ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর দায়ে ইসরায়েল সরকার ও মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ৮০০-এর বেশি আইনজীবী, শিক্ষক ও সাবেক বিচারপতি। চিঠিতে ইসরায়েলের সংঘটিত ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বন্ধে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে গণহত্যার একটি গুরুতর ঝুঁকি বিদ্যমান। এতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর নিশ্চিহ্ন হওয়া ঠেকাতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

চিঠিতে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলা ধরা হয়। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, ‘(গাজা) উপত্যকার সব ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল। হামাস নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত গাজা দখল, খালি করা ও অবস্থান চলবে।’

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালতের সাবেক বিচারপতিসহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা ওই চিঠিতে সই করেছেন। সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতাদের সাম্প্রতিক একটি বিবৃতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এসব দেশের নেতারা গাজায় চলমান ভোগান্তিকে ‘অসহনীয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

চিঠিতে যুক্তরাজ্যের সরকারকে মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনি দায়বদ্ধতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি, নিঃশর্ত ও বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা আবার চালু করতে সব ধরনের উপায় ব্যবহার করা উচিত।

এসব বিষয় বাস্তবায়নে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত’ ইসরায়েলের মন্ত্রী, অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পিত রোডম্যাপ স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলার অন্যতম বড় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে স্কুল ও হাসপাতালগুলো। এর আগে গত বছরের আগস্টে গাজা নগরের আল-তাবিন স্কুলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় ফজরের নামাজ আদায় করতে স্কুলটিতে জড়ো হওয়া শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি পরিবারের বাড়িতে হামলা চালানো হলে আরও ১৯ জন নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র মন ত র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে

রাজধানীর গুলশান থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের ৩ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের মিছিলে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগ এনেছে রাষ্ট্রপক্ষ। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান তাঁর রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ জানান, গত ২৬ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। ওই দিন আদালত তাঁর উপস্থিতিতে শুনানির জন্য সোমবার দিন ধার্য করেছিলেন। শুনানির জন্য আজ সেলিম প্রধানকে আদালতে আনা হয়। আসামিপক্ষের আইনজীবী তাওহিদুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী তাওহিদুল ইসলাম বলেন, আগের সরকারের সময় সেলিম প্রধানকে নিয়ে অভিযোগ ছিল তিনি তারেক রহমানের কাছে টাকা পাঠাতেন এবং বর্তমান মামলাতেও একই রকম অভিযোগ আনা হচ্ছে, যা যৌক্তিক নয়।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জিজ্ঞেস করেন, ‘তারেক রহমানকে কে টাকা দিয়েছেন?’ উত্তরে আসামিপক্ষের আইনজীবী একটি সংবাদ প্রতিবেদনের কপি আদালতে দেখান। এ সময় আদালতের ভেতর হট্টগোল সৃষ্টি হয়।

একপর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে সেলিম প্রধান বলেন, ২০১৯ সালের একটি মামলায় তিনি জামিন না পেয়ে কারাভোগ করেছেন। জেল থেকে মুক্ত হয়ে তিনি গাজী গ্রুপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেন এবং আওয়ামী লীগের আমলে তাঁর ব্যক্তিগত বাড়িতে হামলা হয়েছে। তিনি জোসেফ হারিছের বিরুদ্ধেও মামলা করেছেন।

শুনানি শেষে আদালত সেলিম প্রধানের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে গুলশানের বারিধারার নেক্সাস ক্যাফে প্লেস নামক একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়।

এর গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের মিছিলে অর্থ জোগান দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, গত ২২ এপ্রিল সকাল ৭টায় গুলশান-১ এর জব্বার টাওয়ারের পাশের রাস্তায় আসামিসহ ৩০ থেকে ৩৫ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সমবেত হন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ সংগঠনের অর্থদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতাদের নিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা। সেখানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ব্যানার ও আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা দেশবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বাকিরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় পুলিশ গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কার্যক্রম স্থগিত
  • পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো–কাণ্ডের সেলিম প্রধান রিমান্ডে
  • শাহরুখ খান: গণহত্যার সময় বিলিয়নিয়ার হওয়ার অর্থ কী
  • সুদানের এল-ফাশের শহরে ‘চরম বিপদে’ বাসিন্দারা: ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস
  • সুদানে গণহত্যার প্রতিবাদে জাবি ও জবিতে মানববন্ধন
  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল