে কথা বলছিলেন।

আরেকবার, আসমা বিনত আবু বকর (রা.) বলেন, এক জুমায় পুরুষ সাহাবিরা এত কাঁদছিলেন যে নারীরা নবীজির খুতবা শুনতে পাননি। পরে তাঁরা জানতে পারেন, নবীজি (সা.) কবরের পরীক্ষা ও কষ্ট নিয়ে কথা বলছিলেন।

নবীজির কথা এত শক্তিশালী ছিল যে তা হৃদয়কে কাঁদিয়ে দিত, মনকে জাগিয়ে তুলত।

জুমার নামাজে নবীজির সুন্দর পোশাক, সুগন্ধি, মিসওয়াকের ব্যবহার, তাঁর কণ্ঠের সুর—সবকিছু যেন আমাকে ডাকে। তাঁর কথায় জীবন ও মৃত্যুর পাঠ, তাঁর দৃষ্টিতে করুণা, তাঁর ইশারায় জ্ঞান—এগুলো আমার হৃদয়কে পূর্ণ করে।

নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, জুমা একটি উৎসব, একটি দিন, যখন আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সেরাটা নিয়ে হাজির হই। তাঁর খুতবা ছিল হৃদয় জাগানোর শিল্প, যা আমাদের আল্লাহর পথে নিয়ে যায়।

আসুন, আমরা জুমার এই আলোকে হৃদয়ে ধরে রাখি, নবীজির শিক্ষায় জীবনকে আলোকিত করি। আসসালামু আলাইকুম—শান্তি বর্ষিত হোক।

ওমর সুলাইমান রচিত মিটিং মুহাম্মাদ বই থেকে অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ