চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দীরা ঈদ কাটাবেন চার দেয়ালের ভেতর। কেউ বছরের পর বছর ধরে সাজা ভোগ করছেন, কারও ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষা, আবার অনেকে বিচারাধীন মামলায় আটক। ফলে প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে থেকেই তাঁদের ঈদ করতে হচ্ছে।

তবে এই দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে কারা কর্তৃপক্ষের বিশেষ আয়োজন রয়েছে। পোলাও, পায়েস, সেমাই, মিষ্টি, পান-সুপারি, আলুর দম, মাংস ও রুই মাছ—এই খাবারগুলো পরিবেশন করা হবে ঈদের দিন।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকা বন্দীরা যেন অন্তত কিছুটা আনন্দের সঙ্গে ঈদ কাটাতে পারেন, সে জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন ৫ হাজার ১০০ জন। ঈদ উপলক্ষে এবার কাউকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। তবে যাঁদের সাজার মেয়াদ ২০ বছরের বেশি কিংবা অসুস্থ বন্দীরা মুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। যাচাই–বাছাই শেষে তাঁদের পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।

ঈদের দিন ৭ জুন সকালে বন্দীদের দেওয়া হবে পায়েস অথবা সেমাই ও মুড়ি। সকাল আটটার দিকে কারাগারের ভেতরে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বন্দীরা। কারাগারের যমুনা, কর্ণফুলী, পদ্মা, মেঘনা, সাঙ্গু ও হালদা ভবন থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বন্দীরা এসে নামাজে অংশ নেবেন। প্রতিটি ভবনের সামনেই পৃথক জামাত হবে।

জেল সুপার ইকবাল হোসেন জানান, ঈদের দুপুরে বন্দীদের খেতে দেওয়া হবে গরুর মাংস, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের জন্য খাসির মাংস, মুরগির রোস্ট, সালাদ, মিষ্টি ও পান-সুপারি। রাতে থাকবে সাদা ভাত, আলুর দম ও রুই মাছ ভাজি। এভাবেই কিছুটা সময়ের জন্য পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বন্দীরা ঈদের আনন্দে ভাগ বসাতে পারবেন। ভেদাভেদ ভুলে সবাই একসঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপন করবেন।

সাধারণ বন্দীদের পাশাপাশি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন ‘ভিআইপি’ বন্দীও। তাঁরা হলেন চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী এবং ফেনীর রহিম উল্লাহ। তাঁরা সেলে রয়েছেন। ঈদের দিন সাধারণ বন্দীদের যেসব খাবার দেওয়া হবে, তাঁরাও সেসব খাবার পাবেন। এটাই তাঁদের প্রথম কোরবানির ঈদ, যা কাটবে চার দেয়ালের ভেতর। এ ছাড়া নগর পুলিশের সাবেক কমিশনার সাইফুল ইসলাম ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এক মামলায়।

কারাগারে ঈদের আনন্দ পাবে শিশুরাও। ৫০টি শিশু, যাদের বয়স কয়েক মাস থেকে সাড়ে চার বছরের মধ্যে—এরা কারাগারে রয়েছে মায়ের সঙ্গে। অপরাধী না হয়েও বন্দী এসব শিশুকে দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক।

জেল সুপার জানান, ঈদের পরদিন প্রতিটি বন্দী পরিবারের রান্না করা খাবার খাওয়ার সুযোগ পাবেন। ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিন দিন তাঁরা স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। প্রতিটি বন্দী ঈদের দিন কারাগারের নির্দিষ্ট ফোন থেকে পাঁচ মিনিট করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও পাবেন।

এপ্রিলের শুরুতে একটি মারামারির মামলায় কারাগারে আসেন ফটিকছড়ির কামাল উদ্দিন। জামিন পাননি। তাঁর স্ত্রী রেহেনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি ঈদে স্বামীকে নিজের হাতে রান্না করা গরুর মাংসের বিরিয়ানি খাওয়াই। এবারও বিরিয়ানি নিয়ে আসব। ওর প্রিয় খাবারটা দিতে পারলেই আমার ঈদের আনন্দ পূর্ণ হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ র আনন দ বন দ দ র ঈদ র দ ন বন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক। 

নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মাদারীপুরে পুকুরে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
  • সিলেটে রোগীর মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে হামলা-ভাঙচুর, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ