তানোরে বিলের প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে উৎসব
Published: 21st, May 2025 GMT
রাজশাহীর তানোরের বিলজোয়ানা ও বিলকুমারী বিল দুটি প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর। সম্প্রতি সরকার বিলজোয়ানাকে বাংলাদেশের প্রথম ‘জলাভূমিনির্ভর প্রাণী অভয়ারণ্য’ ঘোষণা করেছে। ২২ মে আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার বিলের ধারে উৎসবের আয়োজন করা হয়। এতে শিশুদের জলজ উদ্ভিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া, মাছ ধরার উপকরণ চেনানো হয়। ছিল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভা।
তানোর উপজেলার গোকুল-মথুরা গ্রামের বিলপাড়ে বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ), সবুজ সংহতি ও গোকুল-মথুরা যুব সংগঠন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজকেরা বলছেন, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাণপ্রাচুর্যময় অঞ্চল হলো তানোরের বিলজোয়ানা-বিলকুমারী। বিল দুটির একত্রে আয়তন প্রায় ৩৮৭ একর। বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে শিব নদ। এই বিলাঞ্চল শুধু মাছ বা পাখির আবাস নয়, বরং হাজারো প্রাণবৈচিত্র্যে এক সমৃদ্ধ কেন্দ্র। প্রতিবছর বর্ষাকালে বিলগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে ওঠে এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু অংশ হয়ে ওঠে কৃষিকাজের মাঠ। এ অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু পালন এবং স্থানীয় জীবনযাত্রা সরাসরি এই বিলভিত্তিক বাস্তুতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। অতীতের প্রাণপ্রাচুর্যময় বিলজোয়ানা-বিলকুমারীর জৌলুস দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। বিলকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবন-জীবিকা এবং একই সঙ্গে জলজ প্রাণবৈচিত্র্য কমে যাওয়ার কারণে এখন নানাভাবে পরিবেশও হুমকিতে পড়েছে। বিলের চারপাশে রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার, দখল-দূষণ, পাখি শিকারসহ নানা কার্যক্রমের কারণে জলাভূমিনির্ভর প্রাণবৈচিত্র্য কমে গেছে। অন্যদিকে বিলকে কেন্দ্র করে মৎসজীবীদের পেশাও সংকটের মুখে।
উৎসবে অংশ নেন গোকুল-মথুরা গ্রামের কৃষক-জেলে, নারী, প্রবীণ ও নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। আলোচনা পর্বে অনুষ্ঠানের অতিথি নদীগবেষক ও সবুজ সংহতি সংগঠনের আহ্বায়ক মাহাবুব সিদ্দিকী বলেন, ‘শিব নদে বাঁধ দেওয়ার ফলে বিলজোয়ানা-বিলকুমারী আস্তে আস্তে জলহীন হতে থাকে। যার ফলে বিলের জীববৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। অনেক জলজ প্রাণ বিলুপ্ত হয়েছে।’ তিনি বিলজোয়ানা-বিলকুমারী খনন করার দাবি জানান।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটি রাজবন বিহারে দুদিনের কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু
রাঙামাটির রাজবন বিহারে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে দুদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
উদ্বোধনের পর চরকায় সুতা কেটে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর (পরার কাপড়) তৈরি কার্যক্রমের সূচনা করেন বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা মঞ্জুলিকা খীসা। এটি রাজবন বিহারের ৪৯তম কঠিন চীবর দানোৎসব।
এর আগে, বেইন ঘরে পঞ্চশীল প্রদান করেন প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির। এ সময় পূণ্যার্থীদের সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হয় পুরো রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।
রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, রাজবন বিহারের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ২০০টি বেইন স্থাপন করা হয়েছে। এতে হাজারো নারী-পুরুষ চীবর প্রস্তুত কাজে অংশগ্রহণ করেছেন। সারারাত ব্যাপী চীবর তৈরির কার্যক্রম চলবে।
বৌদ্ধ শাস্ত্র মতে, দীর্ঘ আড়াই হাজার বছর পূর্বে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরির প্রচলন করেছিলেন। তিন মাস বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বর্ষাবাস শেষে আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের চীবর দান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বনভান্তের অনুপ্রেরণায় ১৯৭৬ সাল থেকে বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা প্রবর্তিত নিয়মে রাঙামাটি রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাজবন বিহারের উপাসক-উপাসিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিয় খীসা বলেন, ‘‘বৌদ্ধ যুগের আদলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চরকায় তুলা থেকে সুতা বের করে তাঁতে বুনে কাপড় তৈরি করা হয়। এই কাপড় বিশেষ কায়দায় সেলাই করে চীবর তৈরি করা হয়। তারপর তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করা হয়। দান বছরের যেকোনো সময় করা যায়। কিন্তু, কঠিন চীবরদান করতে হয় আশ্বিনী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমার মধ্যে।’’
কঠিন চীবরদান উৎসবকে ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা রাজবন বিহারে এসেছেন। তারা সঙ্গে নিয়ে আসছেন কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কৃত্রিম গাছে ঝোলানো নগদ টাকা, বই-খাতা, সুঁই-সুতাসহ নানা দানসামগ্রী। এটিকে তারা ‘কল্প তরু’ বলে ডাকে। অনেকে দল বেঁধে বাদ্য বাজিয়ে, বৌদ্ধধর্মীয় সংগীত গেয়ে বিহার প্রাঙ্গণে এসেছেন। রাতব্যাপী বুদ্ধ নাটক, পালা কীর্তন নানান অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয় বিহার প্রাঙ্গণে। দুদিনের অনুষ্ঠানে লাখো পূণ্যার্থী অংশগ্রহণ করবেন। এই উৎসব ঘিরে বিহার প্রাঙ্গণ জুড়ে গ্রামীণ মেলা বসেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। পুরো অনুষ্ঠান ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠান ঘিরে কোনো নাশকতার আশঙ্কা নেই।’’
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে বৌদ্ধ সাধকদের চীবর দান এবং সন্ধ্যায় হাজার বাতি উৎসর্গের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হবে।
ঢাকা/শংকর/রাজীব