জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের জলাধারে লবণ পানি, হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার
Published: 31st, May 2025 GMT
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস ও টানা বৃষ্টিতে গত তিন দিনে বেশ কয়েকবার সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বনের করমজল, সুপতি, ভোলা, কটকা ও দুবলা এলাকার অন্তত ৫টি মিঠা পানির পুকুরে লবণ পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে ওইসব এলাকার বন্যপ্রাণীরা পড়েছে চরম পানির সংকটে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বুধবার (২৮ মে) রাত থেকে শুক্রবার (৩০ মে) পর্যন্ত বাগেরহাট জেলায় টানা বৃষ্টি ও মাঝারি ধরনের ঝড়ো হাওয়ার কারণে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়। এতে করে অভ্যন্তরীণ জলাধারসমূহ লবণ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো.
তিনি আরও জানান, বন্যপ্রাণীদের পানির সংকট দূর করতে পুকুরের পানি যদি স্বাভাবিক বৃষ্টিতে মিষ্টি না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে সেচের মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করা হবে।
এদিকে জলোচ্ছ্বাসের সময় শ্যালার চর এলাকা থেকে ভেসে যাওয়া অবস্থায় একটি হরিণ শাবককে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে দুবলার চরে বনরক্ষীরা দুটি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে।
ডিএফও রেজাউল করীম বলেন, ‘‘ধারণা করছি, লবণ পানি খেয়ে এবং সাঁতরে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে না পেরে হরিণ দুটি মারা গেছে। পরে সেগুলো উদ্ধার করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে।’’
ঢাকা/শহিদুল/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জল চ ছ ব স স ন দরবন দ ধ র কর লবণ প ন
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস