গাজায় হত্যাযজ্ঞ: ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি
Published: 27th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর দায়ে ইসরায়েল সরকার ও মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ৮০০-এর বেশি আইনজীবী, শিক্ষক ও সাবেক বিচারপতি। চিঠিতে ইসরায়েলের সংঘটিত ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বন্ধে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে গণহত্যার একটি গুরুতর ঝুঁকি বিদ্যমান। এতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর নিশ্চিহ্ন হওয়া ঠেকাতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
চিঠিতে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলা ধরা হয়। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, ‘(গাজা) উপত্যকার সব ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল। হামাস নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত গাজা দখল, খালি করা ও অবস্থান চলবে।’
যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালতের সাবেক বিচারপতিসহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা ওই চিঠিতে সই করেছেন। সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতাদের সাম্প্রতিক একটি বিবৃতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এসব দেশের নেতারা গাজায় চলমান ভোগান্তিকে ‘অসহনীয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।
বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
চিঠিতে যুক্তরাজ্যের সরকারকে মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনি দায়বদ্ধতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি, নিঃশর্ত ও বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা আবার চালু করতে সব ধরনের উপায় ব্যবহার করা উচিত।
এসব বিষয় বাস্তবায়নে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত’ ইসরায়েলের মন্ত্রী, অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পিত রোডম্যাপ স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলার অন্যতম বড় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে স্কুল ও হাসপাতালগুলো। এর আগে গত বছরের আগস্টে গাজা নগরের আল-তাবিন স্কুলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় ফজরের নামাজ আদায় করতে স্কুলটিতে জড়ো হওয়া শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি পরিবারের বাড়িতে হামলা চালানো হলে আরও ১৯ জন নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র মন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’
শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু
নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’
তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’
বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’
ঢাকা/রায়হান/রাজীব