জরিমানা আর নিষেধাজ্ঞার ভয়ে ভারত খেলল পাকিস্তানের সঙ্গে, হারলও
Published: 10th, May 2025 GMT
পাল্টাপাল্টি হামলায় ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখন তলানিতে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনায় দুই দেশের সামরিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই একসঙ্গে ম্যাচ খেলেছে ভারত-পাকিস্তান। বৃহস্পতিবার ওমানের মাসকাটে এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশের ছেলেরা।
ভারতে যখন পাকিস্তানের সঙ্গে ভবিষ্যতেও কোনো ম্যাচ না খেলার আলোচনা হচ্ছে, তখন হ্যান্ডবল দলের খেলার কারণ কী—এ বিষয়ে হ্যান্ডবল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এইচএফআই) নির্বাহী পরিচালক আনন্দেশ্বর পান্ডে বলেছেন, জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞা শঙ্কায় না খেলে উপায় ছিল না। ম্যাচটি ভারত জেতেওনি। হেরেছে ২-০ ব্যবধানে। প্রথম সেটে ৩৪–৬ আর দ্বিতীয় সেটে ৩৬–৭ ব্যবধানে।
ওমানে ৯ দল নিয়ে দশম এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হয়েছে ৬ মে। বৃহস্পতিবার ছিল টুর্নামেন্ট ‘বি’ গ্রুপে একসঙ্গে থাকা ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ। এদিকে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ভারত কর্তৃক পাকিস্তানে হামলা শুরুর পর দুই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সবচেয়ে বড় ধাক্কাও লেগেছে এ দিনই। পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে একই দিনে স্থগিত হয়েছে ভারতের আইপিএল ও পাকিস্তানের পিএসএল।
দুই প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধাবস্থার জেরে এ বছরের এশিয়া কাপ ক্রিকেট না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমনকি সামনে কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টেও ভারত-পাকিস্তানকে এক গ্রুপে না রাখা নিয়ে আলোচনাও চলছে। আর রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের এসব অস্থিরতার মধ্যেই ওমানে মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশের বিচ হ্যান্ডবল দল।
আরও পড়ুনভারত না পারলে আইপিএল আয়োজন করতে চায় ইংল্যান্ড৩ ঘণ্টা আগেটাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, ম্যাচে ভারতের খেলোয়াড়েরা কালো বাহুবন্ধনী পরেছিলেন, তবে এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন ও আয়োজকেরা সেটি খুলে ফেলতে বলেন। আয়োজকেরা ভারতের কোচিং স্টাফকে জানান, তাঁদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড টুর্নামেন্ট থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেললে ভারতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন, এমন শঙ্কায় শুরুতে ম্যাচ বয়কটের কথা ভেবেছিল ভারতের হ্যান্ডবল দল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিতে তেমন ভাবনা থেকে সরে আসতে হয়েছে বলে জানান ভারত হ্যান্ডবল ফেডারেশনের নির্বাহী পরিচালক আনন্দেশ্বর, ‘আন্তর্জাতিক হ্যান্ডবল ফেডারেশনের চার্টার অনুসারে ম্যাচ বয়কট করলে আমাদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা করা হতো। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ২ বছরের নিষেধাজ্ঞার শঙ্কাও ছিল। এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন আমাদের পরিষ্কার বলে দিয়েছে, ভারত ম্যাচ না খেললে তা অলিম্পিক চার্টারের চেতনাবিরুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হবে। না খেলা ছাড়া আমাদের অন্য কোনো উপায় ছিল না।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশ সফরে আসবে না ভারত, হবে না এশিয়া কাপও১৯ ঘণ্টা আগেপাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ খেলার আগে হ্যান্ডবল ফেডারেশন থেকে ভারতের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও ইন্ডিয়ান অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল বলে জানান আনন্দেশ্বর। তবে এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা ম্যাচের আগে পাওয়া যায়নি। এখন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল বা ফাইনালে আবারও পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচ পড়লে কী করবেন, সে বিষয়ে হ্যান্ডবল ফেডারেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি। যদি কোনো নির্দেশনা না আসে, তাহলে দলকে পাকিস্তানের সঙ্গে পরবর্তী ম্যাচ ছেড়ে দিতে বলব।’
এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবলের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে। চ্যাম্পিয়ন দল ২০২৬ বিচ হ্যান্ডবলের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সুযোগ পাবে।
https://www.prothomalo.com/sports/cricket/ohdar5c83q আইপিএলের পর পিএসএলও স্থগিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ হ য ন ডবল
এছাড়াও পড়ুন:
যাঁদের টানে দেশে ফিরলেন, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার
ওমানপ্রবাসী আবদুল বাহার স্বজনদের সঙ্গে ফিরছিলেন বাড়িতে। মা, স্ত্রী, মেয়ে, নানি, ভাইয়ের স্ত্রী, ভাইয়ের মেয়ে সবাই ছিলেন সঙ্গে। বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িতে অনেক হাসিঠাট্টা, খুনসুটি চলছিল। কিন্তু কে জানত মুহূর্তেই এই আনন্দের পরিবেশ পরিণত হবে বিষাদে।
গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে এসে পৌঁছায় বাহারের নানি ফয়জুন নেসা (৮০), মা খুরশিদা বেগম (৫৫), স্ত্রী কবিতা বেগম (৩০), মেয়ে মীম আক্তার (২), ভাতিজি রেশমি আক্তার (১০), ভাবি লাবনী বেগম (৩০) এবং লাবনীর মেয়ে লামিয়া আক্তারের (৯) মরদেহ।
ওমান থেকে দেশে ফেরা আবদুল বাহারকে আনতে ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু দেশে ফেরা আনন্দে শেষতক নেমে এল মৃত্যুর ছায়া। গতকাল ভোর পাঁচটার দিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর এলাকায় বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইক্রোবাসটি একটি খালে পড়ে। বাহার ছাড়া পরিবারের কেউই ফিরে আসেননি।
গতকাল সকালে বাহারদের বাড়ির ছোট উঠানজুড়ে সারি সারি সাতটি লাশ এনে রাখা হয়। খবর পেয়ে সকালেই লোকজন জড়ো হয়েছেন। শেষযাত্রার কিছু আয়োজনও সম্পন্ন হয়েছে। এক পাশে গোসলের জন্য টানানো হয়েছে শামিয়ানা। উঠানে পাতা হয়েছে চেয়ার। সবকিছুর মধ্যে নিদারুণ এক শোকের বার্তা।
যাঁদের জন্য প্রবাস থেকে ফেরা, তাঁদেরই কবরে শোয়ালেন বাহার। দুই বছরের মেয়ে মীমকে ভালো করে একটু বুকে জড়িয়ে আদরও করা হলো না। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একসঙ্গে জানাজা হয় ছয়জনের। বাহারের নানি ফয়জুন নেসার লাশ নেওয়া হয় পাশের ইউনিয়ন হাজির পাড়ায়। বাকিদের দাফন হয় জয়পুর ইউনিয়নের চৌপল্লী গ্রামে।
পারিবারিক কবরস্থানে এক সারিতে দুটো কবর, সামান্য দূরেই চারটি। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেখানেই একে একে মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী কবিতা, মেয়ে মীমসহ নিহত স্বজনদের শুয়ে দেন বাহার।
চৌপল্লী গ্রামে মানুষের ভিড়। এত মৃত্যু একসঙ্গে আর দেখেনি কেউ। শোকে স্তব্ধ গ্রামের বাসিন্দারা। গতকাল বিকেলে