বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার রাতে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। তবে এর প্রভাবে বৃষ্টি ঝরবে আরও চারদিন।
আবহাওয়াবিদ মো.
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও রংপুর বিভাগ পর্যন্ত অগ্রসর হয়েছে। অনেক জায়গায় দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এতে বলা হয়, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি প্রথমে নিম্নচাপ তারপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করার পর সাতক্ষীরা ও আশেপাশের এলাকায় স্থলগভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করে। এটি আরও উত্তর, উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
রোববার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধরন র ব ষ ট ধরন র ভ র বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
জমিসংক্রান্ত বিরোধে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় সালিশ ডেকে আল-আমিন (২৮) নামে এক যুবককে আটকের পর নগরীর কেওয়াটখালীতে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রাজনৈতিক মামলায় জেলে পাঠিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীর মা আনোয়ারা বেগম।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে প্রতিকার চেয়ে অঝোরে কাঁদেন তিনি।
আল-আমিন নগরীর বলাশপুর এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ও আনোয়ারা বেগম দম্পতির সন্তান। ২০২১ সাল থেকে জমি নিয়ে আনোয়ারা বেগম ও প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। মনিরুজ্জামান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের উপ-প্রধান প্রকৌশলী। সেই দ্বন্দ্বের জের ধরে ঘটনাটি ঘটেছে বলে আনোয়ারা বেগমের অভিযোগ।
আনোয়ারা বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০২১ সালে বলাশপুরে স্বামীর পেনশনের টাকায় তিনি জমি কেনেন। এর আগে ২০০৮ সালে একই দাগে ৪ শতাংশ জমি কেনার দাবি করে ২০২২ সালে জোরপূর্বক জমিতে প্রাচীর দেন মনিরুজ্জামান। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ হলেও সুরাহা হয়নি। ৫ আগস্টের পর জমিতে বাড়ি করার উদ্যোগ নিলে বাধা দেন মনিরুজ্জামান।
আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘‘আমার ছেলে আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে মনিরুজ্জামান কোতোয়ালি মডেল থানাসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। বিষয়টি সমাধানের লক্ষ্যে কোতোয়ালি থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম থানায় উভয় পক্ষকে ডাকেন।’’
‘‘শনিবার (২৬ জুলাই) রাত আটটায় থানার মধ্যেই দরবার শুরু হয়। চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। দরবারে যখন জমির কাগজপত্র আমাদেরগুলো ঠিক প্রমাণিত হয় তখন ওসি আল-আমিনকে তার রুমে নিয়ে পিটিয়ে হাড়গোড় ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। পিছন পিছন আমি গিয়ে প্রতিবাদ করলে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেন তিনি। এরপর আল-আমিনকে লকাপে ঢুকিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেন। ছেলে রাজি না হওয়ায় সাজানো রাজনৈতিক মামলায় তাকে জেল পাঠানো হয়েছে।’’ বলে অভিযোগ করেন আনোয়ারা বেগম।
আনোয়ারা বেগম এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘‘স্বামী মারা যাওয়ার পর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানদের মানুষ করেছি। আল-আমিন ক্রোকারিজের ব্যবসা করে পুরো সংসার চালায়। রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সে জড়িত নয়। অথচ ওসি তাকে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। মনিরুজ্জামানের টাকা ও ক্ষমতার কাছে আমি হেরে গেছি। এই দেশে কোনো বিচার নাই। আমার ছেলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে সে বিপথে গেলে পুলিশ, সমাজ এবং রাষ্ট্র এ জন্য দায়ী থাকবে।’’
‘‘ওসি সালিশের এক পর্যায়ে প্রভাবিত হয়ে আল-আমিনকে সালিশ থেকে আটক করে রাজনৈতিক মামলায় জেলে ঢুকিয়েছে। এ সময় হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি,’’ উল্লেখ করে আনোয়ারা বেগম কড়জোরে ঘটনার সঠিক বিচারের পাশাপাশি আল-আমিনের মুক্তি দাবি করেন।
এ দিকে আল-আমিনের বিরুদ্ধে মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা ৩৫মিনিটে পুলিশের টহল টিম আকুয়া ভাঙ্গাপুল এলাকায় অবস্থানকালে পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, সদরের উত্তর দাপুনিয়ার সরকারি পুকুরপাড়ে একদল সন্ত্রাসী রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি ভাংচুর ও দাঙ্গাহাঙ্গামা করছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ৫টি মশাল, ২০টি লাঠি, ৩০টি ইটের টুকরো, ২৫টি কাচের টুকরো জব্দ করে। এ ঘটনার পরদিন পুলিশ কোতোয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আল-আমিনকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আল-আমিন যুবলীগ করে। কারণ যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে তার ছবি রয়েছে।’’
আল-আমিনকে থানায় সালিশ ডেকে পরে আটক করা হয়েছে কিন্তু মামলায় দেখানো হয়েছে তাকে কেওয়াটখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘‘এ
বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবে।’’
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘‘আল-আমিনের মা ছেলের মুক্তির দাবিতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমি শুনেছি। তার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
মিলন//