শেকৃবিতে প্রোগ্রামে না যাওয়ায় কক্ষছাড়ার হুমকির অভিযোগ ছাত্রদলের বিরুদ্ধে
Published: 31st, May 2025 GMT
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ছাত্রদলের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের দুই শিক্ষার্থীকে কক্ষ ছাড়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থী রাবেয়া তাহসিনা মুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের অনুসারী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রূপা রহমান ১৬-১৭ সেশনের। তিনি বলেন, ‘গত ১ মে থেকে আমাকে ও আমার রুমমেট উম্মে সুমাইয়া সুপ্তিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছেন রাবেয়া তাহসিনা মুন। তিনি আমাদের বলেন, ক্লাস করা লাগবে না, প্রোগ্রামে চল। স্যার ক্লাসে প্রেজেন্ট দিয়ে দেবেন।’
ভুক্তভোগী আরও বলেন, ‘সে বিভিন্ন সময়ে বলতেন, আমাদের রুম অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে গেছে। এমনকি ১৫ তারিখের আগেই রুম ছেড়ে গণরুম বা অন্য কোথাও উঠতে বলেন। তার কথায় সাড়া না দেওয়ায় তিনি আমাদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।’
একই কক্ষের অন্য ভুক্তভোগী ছাত্রী হলেন- উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি। তিনি ২২-২৩ সেশনের ছাত্রী। সুপ্তি বলেন, ‘রাবেয়া তাহসিনা মুন দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের প্রোগ্রামে যেতে আমাদের চাপ দিয়ে আসছেন। পরীক্ষার আগের দিনও তিনি আমাদের প্রোগ্রামে ডাকতেন। আমি না গেলে আমাকে বেয়াদব আখ্যা দেন এবং সিনিয়রদের মাধ্যমে আমাকে প্রোগ্রামে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের আগের যুগ ফিরে এসেছে। ছাত্রলীগও একইভাবে প্রোগ্রামে যেতে ডাকত। তারা ক্ষমতায় আসার আগেই যা করতেছে, ক্ষমতায় আসলে যে কি করবে? তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন প্রোগ্রামে যাওয়া নিয়ে এ ধরণের চাপ এখনই যেন বন্ধ হয়।’
রাবেয়া তাহসিনা মুনের প্রোগ্রামে ডাকা ও হল-রুম ছাড়ার আলটিমেটাম এর মেসেজের একাধিক স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় যদিও তিনি অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘৩১৪নং রুমের রুপা এবং সুপ্তিকে অন্য রুমে চলে যেতে বলেছি। ওই রুমে দু’জনই ১৭ ব্যাচের, তারা ছাত্রলীগের পদধারী ছিল। প্রভোস্ট ম্যাডাম এই রুমগুলো ফ্যাকাল্টির টপ স্টুডেন্টদের দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি ভুল করেছি- ম্যাডামের অনুমতি ছাড়া রুম ছাড়ার কথা বলা ঠিক হয়নি, এজন্য আমি দুঃখিত।’
এদিকে তার ফোন নম্বর ফেসবুকের ববিভিন্ন পেজে ভাইরাল হলে বিভিন্ন অপরিচিত নম্বর থেকে তাকে অশালীন বার্তা পাঠানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন এবং এই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সোহ্রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নেওয়া কিংবা ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো নীতিমালা ছাত্রদলের নেই। এটা যদি কেউ বলে থাকে, তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মত। ছাত্রদল কখনোই কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নেয় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের কেউ হলে থাকলে তাকে নিজ দায়িত্বে বের করে দেওয়া হবে এবং কেউ নৈরাজ্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৩১ মে (শনিবার) পৃথক অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলাদা একটি প্রতিনিধি দল। অভিযুক্তের বিচার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছে ক্যাম্পাস ছাত্রদলের একাংশ। এছাড়াও বিবৃতি দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ইসলামী ছাত্রশিবির। তারা অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, হল প্রভোস্টের পদত্যাগ ও ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ছ ত রদল র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।
গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।
রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।