রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা রাজনৈতিক দলগুলোর সংগ্রামের ধারাবাহিকতা: আলী রীয়াজ
Published: 13th, May 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠন বা সংস্কারের লক্ষ্যে আলোচনা মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই আকাঙ্ক্ষা উন্মুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই ইতিহাসের এমন একটা মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত হয়েছি, যখন একটি গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের মাধ্যমে সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং সে অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার রূপরেখা তৈরির চেষ্টা করছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা, যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পথরেখা কেমন হবে তা নির্দেশ করবে।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনের এল.
আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম এবং সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে আলোচনায় দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপিকা এ এন রাশেদা, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষসহ ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ২৩ মার্চ সিপিবি ঐকমত্য কমিশনে সংস্কার বিষয়ক তাদের প্রস্তাবনা জমা দেয়। সে প্রেক্ষিতে দলটির সঙ্গে আজ আলোচনায় বসে কমিশন। ইতোমধ্যে সিপিবিসহ ৩২টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘কোনো বিষয়েই একমত হব না, এটাই যেন আলোচনার মূলনীতি’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে মতৈক্য না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমরা কোনো বিষয়েই একমত হব না, এটাই যেন আমাদের আলোচনার মূলনীতি।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান। আজ কমিশনে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি নিয়ে আলোচনা হয়।
মজিবুর রহমান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির ক্ষেত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, গণতন্ত্র এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা-সম্প্রীতি ও পক্ষপাতহীনতা—এই অভিপ্রায়গুলো যুক্ত করলে সব পক্ষের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শুধু ভাষার হেরফেরের কারণে এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা হলো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ। হাসিনার মতো একচ্ছত্র ক্ষমতাচর্চার সংস্কৃতি বজায় থাকলে সংস্কার বলতে কিছুই হবে না।’
মজিবুর রহমান বলেন, ‘সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ রাখার ব্যবস্থা করা এবং সংবিধান সংশোধনের পদ্ধতিকে কঠিনতর করা। অতীতে শেখ হাসিনা নিজের ইচ্ছেমতো দলবাজ লোক নিয়োগ দিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছেন। এখনো যদি সেই ব্যবস্থা বজায় রাখার পক্ষে কোনো দল মত দেয়, তাহলে বোঝা যাবে, তারা আসলে ফ্যাসিবাদী নীতি পরিবর্তনে অনিচ্ছুক।’
এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক বলেন, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত কমিটি গঠিত হলে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা হ্রাস পাবে, এমন ধারণা সঠিক নয়। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গঠনপ্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে পারলে নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।