মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর সীমান্ত দিয়ে ৩০ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

আজ মঙ্গলবার ভোরে সীমান্তের কাঁটাতারের গেট খুলে তাঁদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়। পরে বিজিবি তাঁদের আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করে।

আটক ৩০ জনের মধ্যে ১১ শিশু, ১২ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছেন। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের আটক করে এবং পরে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। তাঁদের অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়।

এ সম্পর্কে মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে ৩০ জনকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের পরিচয় যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হাতে ২০০ টাকা, পানি আর খাবার দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ

কু‌ড়িগ্রা‌মের রৌমারী উপ‌জেলার বড়াইবা‌ড়ী সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে (পুশ ইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে বড়াইবাড়ী সীমান্তের ১০৬৭ নম্বর সীমানা পিলারের ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’ এলাকা দিয়ে ওই নাগরিকদের ঠেলে পাঠানো হয়। ওই ১৪ জনের মধ্যে ৯ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।

আরও পড়ুনকুড়িগ্রাম সীমান্তে ১৪ জনকে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা বিএসএফের, বিজিবির বাধা৯ ঘণ্টা আগে

বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা ভারতের আসামের বা‌সিন্দা। ঠেলে পাঠানোর সময় তাঁদের প্রত্যেকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ টাকা, একটি পানির বোতল ও খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দেয় বিএসএফ। পরে তাঁদের জোরপূর্বক ঠেলে এপাশে পাঠানো হয়। কেউ আসতে না চাইলে তাঁর ওপর নির্যাতন চালানো হয়।

পুশ ইনের শিকার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আসামের মিকিরভিটায় আমাদের মাটি (জমি) আছে, ঘরবাড়ি আছে। আমি সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। আমার মা-বাবা সেখানের আদি বাসিন্দা। আমার বড় ভাই ও মা সেখানকার ওয়ার্ড মেম্বার।’

খায়রুল আরও বলেন, ‘২৩ মে আমাকে এসপি অফিসে তুলে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখান থেকে ভারতের গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়া ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। গতকাল (সোমবার) ওই ক্যাম্প থেকে ফজরের নামাজের আগে কাঁটাতার পার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সীমান্তে পাঠানোর আগে আমার সাথি ভাইবোনদের সবার হাতে ২০০ টাকা, পানির বোতল ও প্যাকেট খাবার দেওয়া হয়। কেউ আসতে রাজি না হলে মারধর করে।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাতে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে পুশ ইন করাকে কেন্দ্র ক‌রে বি‌জি‌বি ও বিএসএফের ম‌ধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে পুশ ইন ঠেকাতে এলাকাবাসী ও বিজিবি সীমান্ত এলাকায় অবস্থান নিলে বিএসএফ চারটি গুলি করে। এ ছাড়া দুপু‌রে বি‌জি‌বির পক্ষ থে‌কে পতাকা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হ‌লেও বিএসএফ রা‌জি হয়‌নি। উল্টো বাংলাদেশের আকা‌শে ড্রোন ওড়া‌নো, সীমান্তে ভা‌রী অস্ত্র তাক করিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে।

ত‌বে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে পুশ ইনের চেষ্টার ঘটনায় উত্তেজনার কথা স্বীকার করা হলেও গুলির কথা অস্বীকার করেছে। জামালপুর ৩৫ বি‌জি‌বি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) হাসানুর রহমান বলেন, পতাকা বৈঠকের কথা থাকলেও সে‌টি হয়‌নি। আটক ১৪ জনকে বড়াইবা‌ড়ী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। তাঁরা মূলত কোন দে‌শের নাগ‌রিক সেটা যাচাই–বাছাই ক‌রে পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম–৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও ২০০১ সালে ঐতিহাসিক বড়াইবাড়ী যুদ্ধে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএসএফ জোর করে ১৪ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ও বিজিবি বাধা দিতে গেলে বিএসএফ আমাদের ভয় দেখাতে রাবার বুলেট ছোড়ে। এ ছাড়া তারা ভারত ও বাংলাদেশের আকাশে ড্রোন উড়িয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করে। ওই সময়ে ভারতের সীমান্তে বেশ কিছু ভারী যানবাহন দেখা যায়। কিন্তু বিজিবি কেন এটি অস্বীকার করছে, আমার জানা নেই। বর্তমানে পুশ ইনের শিকার ওই ১৪ জন বড়াইবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পে রয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪ ভারতীয় নাগরিকের হাতে বাংলাদেশি ২০০ করে টাকা ও পানির বোতল দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা আমাকে টাকা দেখিয়েছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ সীমান্ত দিয়ে আরও ৯৩ জনকে পুশইন করল বিএসএফ
  • হাতে ২০০ টাকা, পানি আর খাবার দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ
  • মুজিবনগর সীমান্তে আরও ৩০ জনকে ‍পুশইন করল বিএসএফ
  • মেহেরপুরে আরো ৩০ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ
  • ঝিনাইদহে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীর দোকানে মিলল অস্ত্র ও ককটেল
  • চার সীমান্ত দিয়ে আরও ১৫৩ জনকে পুশইন বিএসএফের
  • মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ
  • মেহেরপুরে নারী শিশুসহ ১৯ জনকে ঠেলে দিল বিএসএফ
  • মেহেরপুর সীমান্তে শিশুসহ ১৯ জনকে পুশব্যাক করল বিএসএফ