যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডা ইসরায়েলকে সতর্ক করে বলেছে, যদি গাজায় সামরিক অভিযানের ‘ভয়াবহ’ সম্প্রসারণ অব্যাহত থাকে তাহলে তারা ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেবে।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার ফ্রান্স এবং কানাডা সরকারের উদ্যোগে যোগ দিয়ে ইসরায়েলি সরকারকে ‘তার সামরিক অভিযান বন্ধ’ করার এবং ‘অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, তিন নেতা গাজা যুদ্ধে হামাসের জন্য ‘বিশাল পুরষ্কার’ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

রাশিয়া-ইউক্রেন ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে: ট্রাম্প

লন্ডনের বাসা থেকে বিমানবন্দরের পথে খালেদা জিয়া

২ মার্চ থেকে গাজায় কোনো খাদ্য, জ্বালানি বা ওষুধ প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। জাতিসংঘ ইসরায়েলের  এমন পদক্ষেপকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ‘বিপর্যয়কর ক্ষতি’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

রবিবার (১৮ মে) নেতানিয়াহু বলেন, ১১ সপ্তাহের দীর্ঘ অবরোধের পর তার দেশ ‘মৌলিক পরিমাণে খাদ্য’ গাজা ভূখণ্ডে প্রবেশের অনুমতি দেবে। তবে ইসরায়েল ‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

তিন পশ্চিমা নেতা গাজায় ‘অপর্যাপ্ত পরিমাণ’ খাবার প্রবেশে ইসরায়েলি ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, বেসামরিক জনগোষ্ঠীকে প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানে অস্বীকৃতি ‘অগ্রহণযোগ্য’ এবং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

তারা আরো বলেছেন, গাজায় দুর্ভোগের মাত্রা ‘অসহনীয়’।

জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, “গাজায় প্রবেশের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত ত্রাণ ট্রাকের সংখ্যা ‘জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় সমুদ্রে এক ফোঁটা’।”

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি হামাসকে বাকি জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলার প্রতিক্রিয়ায়। ওই হামলায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি হয়েছিল।

গাজায় প্রায় ৫৮ জন জিম্মি রয়ে গেছে, যাদের মধ্যে ২৩ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।

হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ৫৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডার যৌথ বিবৃতিতে গাজায় যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান’ বাস্তবায়নের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের পাশাপাশি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের প্রস্তাব করে।

নেতানিয়াহু এই পরামর্শের সমালোচনা করে বলেছেন, “হামাস সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করার আগে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ বন্ধ করতে বলার মাধ্যমে এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবি করে, লন্ডন, অটোয়া এবং প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উপর গণহত্যার হামলার জন্য একটি বিশাল পুরষ্কার দিচ্ছেন এবং আরো নৃশংসতাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ‘সকল ইউরোপীয় নেতাদের’ সংঘাতের অবসানের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি’ অনুসরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর জ য ইসর য় ল ইসর য় ল র প রব শ র জন য বল ছ ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য

গাজায় নির্মম হামলা ও ত্রাণ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। এছাড়া যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর। মঙ্গলবার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি হাউস অফ কমন্সে এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সাথে একটি নতুন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত জিপি হোটোভেলিকে পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের মধ্যপ্রাচ্য মন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ‘অপ্রতিরোধ্য।’

ল্যামি বলেছেন, সংঘাত “অন্ধকারের নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করছে। সোমবার ১০টিরও কম ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে যা জঘন্য। নেতানিয়াহুর সরকার বিশ্বের চোখে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ হিসেবে ল্যামি জানান, বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকারের পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাজ্যের আজকের পদক্ষেপগুলি জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের জনগণকে সম্বোধন করে তিনি বলেন, “গাজায় যুদ্ধের ফলে আপনার সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি ইসরায়েল গাজায় তাদের সর্বশেষ সামরিক আক্রমণ চালিয়ে যায় এবং সহায়তার নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সরকার আরো পদক্ষেপ নেবে।”

এদিকে, যুক্তরাজ্যের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে ইসরায়েল বলেছে, বাইরের দেশের চাপ গাজায় ইসরায়েলের চলমান অভিযানে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন এক্স- এ এক পোস্টে বলেছেন, “ইসরায়েলবিরোধী আবেগ এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে যুক্তরাজ্য যদি তার অর্থনীতির ক্ষতি করতে চায়, তবে তা দেশটির নিজস্ব অধিকার। বহিরাগত চাপ ইসরায়েলকে তার ধ্বংসকারী শত্রুদের বিরুদ্ধে অস্তিত্ব এবং সুরক্ষা রক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত করবে না।”
 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ