আয়েশা (রা.) রাগ করলে নবীজি (সা.) কী করতেন
Published: 12th, June 2025 GMT
প্রতিটি দাম্পত্য জীবনে উত্থান-পতন থাকে। এমনকি সবচেয়ে প্রেমময় সম্পর্কেও কখনো কখনো অভিমান দানা বাঁধে। কিন্তু এই মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলানো যায়, তা আমরা শিখতে পারি আমাদের প্রিয় মহানবী (সা.) এবং তাঁর স্ত্রী আয়েশা (রা.)-এর জীবন থেকে।
আয়েশা (রা.) ছিলেন রাসুল (সা.)-এর প্রিয় স্ত্রী এবং ইসলামের একজন মহান শিক্ষয়িত্রী, তিনিও মাঝেমধ্যে তাঁর স্বামীর প্রতি রাগ বা মন খারাপ অনুভব করতেন। কিন্তু তিনি কীভাবে তা প্রকাশ করতেন? আর রাসুল (সা.
আয়েশার (রা.) রাগের প্রকাশ
আয়েশা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, প্রাণবন্ত ও স্পষ্টভাষী। একটি হাদিসে আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’
আমি জিজ্ঞেস করতাম, ‘আপনি তা কীভাবে বোঝেন?’ তিনি বলতেন, ‘যখন তুমি খুশি থাকো, তখন বলো, “মুহাম্মাদের রবের কসম”, আর যখন রাগ করো, তখন বলো, “ইব্রাহিমের রবের কসম”।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২,৪৪০)
এটি একটি দাম্পত্য সম্পর্কের কোমল মুহূর্ত। আয়েশা (রা.)-এর এই হালকা রাগের প্রকাশ ছিল সূক্ষ্ম কিন্তু মানবিক। তিনি রাসুলের (সা.)নাম এড়িয়ে ইব্রাহিম (আ.)-এর নাম ব্যবহার করতেন, যা তাঁর রাগের একটি নিরীহ প্রকাশ। বোঝা গেলো, রাগ বা মন খারাপ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা হওয়া উচিত সম্মান ও সীমার মধ্যে।
আয়েশা (রা.) নিজেই বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) তাঁর মেজাজ বুঝতে পারতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল(সা.) আমাকে বলতেন, ‘আমি জানি তুমি আমার ওপর খুশি আছ নাকি রাগ করেছ।’আরও পড়ুনকীভাবে মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসব২৭ এপ্রিল ২০২৫নবীজির (সা.) অপূর্ব ধৈর্য
নবীজির (সা.) আচরণ ছিল এই গল্পের প্রকৃত শিক্ষা। তিনি স্ত্রীর রাগকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করতেন, কিন্তু কখনো তাঁকে তিরস্কার বা অপমান করতেন না। পরিবর্তে, তিনি তাঁর আবেগ বুঝতেন এবং কোমলভাবে তা সামাল দিতেন। রাসুল (সা.)–এর এই আচরণ আমাদের শেখায় কীভাবে দাম্পত্য জীবনে ধৈর্য ও সহানুভূতি বজায় রাখতে হয়।
একটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.)অন্য স্ত্রী সাফিয়া (রা.)-এর উচ্চতা নিয়ে হালকা মন্তব্য করেছিলেন। এটি ছিল একটি মানবিক দুর্বলতার প্রকাশ, কিন্তু নবীজি (সা.)তাঁকে কঠোরভাবে তিরস্কার করেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন, ‘তুমি এমন কথা বলেছ, যা সমুদ্রের পানিতে মিশলে তা বিষাক্ত করে দিত।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৮২)
এ কথায় তিনি আয়েশা (রা.)-কে তাঁর ভুলটুকু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর সম্মান বজায় রেখেছিলেন।
আয়েশা (রা.) ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।ঈর্ষার মুহূর্তে রাসুলের (সা.)কোমলতা
আরেকটি ঘটনায় আয়েশা (রা.) নবীজির (সা.) অন্য স্ত্রীর পাঠানো খাবারের থালা ভেঙে ফেলেছিলেন ঈর্ষার বশে। এটি ছিল একটি বিব্রতকর মুহূর্ত, কারণ সাহাবিরা উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু নবীজি (সা.) কী করলেন? তিনি রাগ করেননি বা আয়েশা (রা.)-কে অপমান করেননি। পরিবর্তে তিনি শান্তভাবে ভাঙা থালার টুকরো সংগ্রহ করলেন এবং নিজের থালা দিয়ে খাবার পাঠিয়ে দিলেন। এরপর তিনি আয়েশা (রা.)-এর দিকে ইঙ্গিত করে হেসে বললেন, ‘তোমাদের মা ঈর্ষান্বিত হয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫,২২৫)
এ ঘটনা আমাদের শেখায়, রাগ বা ঈর্ষার মুহূর্তে কীভাবে শান্ত থাকতে হয়। নবীজি (সা.) তাঁর স্ত্রীর আবেগকে মেনে নিয়েছিলেন। তিনি তাঁর আচরণ দিয়ে দেখিয়েছেন, একটি সম্পর্কে ভালোবাসা ও বোঝাপড়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুনকঠিন সময়ে মহানবী (সা.)-এর জয়ের কৌশল১১ মে ২০২৫আয়েশার শিক্ষা ও রাসুলের প্রভাব
হজরত আয়েশা (রা.) ছিলেন একজন অসাধারণ নারী। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেছেন, যা তাঁর অগাধ জ্ঞান ও বুদ্ধির পরিচয় দেয়। তিনি তাফসির, ফিকহ, আরবি সাহিত্য এবং ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন।
সাহাবিরাও তাঁর কাছে পরামর্শ নিতেন। কিন্তু তাঁর এই মানবিক দিক—রাগ, ঈর্ষা বা মন খারাপ—তাঁকে আমাদের কাছে আরও কাছের করে তোলে। তিনি আমাদের দেখান, আবেগ প্রকাশ করা স্বাভাবিক, কিন্তু তা নিয়ন্ত্রণ করা শিক্ষার বিষয়।
রাসুল (সা.) তাঁকে এই শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর তরুণ মনকে বুঝতেন এবং তাঁর ভুলগুলো সংশোধন করতেন কোমলভাবে। যখন আয়েশা (রা.) কিছু ইহুদির প্রতি অভিশাপ দিয়েছিলেন তাঁদের অভিবাদনের ভুলের জন্য, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছিলেন, ‘তুমি কেন তাদের অভিশাপ দিলে? আমি তো শুধু তাদের অভিবাদন ফিরিয়ে দিয়েছি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০৪৪)
মহানবী (সা.) ছিলেন সবার জন্য রহমত এবং তাঁর দাম্পত্য জীবন আমাদের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য রয়েছে একজন রাসুল (সা.), যিনি তোমাদের কষ্টে ব্যথিত হন, তোমাদের কল্যাণের জন্য আগ্রহী এবং মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১২৮)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.) যেভাবে সমালোচনা মোকাবেলা করতেন০৯ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন র প রক প রক শ আম দ র র জন য র গ কর করত ন
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ইউনূস-তারেক বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠক বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় বৈঠকের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে এই অভিমত জানিয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সময় আগামীকাল শুক্রবার সকালে লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এই বৈঠক হবে। যুক্তরাজ্য সফরে এই হোটেলেই অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
আগামীকালের বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে বিএনপির একজন প্রতিনিধি আজ তাঁদের কাছে এসেছিলেন বলে ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, কালকে নয়টার মধ্যেই ওনারা আসবেন। আসার পরে একটা ওয়ান টু ওয়ান মিটিং হবে। এই ক্ষেত্রে ওনারা যদি মনে করেন আরও কেউ থাকবে, সেটা এই দুজন লিডারই এটা ডিসাইড করবেন (সিদ্ধান্ত নেবেন)।’
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈঠক বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের সামনের রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্য উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘সামনে নির্বাচনের একটি সময় দেওয়া হয়েছে এপ্রিলে, এই মিটিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মিটিংয়ে আমরা আশা করছি যে তাঁরা এখানে আসলে কি এজেন্ডা এটা না, তাঁরা যে মিটিং করছেন এবং তাঁরা সবকিছুই আলাপ করবেন। কেননা তাঁরা একজন হচ্ছেন এখনকার ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের প্রধান, আরেকজন হচ্ছেন বাংলাদেশের লার্জেস্ট পলিটিক্যাল পার্টির (সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল) প্রধান। তাঁদের দুজনের মধ্যে আলোচনা হবে এবং তাঁরা সবকিছু নিয়ে আলোচনা করবেন।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলছিল। এর মধ্যে ঈদের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন হবে। তবে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপির নেতারা এরপরও তাঁদের ওই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
এই পরিস্থিতিতে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এই বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।