হজরত আলী (রা.)-এর ১০টি কালজয়ী উক্তি
Published: 21st, May 2025 GMT
ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর খুতবা, পত্র ও উপদেশের একটি বিখ্যাত সংকলন হলো নাহজুল বালাগা বা বাগ্মিতার পথ। এটি একাদশ শতাব্দীতে সাইয়্যেদ শরিফ এটি সংকলন করেন। গ্রন্থটিতে ২৪১টি খুতবা, ৭৯টি পত্র এবং ৪৮৯টি উপদেশ রয়েছে। গ্রন্থটির সংকলক শিয়া মতাদর্শী বলে পরিচিত হলেও শিয়া-সুন্নি উভয় ধারার আলেমরা এই গ্রন্থের সত্যতা স্বীকার করেন, যদিও কয়েকটি বর্ণনা সূত্র নিয়ে মতভেদ রয়েছে। নাহজুল বালাগা ইসলামি সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ এবং আলী (রা.
হজরত আলী (রা.)-এর কালজয়ী উক্তি
১. জ্ঞানের মূল্য: ‘জ্ঞানই তোমার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ; এটি কখনো হ্রাস পায় না বরং বিতরণের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৯৫)
২. দুনিয়ার সত্যতা: ‘দুনিয়া একটি ক্ষণস্থায়ী ছায়া। এর পেছনে ছুটো না। যা চিরস্থায়ী, তার জন্য প্রস্তুত হও।’ (নাহজুল বালাগা, খুতবা ১০৩)
৩. নীরবতার শক্তি: ‘নীরবতা তোমাকে সম্মান দেয়, আর অপ্রয়োজনীয় কথা তোমার মর্যাদা কেড়ে নেয়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ২২৪)
৪. ন্যায়বিচারের গুরুত্ব: ‘ন্যায়বিচার একটি সমাজের প্রাণশক্তি; এটি ছাড়া সমাজ ধ্বংসের মুখে পড়ে।’ (নাহজুল বালাগা, পত্র ৫৩)
আরও পড়ুনইমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার কয়েকটি কারণ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. অহংকারের ধ্বংস: ‘অহংকার মানুষের হৃদয়কে অন্ধ করে এবং তাকে পতনের দিকে নিয়ে যায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ৮৬)
৬. সত্যের পথ: ‘সত্য বলো, এমনকি যদি তা তোমার বিরুদ্ধে যায়। সত্যই তোমার মুক্তির পথ।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৪৬)
৭. সঙ্গী নির্বাচন: ‘এমন সঙ্গী বেছে নাও যে তোমাকে ভালো পথে নিয়ে যায় এবং তোমার ভুল সংশোধন করে।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৬০)
৮. ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ: ‘ক্রোধ তোমার শত্রু। যে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সে নিজেকে জয় করতে পারে।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ১৫৩)
৯. দানের ফজিলত: ‘দান করো, কারণ এটি তোমার সম্পদ কমায় না, বরং তোমার মর্যাদা বাড়ায়।’ (নাহজুল বালাগা, উপদেশ ২৩৬)
১০. আল্লাহর ওপর ভরসা: ‘আল্লাহর ওপর নির্ভর করো, তিনি তোমার সব সমস্যার সমাধানকারী। যে তাঁর ওপর ভরসা করে, সে কখনো হতাশ হয় না।’ (নাহজুল বালাগা, খুতবা ১১৪)
সূত্র: দ্য ইসলামিক ইনফরমেশন ডটকম
আরও পড়ুননামাজ: দাসের মহিমা০৪ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন হজ ল ব ল গ উপদ শ
এছাড়াও পড়ুন:
দোয়ার ফজিলত ও আদব
দোয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা বা প্রার্থনা করা। পরিভাষায় দোয়া হলো কল্যাণ ও উপকার লাভের উদ্দেশ্যে এবং ক্ষতি ও অপকার রোধে মহান আল্লাহকে ডাকা এবং তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।’ (তিরমিজি: ৩৩৭৩)
আল–কোরআনের বর্ণনা, ‘আর তোমাদের রব বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)
মুমিনের পরিচয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার কৃতকর্মের জন্য তাদের কী কী চোখজুড়ানো প্রতিদান লুকায়িত আছে।’ (সুরা-৩২ সাজদা, আয়াত: ১৬-১৭)
‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে, আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ইমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১)দোয়া ও আমল কবুল হওয়ার মূল শর্ত হলো ইখলাস। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, তাঁকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে।’ (সুরা-৪০ মুমিন, আয়াত: ৬৬)
দোয়া কবুলের অন্যতম শর্ত হলো হালাল উপার্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎ কাজ করো; তোমরা যা করো, সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫১) ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা পাক পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদের রিজিক হিসেবে দান করেছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭৩)
নবীজি (সা.) বলেন, ‘উষ্কখুষ্ক ধুলায় ধূসরিত অবস্থায় দীর্ঘ সফরকারী একজন যে স্বীয় দুই হাত আকাশের দিকে প্রসারিত করে বলে, “হে প্রভু! হে প্রভু!” অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং সে হারাম দ্বারা লালিত, তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে?’ (মুসলিম: ১৬৮৬)
নির্জনে নীরবে বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা উত্তম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫)। ‘পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না। তাকে আহ্বান করো ভয় ও আশাসহকারে। নিশ্চয় আল্লাহর করুণা সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী।’ (সুরা-৭ আরাফ, আয়াত: ৫৫-৫৬)
দোয়ার আদব হলো দৃঢ়সংকল্প ও আকুতির সঙ্গে দোয়া করা, দোয়া কবুলে প্রবল আশাবাদী হওয়া।
হজরত জাকারিয়া (আ.) তাঁর দোয়ায় বলেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনার কাছে দোয়া করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪) হজরত ইব্রাহিম (আ.) বলেন, ‘আশা করি, আমার প্রতিপালকের নিকট দোয়া করে আমি বিফল হব না।’ (সুরা-১৯ মারিয়াম, আয়াত: ৪৮)
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]