কারও কারও চোখের পাতা কাঁপুনি বা লাফানোর সমস্যা থাকে। হঠাৎ চোখের পাতা লাফালাফি করলে অনেকে কুসংস্কারবশত খারাপ কোনো অঘটনের সঙ্গে সম্পর্কিত করেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যার নাম ‘মাইয়োকিমিয়া’। দিনে দুবার এই সমস্যার সম্মুখীন হলে তা স্বাভাবিক বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মাত্রাতিরিক্ত হয়ে দাঁড়ালে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
কারণ কী
চিকিৎসকদের মতে ছয়টি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে চোখের পাতা কেঁপে বা লাফিয়ে উঠতে পারে। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি। বাতাসের ধুলাবালু, ময়লা, রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতির সংস্পর্শে আসার কারণেও চোখ লাফাতে পারে। চোখে ভাইরাস সংক্রমণ হলেও কারও কারও চোখ লাফায়।
করণীয়
চোখের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমাতে হবে। মুঠোফোন, টেলিভিশন ও অন্যান্য ডিজিটাল পর্দায় সময় কম ব্যয় করুন। কম আলোয় চোখের কাজ করবেন না। মানসিক চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। চা-কফির পরিমাণও কমিয়ে দিন। দূষিত বাতাসের কারণে সমস্যা হচ্ছে বলে মনে হলে রোদচশমা ব্যবহার করতে পারেন। গুরুতর দৃষ্টিগত সমস্যা, পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা ও অ্যালার্জির সমস্যা দূর করতে সচেষ্ট হোন। দৃষ্টিগত সমস্যায় মানুষের চোখের জ্যোতি কমে আসতে শুরু করে। তখন জোর করে দেখতে গেলে চোখের পেশিতে চাপ পড়ে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিলে চোখের জ্যোতি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রচুর পানি পান করুন। সাত-আট ঘণ্টার গভীর ঘুম নিশ্চিত করুন। ম্যাগনেশিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি অনেক সময় চোখের পেশিকে ক্লান্ত করে দেয়। তাই চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাবেন ডাব, দুধ, ডিম, বাদাম ও মৌসুমি ফলমূল। তারপরও বারবার চোখের পাতা লাফালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
অধ্যাপক ডা.
সৈয়দ এ কে আজাদ, চক্ষুরোগবিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন, বিভাগীয় প্রধান, চক্ষুরোগ বিভাগ, আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের যত ঘুঘু
মনিরা হাঁসের (বৈকাল টিল) সন্ধানে ২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজশাহীর পদ্মা নদীতে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বটতলা ঘাট থেকে ছেড়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় আধঘণ্টায় সিমলা পার্কের উল্টো পাশের চরের কাছে আসতেই একটি ঘুঘুকে পাড়ে বসে থাকতে দেখলাম। দ্রুত একটি ছবি তুলে ওটির পরিচয় নিশ্চিত হলাম। এই দুল৴ভ পাখিটি প্রথম দেখি ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ কুয়াশাভরা সকালে হবিগঞ্জের কালেঙ্গা বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে। এরপর ২০১৮ সালের ২৬ জানুয়ারি সুন্দরবনের করমজলে।
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর কাছ থেকে ভালো ছবি তোলার আশায় ধীরে ধীরে নৌকা পাখিটির কাছাকাছি নিতে থাকি। তবে নৌকা যতই কাছে যাক না কেন, সেটি কিন্তু অবিচল—একটুও নড়ছে না, চুপচাপ বসে আছে। কৌতূহলবশত নৌকা থেকে পাড়ে নামলাম, পাখিটির একদম কাছে চলে গেলাম। এরপর সেটি ধীরে ধীরে হাঁটা শুরু করল। আমরাও পিছু নিলাম। কিছুক্ষণ পর অনেকটা অনিচ্ছায় উড়াল দিল পাখিটি।
ঘুঘু পাখি কবুতরের মতো একই গোত্র কোলাম্বিডির (কপোত) সদস্য। ঘুঘুর দেহ কবুতরের মতোই তুলনামূলক ভারী, মাথা ছোট, চঞ্চু ও পা খাটো। ওড়ার পেশি শক্তিশালী। তাই দ্রুত ও দীর্ঘক্ষণ উড়তে সক্ষম। লেজ হাতপাখার মতো বিস্তৃত। তবে আকারে কবুতরের চেয়ে ছোট হয়। এরাও স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষ পিত্তথলিতে উৎপন্ন ক্ষীরের মতো অর্ধতরল দুধ খাইয়ে ছানাগুলোকে বড় করে তোলে, যা ‘পায়রা বা ঘুঘুর দুধ’ নামে পরিচিত। এদেশে এই গোত্রের যে ১৮টি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে ১০টি কবুতর ও ৮টি ঘুঘু রয়েছে। প্রায় অর্ধেকের বেশি প্রজাতি সারা বছর প্রজনন করে। আয়ুষ্কাল চার থেকে ছয় বছর। এখানে এ পাখির সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
রামঘুঘু (ওরিয়েন্টাল টার্টল ডাব): ফিচারের শুরুতে লালচে বাদামি বর্ণের যে ঘুঘুর গল্প বললাম, সেটি এ দেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি রাম, কইতর বা গোলাপ ঘুঘু। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার বহু দেশে এর দেখা মেলে। প্রাপ্তবয়স্ক ঘুঘুর দেহের দৈর্ঘ্য ৩৩ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার। ওজন ১৬৫ থেকে ২৭৪ গ্রাম।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় উড়ন্ত ধবল ঘুঘু