মুরিদকের ভেতরে: ভারত কি ‘সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’তে হামলা চালিয়েছে, নাকি মসজিদে
Published: 9th, May 2025 GMT
বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিল ভবনের ছাদ। এর একটি গর্ত দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে প্রবেশ করছিল। মাটিতে ছড়িয়ে ছিল ধ্বংসাবশেষ এবং ঘরের দরজাগুলো উড়ে গিয়েছিল বিস্ফোরণে।
এটা ছিল ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে পাঠানো একটি বার্তা। ৭ মে গভীর রাতে ভারতের চালানো একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার এটি ছিল একটি। গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের প্রাণঘাতী হামলার প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয় এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা।
পেহেলগামে হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও, ইসলামাবাদ এতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
ওপরে যে ভবনের বর্ণনা দেওয়া হলো, সেটি পাকিস্তানে মুরিদকেতে অবস্থিত। ভারতের এ হামলা ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ, যা পাকিস্তানে চালানো সবচেয়ে বড় পরিসরের বিমান হামলা। পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশীর মধ্যে চারটি যুদ্ধের বাইরে সবচেয়ে বড় হামলা এটি। ভারত যেসব স্থান নিশানা করেছে, সেসবের মধ্যে মুরিদকে ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করা হয়, মুরিদকে হলো লস্কর-ই-তাইয়েবা (এলইটি) নামের সশস্ত্র সংগঠনের ঘাঁটি। সংগঠনটিকে ভারত তার ভূখণ্ডে চালানো বিভিন্ন প্রাণঘাতী হামলার জন্য দায়ী করে থাকে; যার মধ্যে রয়েছে ২০০৮ সালের নভেম্বরে চালানো মুম্বাই হামলাও।
তবে ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ও দেশটির পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত বুধবার জোর দিয়ে দাবি করেন, তাঁরা শুধু ‘সন্ত্রাসবাদী স্থাপনা’ নিশানা বানিয়েছেন এবং ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কেবল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আঘাত করেছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ২ শিশুসহ ৩১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
মুরিদকেতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যায়, ধসে পড়া ছাদটি ছিল একটি বড় প্রশাসনিক ভবনের, নাম ‘গভর্নমেন্ট হেলথ অ্যান্ড এডুকেশনাল কমপ্লেক্স’। এখানে একটি হাসপাতাল, দুটি স্কুল, একটি হোস্টেল ও একটি বড় মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসায় প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ৮০টি বাড়ি, যেখানে প্রায় ৩০০ মানুষের বসবাস, যাঁদের অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী।মুরিদকেতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যায়, ধসে পড়া ছাদটি ছিল একটি বড় প্রশাসনিক ভবনের, নাম ‘গভর্নমেন্ট হেলথ অ্যান্ড এডুকেশনাল কমপ্লেক্স’। এখানে একটি হাসপাতাল, দুটি স্কুল, একটি হোস্টেল ও একটি বড় মাদ্রাসা রয়েছে। মাদ্রাসায় প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এ ছাড়া এখানে রয়েছে ৮০টি বাড়ি, যেখানে প্রায় ৩০০ মানুষের বসবাস; যাঁদের অধিকাংশ সরকারি কর্মচারী।
বুধবার এই প্রশাসনিক ভবন ও এটি সংলগ্ন এক বড় বারান্দা দিয়ে আলাদা করা একটি মসজিদেও আঘাত হেনেছে ক্ষেপণাস্ত্র। হামলায় ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী তিন কর্মচারী নিহত হন। আহত হন একজন।
একজন উদ্ধারকারী আল–জাজিরাকে জানান, তিনি হামলার আধা ঘণ্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ‘প্রথম মৃতদেহটি আমি-ই খুঁজে পাই’, প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন তিনি।
ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিলাল মসজিদের সামনে পাকিস্তানের এক সেনা। ৭ মে ২০২৫, পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে থাকা লালনের গানের পাণ্ডুলিপি ফেরত চাইলেন কুষ্টিয়ার ডিসি
কুষ্টিয়ার আশ্রম থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ভারতের কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ঐতিহাসিক সেই গানের পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ভোলপুর শহরে অবস্থিত শান্তি নিকেতন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছিলেন লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও গবেষকরা। তবে তা ফেরত পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার লালন একাডেমিতে পাণ্ডুলিপিগুলো ফেরত চেয়েছেন। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন তিনি। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এ আবেদন পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে ডিসি উল্লেখ করেছেন, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন আশ্রম থেকে লালন শাহের গানের একটি খাতা কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের তৎকালীন জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যা বর্তমানে শান্তি নিকেতনে সংরক্ষিত আছে। প্রায় ১৩৫ বছরের পুরোনো উক্ত খাতায় লালন শাহের ৩১৪টি গান রয়েছে। ইতোপূর্বে শান্তি নিকেতন থেকে লালন শাহের গানের পাণ্ডুলিপির একটি অনুলিপি প্রেরণ করা হলেও, মূল পাণ্ডুলিপি সেখানেই রয়ে গেছে।
প্রতি বছর লালন তিরোধান দিবস ও লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে লক্ষ লক্ষ দেশ-বিদেশি লালন ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের আগমন ঘটে। তাদের সবার পক্ষ থেকে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত আনার দাবি উঠেছে। তদুপরি সরকার ১৭ অক্টোবর লালন তিরোধান দিবসকে ‘ক’ শ্রেণির দিবস হিসেবে ঘোষণা এবং জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় লালন তিরোধান দিবসের গুরুত্ব আরো বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভক্ত, অনুরাগী, অনুসারী ও লালন গবেষকদের দাবির প্রেক্ষিতে লালন গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে সংগ্রহ করে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের মূল পাণ্ডুলিপি শান্তি নিকেতন থেকে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াস্থ লালন একাডেমিতে ফেরত এনে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, “লালনের ৩১৪টি গানের মূল পাণ্ডুলিপি ফেরত আনার জন্য আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কলকাতা থেকে সেগুলো দ্রুত কুষ্টিয়ায় ফেরত আনতে চাই। এ জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ