জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’ এই অহিংস বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধিপ্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ- এই স্মৃতি বিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধ পূর্ণিমা হিসাবে পালন করেন বুদ্ধ ভক্তরা। আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা।
রোববার (১১ মে) দিবসটি উপলক্ষ্যে আজ রাষ্ট্রীয় ছুটি। শান্তি শোভাযাত্রার পাশাপাশি বৌদ্ধ মঠ এবং মন্দিরগুলোয় প্রদীপ প্রজ্বালন, পূজা ও প্রার্থণার আয়োজন করেন বুদ্ধের অনুসারীরা। দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় বুদ্ধ পূর্ণিমা সাড়ম্বরে উদযাপন করছে আজ। এ উপলক্ষে রাজধানীসহ দেশজুড়ে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধ পূজা, প্রদীপ প্রজ্বলন, শান্তি শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আলোচনা সভা, প্রভাত ফেরি, সমবেত প্রার্থনা, আলোচনা সভা ও বুদ্ধ পূজা ইত্যাদি নানা কর্মসূচী পালিত হচ্ছে।
গৌতম বুদ্ধের শুভজন্ম, বোধিজ্ঞান ও নির্বাণ লাভ এই ত্রিস্মৃতি বিজড়িত বৈশাখী পূর্ণিমা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বের সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেওয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।
বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.
বাণীতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “মহামতি গৌতম বুদ্ধ হিংসা-বিদ্বেষ ও লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে মানবজাতিকে আলোকিত করেছেন। মানুষের মধ্যে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় গৌতম বুদ্ধ অহিংসার বাণী প্রচার করেছেন।”
তিনি বলেন, “গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সকলের ভাগ্য উন্নয়ন এবং সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। বুদ্ধের আদর্শের অনুসরণ হিংসা, বিদ্বেষ ও হানাহানিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়তে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীগণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মিলেমিশে বহু বছর ধরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতিতে সমানভাবে অংশগ্রহণ করে আসছেন।”
গৌতম বুদ্ধের আদর্শ লালন করে দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ছাড়া বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের নেতৃবৃন্দ ও ধর্মগুরুরা। এসময় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট উপলক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
শুক্রবার রথযাত্রা উৎসব, লক্ষাধিক ভক্ত সমাগমের আশা ইসকনের
চলতি বছরের রথযাত্রা উৎসব ঢাকাসহ সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার। এ উপলক্ষে পর্যটক ও ভক্তদের নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে প্রশাসন। এরইমধ্যে প্রশাসন থেকে রথযাত্রার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বুধবার ঢাকার স্বামীবাগ আশ্রমে শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা মহোৎসব উপলক্ষে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উৎসবের বিস্তারিত তুলে ধরে ঢাকার আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শ্রী চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী, কোষাধ্যক্ষ শ্রী জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শ্রী বিমলা প্রসাদ দাস, শ্রী হৃষিকেশ গৌরাঙ্গ দাস, শ্রী নন্দন আচার্য্য দাস ও ইসকনের উত্তরা আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রী শুভ নিতাই দাস।
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, এবারও সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে রথযাত্রা হবে। এরইমধ্যে ইসকনের অধীনে ১২৮টি রথযাত্রা উৎসব হবে। এবার রথযাত্রা উৎসবে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম আশা করা হচ্ছে। মহোৎসব সফল করতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শোভাযাত্রায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। এরই মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় হয়েছে। এ ছাড়া শোভাযাত্রাসহ উৎসব উপলক্ষে নিরাপত্তায় নিজস্ব পাঁচ শতাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবেন।
উৎসব ও শোভাযাত্রায় সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য সনাতন সম্প্রদায়সহ ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুর ৩টায় রথযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। স্বামীবাগ থেকে রথের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ইত্তেফাক মোড়, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা হয়ে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট পার হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে হাইকোর্টের মোড় হয়ে শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। ৯ দিন পর ৫ জুলাই একই রাস্তা দিয়ে রথ ফিরে আসবে স্বামীবাগ মন্দিরে। একে উল্টো রথযাত্রা বলা হয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, ঢাকার রথযাত্রা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রথযাত্রা উৎসব। শুক্রবার স্বামীবাগ আশ্রমে সকাল ৮টায় বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শুভ রথযাত্রা মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুর দেড়টায় আলোচনা সভা শেষে বিকেল ৩টায় রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার উদ্বোধন হবে। এবার উৎসবের উদ্বোধনের প্রধান অতিথি এখনও নির্ধারণ হয়নি।
প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। এর ৯ দিনের মাথায় হয় উল্টো রথযাত্রা। রথযাত্রা বিভিন্ন নামে পরিচিত। পুরী জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলন হয়। বাংলাদেশেও রথযাত্রা হিন্দুদের একটি পবিত্র উৎসব। শ্রী শ্রী জগন্নাথদেবের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পদাবলি কীর্তন, ধর্মীয় নাটকসহ আট দিনব্যাপী নানা আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবের মূল আকর্ষণ বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।