প্রতিটি দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন থাকে। এমনকি সবচেয়ে প্রেমময় সম্পর্কেও কখনো কখনো অভিমান দানা বাঁধে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলানো যায়, তা আমরা শিখতে পারি আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর জীবন থেকে।

আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় স্ত্রী এবং ইসলামের একজন মহান শিক্ষয়িত্রী, তিনিও মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামীর প্রতি রাগ বা মন খারাপ অনুভব করতেন। কিন্তু তিনি কীভাবে তা প্রকাশ করতেন? আর রাসুল (সা.

) কীভাবে তাঁর সেই আবেগের মুখোমুখি হতেন?

আয়েশার (রা.) রাগের প্রকাশ

আয়েশা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, প্রাণবন্ত ও স্পষ্টভাষী। একটি হাদিসে আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’

আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘আপনি তা কীভাবে বোঝেন?’ তিনি বলতেন, ‘যখন তুমি খুশি থাকো, তখন বলো, “মুহাম্মাদের রবের কসম”, আর যখন রাগ করো, তখন বলো, “ইব্রাহিমের রবের কসম”।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৪০)

এটি একটি দাম্পত্য সম্পর্কের কোমল মুহূর্ত। আয়েশা (রা.)-এর এই হালকা রাগের প্রকাশ ছিল সূক্ষ্ম কিন্তু মানবিক। তিনি রাসুলের (সা.)নাম এড়িয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর নাম ব্যবহার করতেন, যা তাঁর রাগের একটি নিরীহ প্রকাশ। বোঝা গেলো, রাগ বা মন খারাপ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা হওয়া উচিত সম্মান ও সীমার মধ্যে।

আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫

নবীজির (সা.) অপূর্ব ধৈর্য

নবীজির (সা.) আচরণ ছিল এই গল্পের প্রকৃত শিক্ষা। তিনি স্ত্রীর রাগকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন, কিন্তু কখনো তাঁকে তিরস্কার বা অপমান করতেন না। পরিবর্তে, তিনি তাঁর আবেগ বুঝতেন এবং কোমলভাবে তা সামাল দিতেন। রাসুল (সা.)–এর এই আচরণ আমাদের শেখায় কীভাবে দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য ও সহানুভূতি বজায় রাখতে হয়।

একটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.)অন্য স্ত্রী সাফিয়া (রা.)-এর উচ্চতা নিয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। এটি ছিল একটি মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ, কিন্তু নবীজি (সা.)তাঁকে কঠোরভাবে তিরস্কার করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি এমন কথা বলেছ, যা সমুদ্রের পানিতে মিশলে তা বিষাক্ত করে দিত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৮২)

এ কথায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে তাঁর ভুলটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্মান বজায় রেখেছিলেন।

আয়েশা (রা.) ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।

ঈর্ষার মুহূর্তে রাসুলের (সা.)কোমলতা

আরেকটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.) অন্য স্ত্রীর পাঠানো খাবারের থালা ভেঙে ফেলেছিলেন ঈর্ষার বশে। এটি ছিল একটি বিব্রতকর মুহূর্ত, কারণ সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু নবীজি (সা.) কী করলেন? তিনি রাগ করেননি বা আয়েশা (রা.)-কে অপমান করেননি। পরিবর্তে তিনি শান্তভাবে ভাঙা থালার টুকরো সংগ্রহ করলেন এবং নিজের থালা দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আয়েশা (রা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে হেসে বললেন, ‘তোমাদের মা ঈর্ষান্বিত হয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২২৫)

এ ঘটনা আমাদের শেখায়, রাগ বা ঈর্ষার মুহূর্তে কীভাবে শান্ত থাকতে হয়। নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীর আবেগকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর আচরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, একটি সম্পর্কে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনকঠিন সময়ে মহানবী (সা.)-এর জয়ের কৌশল১১ মে ২০২৫

আয়েশার শিক্ষা ও রাসুলের প্রভাব

হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন অসাধারণ নারী। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।

সাহাবিরাও তাঁর কাছে পরামর্শ নিতেন। কিন্তু তাঁর এই মানবিক দিক—রাগ, ঈর্ষা বা মন খারাপ—তাঁকে আমাদের কাছে আরও কাছের করে তোলে। তিনি আমাদের দেখান, আবেগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার বিষয়।

রাসুল (সা.) তাঁকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর তরুণ মনকে বুঝতেন এবং তাঁর ভুলগুলো সংশোধন করতেন কোমলভাবে। যখন আয়েশা (রা.) কিছু ইহুদির প্রতি অভিশাপ দিয়েছিলেন তাঁদের অভিবাদনের ভুলের জন্য, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি কেন তাদের অভিশাপ দিলে? আমি তো শুধু তাদের অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৪৪)

মহানবী (সা.) ছিলেন সবার জন্য রহমত এবং তাঁর দাম্পত্য জীবন আমাদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে একজন রাসুল (সা.), যিনি তোমাদের কষ্টে ব্যথিত হন, তোমাদের কল্যাণের জন্য আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন০৯ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র প রক প রক শ আম দ র র জন য র গ কর করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১

আংশিক কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রদলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ৪২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নারী সদস্য রয়েছেন মাত্র ১১ জন। যা শতকরা হিসেবে তাদের অংশগ্রহণের হার মাত্র ২.৬২ শতাংশ।

এর মধ্যে, সহ-সভাপতি পদে একজন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে একজন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে একজন, মানবাধিকার সম্পাদক পদে একজন, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে একজন, ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক পদে একজন এবং সহ-ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক পদে দুইজন।

আরো পড়ুন:

বগুড়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক

কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর-তালাক, অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদে ৬০ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ৯২ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক ৬৩ জন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ৬৪ জন এবং সদস্য রয়েছেন ৬২ জন।

এর আগে, ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে মো. আলাউদ্দিন মহসিনকে সভাপতি ও আবদুল্লাহ আল নোমানকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের আংশিক কমিটি পায় চবি ছাত্রদল। এরপর নানা জটিলতা ও সাংগঠনিক স্থবিরতায় ২ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি সংগঠনটি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ৪২০ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

ছাত্রদলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একটি কমিটির মেয়াদ থাকে সর্বোচ্চ ২ বছর। সেখানে চবি ছাত্রদলের পাঁচ সদস্যের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস পর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ।

এদিকে, গত ১২ অক্টোবর চাকসু নির্বাচনের আগে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে চবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে মোহাম্মদ মামুন উর রশিদ মামুনকে সংগঠনের সদস্য পদসহ স্থায়ী বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় সংসদ। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটি শূন্য রয়েছে।

পূর্বের আংশিক কমিটিতে সভাপতি ছিলেন মো. আলাউদ্দিন মহসিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াসিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন হৃদয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও তারা একই পদে বহাল আছেন।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • কর্মদিবসের শেষ দিনে প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
  • প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
  • চবি ছাত্রদলের ৪২০ জনের কমিটিতে নারী মাত্র ১১