রাজশাহীর তানোরের বিলজোয়ানা ও বিলকুমারী বিল দুটি প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর। সম্প্রতি সরকার বিলজোয়ানাকে বাংলাদেশের প্রথম ‘জলাভূমিনির্ভর প্রাণী অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করেছে। ২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার বিলের ধারে উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে শিশুদের জলজ উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, মাছ ধরার উপকরণ চেনানো হয়। ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা।

তানোর উপজেলার গোকুল-মথুরা গ্রামের বিলপাড়ে বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ), সবুজ সংহতি ও গোকুল-মথুরা যুব সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজকেরা বলছেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণপ্রাচুর্যময় অঞ্চল হলো তানোরের বিলজোয়ানা-বিলকুমারী। বিল দুটির একত্রে আয়তন প্রায় ৩৮৭ একর। বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদ। এই বিলাঞ্চল শুধু মাছ বা পাখির আবাস নয়, বরং হাজারো প্রাণবৈচিত্র্যে এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। প্রতিবছর বর্ষাকালে বিলগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু অংশ হয়ে ওঠে কৃষিকাজের মাঠ। এ অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু পালন এবং স্থানীয় জীবনযাত্রা সরাসরি এই বিলভিত্তিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। অতীতের প্রাণপ্রাচুর্যময় বিলজোয়ানা-বিলকুমারীর জৌলুস দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন-জীবিকা এবং একই সঙ্গে জলজ প্রাণবৈচিত্র্য কমে যাওয়ার কারণে এখন নানাভাবে পরিবেশও হুমকিতে পড়েছে। বিলের চারপাশে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার, দখল-দূষণ, পাখি শিকারসহ নানা কার্যক্রমের কারণে জলাভূমিনির্ভর প্রাণবৈচিত্র্য কমে গেছে। অন্যদিকে বিলকে কেন্দ্র করে মৎসজীবীদের পেশাও সংকটের মুখে।

উৎসবে অংশ নেন গোকুল-মথুরা গ্রামের কৃষক-জেলে, নারী, প্রবীণ ও নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। আলোচনা পর্বে অনুষ্ঠানের অতিথি নদীগবেষক ও সবুজ সংহতি সংগঠনের আহ্বায়ক মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘শিব নদে বাঁধ দেওয়ার ফলে বিলজোয়ানা-বিলকুমারী আস্তে আস্তে জলহীন হতে থাকে। যার ফলে বিলের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। অনেক জলজ প্রাণ বিলুপ্ত হয়েছে।’ তিনি বিলজোয়ানা-বিলকুমারী খনন করার দাবি জানান।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক মো.

জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘সব প্রাণ সংরক্ষণ করেই আমাদের উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ হলেই আমাদের প্রকৃতি সুরক্ষা হবে।’ এ বিষয়ে জনগোষ্ঠীর সচেতনতার প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

মাছ ধরার উপকরণের সঙ্গে শিশুদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোকুল-মথুরা গ্রামের বিলপাড়ে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব লক ম র স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
  • শরীয়তপুরে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ সন্দেহে তরুণ গ্রেপ্তার, বোমা তৈরির উপকরণ জব্দ
  • ১০ তলা ভবন নির্মাণে খরচ কত