‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’ সিনেমার মেকআপশিল্পীর মৃত্যুতে বলিউডে শোক
Published: 11th, May 2025 GMT
ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী মেকআপশিল্পী বিক্রম গায়কোয়াড মারা গেছেন। মুম্বাইয়ে নিজ বাড়িতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পরিবারের বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন বিক্রম। মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। তিনি বলিউডের ব্যবসাসফল ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘সঞ্জু’সহ অসংখ্য বলিউড, মারাঠি ও টালিউডের সিনেমায় মেকআপ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বলিউড অভিনেতা আমির খান, রণবীর সিং, আনুশকা শর্মাসহ বলিউড তারকারা।
আমির খান প্রোডাকশনের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লেখা হয়, ‘অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে আমরা কিংবদন্তি মেকআপ আর্টিস্ট বিক্রম গায়কোয়াডকে বিদায় জানাচ্ছি। ‘‘দঙ্গল’’, ‘‘পিকে’’, ‘‘রং দে বাসন্তী”র মতো ছবিতে তাঁর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন মাস্টার, যাঁর স্পর্শে পর্দার চরিত্রগুলো হয়ে উঠত জীবন্ত।’
আমিরের পক্ষ থেকে আরও লেখা হয়, ‘তাঁর পরিবারের সবার প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা তোমাকে মিস করব দাদা।’ এদিকে রণবীর শুধুই লিখেছেন, ‘দাদা’।
চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘বিক্রম সর্দার’ দিয়ে। এর পর থেকে তিনিই হয়ে ওঠেন হিন্দি ও মারাঠি সিনেমার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মেকআপশিল্পী। তিনি ‘৮৩ ’, ‘উরি: দ্য সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’, ‘দঙ্গল’, ‘পিকে’, ‘ওমকারা’, ‘দিল্লি-৬ ’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘ডার্টি পিকচার’, ‘সঞ্জু’, ‘ভাগ মিলখা ভাগ’–এর মতো হিন্দি ছবিতে মেকআপশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।
২০১২ সালে বিদ্যা বালান অভিনীত ‘ডার্টি পিকচার’ সিনেমার জন্য সেরা মেকআপশিল্পী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পান বিক্রম গায়কোয়াড। তিনি দক্ষিণ ভারতের ‘কাতিয়ার কালজাত গুসালি’, ‘পোন্নিয়িন সেলভান’ ও ‘ও কাধাল কানমানি’ সিনেমায়ও কাজ করেছেন।
শুধু তাই নয়, কলকাতার বাংলা ছবি ‘পাতালঘর’-এর মেকআপশিল্পী ছিলেনবিক্রম গায়কোয়াড। এ ছবিতে তাঁর প্রস্থেটিক মেকআপ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনেকেই। দেব-শুভশ্রী অভিনীত ‘ধূমকেতু’রও মেকআপশিল্পী ছিলেন তিনি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মারিয়া মান্দার লেখা: লড়ি মাঝমাঠে, লড়ি জীবনের মাঠেও
ধোবাউড়ার মন্দিরগোনা গ্রামে জন্ম আমার। আমি গারো সম্প্রদায়ের মেয়ে। গারোরা এমনিতেই অনগ্রসর। তবে গারো হিসেবে আমার ফুটবল ক্যারিয়ারে বাধা আসেনি। কেউ বলেনি যে ফুটবল খেলো না। আমার সম্প্রদায় নিরুৎসাহিত করেনি কখনো। তবে মেয়ে হিসেবে আমরা যে গ্রামাঞ্চলে খেলাধুলা করেছি, তাতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।
বলা হতো, গ্রামের মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে! তা-ও আবার হাফপ্যান্ট পরে! এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা। রক্ষণশীল সমাজ থেকে নিষেধ করা হতো ফুটবল খেলতে। বাধাটা পেয়েছি আদতে এলাকার কিছু মানুষের কাছ থেকে।
অনেকে আমার মাকে বলতেন, ‘মেয়েকে খেলতে দিয়েছেন, এটা ভালো না।’ অভিভাবকেরা মেয়েদের নিষেধ করতেন ফুটবল খেলতে। বলা হতো, মেয়েরা ফুটবল খেলতে পারবে না।
বাধা পেরিয়েতারপরও কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোচ মফিজ উদ্দিন স্যার থেমে থাকেননি। সঙ্গে ছিলেন মিনতি রানী শীল ম্যাডাম। সপ্তাহে এক দিন-দুই দিন অভিভাবকদের সভা ডাকতেন; বোঝাতেন, কেন মেয়েদের খেলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তাঁদের নেতৃত্বে আমরা ছোটবেলা থেকেই ফুটবল-পাগল হয়ে উঠেছিলাম, বাধা দিলেও অনেকে লুকিয়ে খেলত। তবে খেলার জগতে আসতে পরিবার থেকে বাধার মুখে পড়তে হয়নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়ই বাবা বীরেন্দ্র মারাক মারা যান। তাঁর কোনো স্মৃতি আমার মনে নেই। ঘরে তাঁর কোনো ছবি নেই, চেহারাটাও মনে করতে পারি না। তাই বাবার স্নেহ কাকে বলে, তা ঠিক জানি না। বাবার মৃত্যুর পর আমাদের চার ভাইবোনকে একাই বড় করেছেন মা—এনতা মান্দা।
গারোরা ধান কাটা, ধন বোনার কাজই বেশি করেন। আমার মা-ও সেটাই করতেন। আমাদের লালন–পালনের জন্য প্রতিদিন যে পরিশ্রম তিনি করেছেন, সেটা সত্যিই অসাধারণ। ধান কাটার কাজ মানে দৈনিক মজুরি, আমাদের নিজের জমি ছিল না, অন্যের জমিতে কাজ করতেন মা। দিনে পেতেন মাত্র ২০০ টাকা। এই টাকায় সংসার চলত না। ঋণ করতে হতো। ছোটবেলা থেকে মা ঘামে, চোখের জলে এগিয়ে নিয়েছেন আমাদের। তাঁর সেই পরিশ্রম আর ত্যাগের মধ্যেই আমার শৈশব কেটেছে।
ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে নিজ বাড়ির উঠানে কিশোরী মারিয়া মান্দার অনুশীলন