সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে সাতক্ষীরার এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় নোয়াখালীর এক কিশোরীর (১৭)। সেই পরিচয় গড়ায় প্রেমে। সেই সূত্রে মেয়েটিকে ফুঁসলিয়ে ঢাকায় আনে কথিত প্রেমিক। যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে আটকে চালানো হয় সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। পরে ওই কিশোরীকে বিক্রি করে দেওয়া হয় দেহব্যবসায়ী চক্রের কাছে। মাসখানেক পর উদ্ধার হয়েছে মেয়েটি। 

করুণ পরিণতির শিকার ওই কিশোরী এখন নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। সপ্তাহখানেক আগে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তাকে ঢাকার জুরাইন এলাকা থেকে উদ্ধার করে। আজ রোববার দুপুরে মেয়েটির মা সুধারাম মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দম আইনে মামলা করেন। এতে দু’জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম।

মেয়েটি নোয়াখালী সদরের একটি ফাজিল মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার স্বজনেরা জানায়, টেলিগ্রামে কিশোরীর সঙ্গে পরিচয় হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মজবুখালী গ্রামের এক তরুণের (২০)। এর সূত্র ধরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১৭ মে সকালে নোয়াখালীর মাইজদী থেকে মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে যায় কথিত প্রেমিক। এ সময় তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ দেড় লাখ টাকা নিয়েছিল সে। দু’জন যাত্রাবাড়ীর একটি আবাসিক হোটেলে ওঠে।

মেয়েটি জানায়, ঢাকা যাওয়ার পর পানি চেয়েছিল সে। তার কথিত প্রেমিক চেতনানাশক মেশানো পানি দিলে সে পান করে জ্ঞান হারায়। এ সময় সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়। চেতনা ফিরে দেখতে পায়, তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। মোবাইল ফোন ফেরত চাইলে নির্যাতন শুরু হতো। তার কথিত প্রেমিক বন্ধুদের নিয়ে দিনে ৭-৮ বার ধর্ষণ করেছে। এভাবে ২১ দিন চলার পর তাকে বিক্রি করে পালিয়ে যায় ওই তরুণ। 

যে চক্রের কাছে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়, সেখানে আরেক তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। তার মা জানান, একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় ঢাকার জুরাইন থেকে ১৫ জুন বিকেলে মেয়েকে উদ্ধার করেন। তিনি মেয়ের ওপর নির্যাতনকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান।

সুধারাম থানার ওসি কামরুল ইসলামের ভাষ্য, ভুক্তভোগী কিশোরী মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করে। সাতক্ষীরার ওই ছেলের সঙ্গে টেলিগ্রামে প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে ধর্ষণ ও দেহ ব্যবসায়ী চক্রের কাছে বিক্রির অভিযোগ পেয়েছেন। এ বিষয়ে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাক্সিম গোর্কির আবাসস্থলে

মস্কোর আকাশে আজ মেঘ ঘনিয়েছে। সকাল থেকেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। এমনিতে গরমকাল, তবে বৃষ্টি পড়ার কারণে ঠান্ডা জাঁকিয়ে বসছে। মস্কোতে আমার দিনগুলো উড়ে উড়ে পার হয়ে যাচ্ছে। অল্প দিন হাতে আছে রাশিয়ায়। এর মাঝে কত কিছু যে দেখার বাকি!

আমি এসেছিলাম আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বাড়িতে। রাশিয়ার বিখ্যাত এই লেখক পাঁচবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েও পুরস্কার জেতেননি। এমন অসামান্য লেখকের প্রাসাদতুল্য বাড়ির সামনে এসে দেখি দুয়ার তালাবদ্ধ। আজ আর দুয়ার খুলবে না। দোতলা এই বাড়িটিতে লেখক জীবনের শেষ কয়েক বছর বসবাস করেছিলেন। বাড়ির সামনে প্রশস্ত আঙিনা। সেখানে উঁচু উঁচু গাছ অন্য পাশ থেকে বাড়িকে ঢেকে দিয়েছে। বাড়ির চারপাশ পাঁচিল দিয়ে ঘেরা।

প্রাচীন এই বাড়ির আশপাশে ঘুরেফিরে আবার ফিরে গেলাম। আজ তিনি দুয়ার না খুললে কাল নিশ্চয়ই খুলবেন। রাশিয়ার অন্যান্য বিখ্যাত লেখকের বাড়ির মতো তাঁর বাড়িটিকেও মিউজিয়াম করে রাখা হয়েছে। ঊনবিংশ শতকে রাশিয়ায় জনপ্রিয়তা পেলেও আমাদের বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে তিনি আজ অবধি সবচেয়ে জনপ্রিয় রুশ লেখক।

আগের দিন লেখকের হাউস মিউজিয়াম বন্ধ ছিল। তাই দুয়ার থেকে ফিরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু আমি হচ্ছি বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী ধরনের মানুষ। এত সহজে এ বাড়ি না দেখে আমি মস্কো ছাড়ব না।

আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভের বয়স যখন চব্বিশ তখন এক পত্রিকায় লেখা পাঠানোর সময় আলেক্সেই লেখকের নামে নিজের নাম লেখেন ‘ম্যাক্সিম গোর্কি’। রুশ ভাষায় ম্যাক্সিম শব্দের অর্থ—তিক্ত। জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর তিক্ততার স্বাদ অল্প বয়সে গ্রহণ করায় তিক্ত নামেই পরবর্তীকালে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন।

আলেক্সেই মাক্সিমোভিচ পেশকভ ১৮৬৮ সালে রাশিয়ার নিঝনি নভোগরদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এগারো বছর বয়সে অনাথ হয়ে যাওয়ার পর দিদিমা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে রাখেন। কিন্তু বারো বছর বয়সে বাড়ি ছেড়ে পালান। এরপর বছর পাঁচেক রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ান। কখনো পেট চালানোর জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কাজ করতে হয়েছে। পথেই থাকতে হয়েছে। এ সময়ে আলেক্সেই মুচির কাজও করেছিলেন।

ম্যাক্সিম গোর্কির বাড়ি

সম্পর্কিত নিবন্ধ