ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বেশ অগ্রগতি দেখছে জামায়াত
Published: 22nd, June 2025 GMT
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী বেশ অগ্রগতি দেখছে বলে জানিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, গত দু–তিন দিনে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে বেশ অগ্রগতি হয়েছে এবং অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।’
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনয়নের পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মেয়াদ, সংরক্ষিত নারী আসনের কাঠামো ও শর্তাবলি এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনেকটা একমত হওয়ার কথাও জানান জামায়াত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। আজ রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধানমন্ত্রী একজন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর জীবদ্দশায় সর্বোচ্চ ১০ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন—এ বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি দল এটি সমর্থন করেছে। দু–একটি ছোট দল ভিন্নমত জানালেও বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আরও আলোচনা করবে বলেছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য দুটি—একটি হলো ক্ষমতার মেয়াদ সীমিত করা এবং অন্যটি হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। এই দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা মেয়াদসংক্রান্ত ঐকমত্যে পৌঁছেছি।’
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে তারা তিনটি বিষয়—সাম্য, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদাকে সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে সংযোজিত করতে চান। তাঁরা এটার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আর ১৫তম সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করে ৫ম সংশোধনীকে পুনর্বহাল করার কথা বলেছেন।
জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের সময় সংবিধান সংশোধনীতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম ও আল্লাহর ওপরে বিশ্বাস এবং পূর্ণ আস্থা কথাটি ছিল। সেটির সঙ্গে এই নতুন চারটি পয়েন্ট যোগ করার ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। এ বিষয়ে কিছু কিছু দল, বিশেষ করে যারা বাম ঘরনার, তারা আপত্তি জানিয়েছে। এটা খুব স্বাভাবিক। তারা তো দল হিসেবে সে রকম একটা ফিলোসফিতে (দর্শনে) বিশ্বাস করে। কিন্তু আমরা মনে করি, বাংলাদেশের মেজর (প্রধান) রাজনৈতিক দল যেগুলো আছে, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য সব ইসলামিক দল এবং আও অনেকগুলো দল এটার সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রোববারের আলোচনায় অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদ, গণসংহতিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হলে জোট হতে পারে: সারজিস আলম
আগামীর বাংলাদেশ এবং জনগণের স্বার্থ সামনে রেখে যদি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে নির্বাচনী জোট হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ নগরের একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। এনসিপির কমিটি গঠন উপলক্ষে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বলেন, ‘যদি তারা (রাজনৈতিক দল) জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একমত থাকে, বিচারিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একমত থাকে, যদি তারা বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী এবং আওয়ামী ফ্যাসিস্টবিরোধী তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে পারে—এ বিষয়গুলোতে যদি আমরা ঐকমত্য হতে পারি, তাহলে জনগণের স্বার্থে অ্যালায়েন্স (নির্বাচনী জোট) হতে পারে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চলমান, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আগামী নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং নিজেদের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে জানিয়ে সারজিস আলম বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে যদি প্রতিটি ওয়ার্ডে এনসিপির আহ্বায়ক কমিটি থাকে, তাহলে ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারবেন। কমিটি গঠনের বিষয়ে কাজ চলছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপি নেতা সারজিস আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবং তাদের যারা দোসর জাতীয় পার্টি, তাদেরও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কোনো অধিকার নেই। এই জাতীয় পার্টির কত বড় সাহস, এই জিএম কাদেররা এবং এঁদের যারা সাঙ্গপাঙ্গ আছে, এরা যে খুনিদের দোসর এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ওই খুনিদের মদদদাতা, তার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়। তারা যখন বলে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না! তাদের জন্মদাতা যে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ যে তাদের পেলেপুষে বড় করেছে, এর প্রমাণ তারা আবার নতুন করে দিচ্ছে। তাদের জাত চেনাচ্ছে। এই খুনিদের আগামীর বাংলাদেশের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার অধিকার নেই।’
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নে সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আমাদের শাপলা প্রতীক দিতে গিয়ে তারা তাদের জায়গা থেকে একটি লম্বা সময় স্বেচ্ছাচারিতা করেছে এবং কোনো আইনগত বাধা না থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে শাপলা না দিয়ে শাপলা কলি দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমাদের জায়গা থেকে আহ্বান করব, তারা যদি ওই একই ধরনের আচরণ আগামী দিনে করে, তাহলে তাদের ওপর আস্থার সংকট তৈরি হবে। আমরা চাই, তারা সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তাদের প্রতিষ্ঠানের স্বাধীন যে সাংবিধানিক অবস্থা, তা যেন বজায় রাখে। তারা যেন পূর্বের মতো কোনো দলীয় নির্বাচন কমিশনে পরিণত না হয়। যদি কারও ভেতর এমন চিন্তা বা চেষ্টা থাকে, তাহলে তাদের পরিণতি তাদের পূর্বসূরিদের মতো হবে।’
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারোয়ার, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলম প্রমুখ।