চট্টগ্রামে বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকাতে বন বিভাগ আসলে কী করছে
Published: 13th, June 2025 GMT
সারা দেশে বন্য হাতির সংখ্যা হাতে গোনা। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, এই সংখ্যা মাত্র ২৬৮টি। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া—এ তিন উপজেলায় হাতি আছে ৩৫ থেকে ৪০টির মতো। তবে গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালী উপজেলায় ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। প্রায় প্রতিবছর হাতি মারা গেলেও হাতি রক্ষায় বন বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞদের মতে, বন বিভাগের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা না থাকায় বন্য হাতির মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
বন্য প্রাণী–বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতি চলাচলের রাস্তা বা করিডর সংকুচিত হয়ে পড়া, হাতির আবাসস্থলে লোকালয় গড়ে তোলা, বনাঞ্চলে খাদ্যসংকট, বিদ্যুতের ফাঁদ বা বেড়ার এবং নানা রোগের সংক্রমণে হাতির মৃত্যু হচ্ছে। বন বিভাগ এসব ক্ষেত্রে থানায় ডায়েরি বা মামলা করেই দায় সারছে। এখন পর্যন্ত বন বিভাগ এ নিয়ে বড় কোনো প্রকল্প বা কর্মসূচি নেয়নি। বন্য প্রাণী রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হয়েও হাতির মতো বিপন্ন প্রাণী রক্ষার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এমনকি অসুস্থ হাতির শুশ্রূষারও নেই কোনো ব্যবস্থা।
বাঁশখালীতেই ১৭ হাতির মৃত্যু, বন বিভাগের ভূমিকা
চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দুটি বন রেঞ্জে গত ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে জলদী রেঞ্জে মারা গেছে ৬টি আর কালিপুর রেঞ্জে ১১টি হাতি। এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে কৃষকের পেতে রাখা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে, বনদস্যুদের আক্রমণে, ঝিরির কাদায় আটকে, পাহাড় থেকে পড়ে ও খাদ্যে বিষক্রিয়ায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতির মৃত্যু ঘটেছে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে।
দেখা গেছে, বিদ্যুতের ফাঁদ অপসারণ, এলাকার কৃষকদের সচেতন করা, হাতির আক্রমণ ঠেকাতে রেসপন্স টিম গঠনের মতো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেসব স্থায়ী হয়নি।
বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হাতি রক্ষায় বন বিভাগের কাছে প্রশিক্ষিত জনবল নেই। দুর্গম পাহাড়ে কোনো কারণে হাতি আক্রান্ত কিংবা অসুস্থ হলে সেটি নিয়ে এসে চিকিৎসা করানোর মতো ব্যবস্থা নেই। এর বাইরে বনাঞ্চলগুলোতে যথেষ্ট জলাধার না থাকায় হাতি লোকালয়ে আসে এবং আক্রান্ত হয়।
বাঁশখালীতে ১০ বছরে ১৭টি হাতির মৃত্যু উদ্বেগজনক এবং এতে স্পষ্ট হয় যে হাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ ছিল নাআমিনুল ইসলাম, বন্য প্রাণী সংরক্ষক ও প্রধান নির্বাহী, বেঙ্গল ডিসকভারবন বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাতি রক্ষার জন্য জরুরি ভিত্তিতে হাতির অভয়ারণ্যে নাগরিক সুবিধা বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বন্ধ করে দিতে হবে নতুন রাস্তা তৈরির কাজও। এর বাইরে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে দূরে রাখতে আলো বা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা প্রয়োজন। শুধু তা–ই নয়, পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড়ের আশপাশে জনসাধারণের খতিয়ানভুক্ত জমিগুলো অধিগ্রহণ করে জনসাধারণের যাতায়াত কমিয়ে আনা এবং বনাঞ্চল বৃদ্ধি করা দরকার।
হাতির ১২টি করিডরের কী অবস্থা
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে হাতির ১২টি হাতির চলাচলের পথের (করিডর) সন্ধান পায়। বাংলাদেশে হাতি চলাচলের জন্য চিহ্নিত এসব করিডরের মধ্যে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তিনটি, উত্তর বন বিভাগের পাঁচটি এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের চারটি রয়েছে।
আইইউসিএন বাংলাদেশে যে ১২ হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল সরকার সেগুলো নির্দিষ্ট করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, হাতির আবাসস্থল ও পরিবেশ টেকসই রাখতে, তাদের খাদ্য ও সুরক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি চলাচলের করিডর উন্মুক্ত রাখার প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।
বন বিভাগ জানায়, ১২ করিডরের মধ্যে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চুনতি-সাতগড় করিডর অনেকটা বন্ধ আছে। রেললাইন স্থাপনের কারণে এ করিডর দিয়ে হাতি চলাচল কমে এসেছে। ওই রেললাইনের কারণে চুনতি এলাকার হাতি চুনতিতে এবং বাঁশখালী এলাকার হাতি বাঁশখালীতে আটকা পড়েছে। এতে হাতির প্রজনন ও বংশবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বারবার একই এলাকায় হাতির প্রজনন হলে, হাতির আকার ছোট হয়ে আসে এবং ওই হাতিশাবক অপেক্ষাকৃত দুর্বল হয়। তাই সরকার স্বীকৃত ১২টি করিডরসহ অন্য করিডরগুলোতে নির্বিঘ্নে হাতি চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এসব করিডরের অনেকগুলোতেই মানববসতি গড়ে উঠেছে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পাহাড় থেকে পড়ে মৃত হাতি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র বন য প র ণ শখ ল ত স রক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।
সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।
১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।
সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।
ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।
ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।
মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধানওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।
গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।
ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪