‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি বাদ দিয়ে অন্য কিছু যোগ করলে তর্ক থাকবে না: হাসনাত কাইয়ূম
Published: 22nd, June 2025 GMT
সংবিধানের মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র বদলে কাছাকাছি ভিন্ন কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক এড়ানো যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।
আজ রোববার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে হাসনাত কাইয়ূম এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে এই বৈঠক শুরু হয়।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘আলোচনা এই পর্যায়ে এসেছে যে আগের মূলনীতিগুলো অটুট থাকবে আর এর সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মূলনীতি যুক্ত হবে নাকি আগের চার মূলনীতিকে বাদ দিয়ে নতুন চার মূলনীতি হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা নিয়ে যতটা আপত্তি আছে, শব্দটার কনটেন্ট নিয়ে সে রকম আপত্তি নেই। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দের বদলে “ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি” লেখার পরে ধর্মনিরপেক্ষতা অনুচ্ছেদের মধ্যে যা কিছু আছে, সেটা নিয়ে কোনো তর্ক থাকবে না।’
একই ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘আমরা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পজিশন (মেয়াদ) চাই। কিন্তু কেউ যদি সরাসরি ১০ বছরের কথা আনেন, এখানে ফাঁকি থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে উপসংহার টানার সময় অভিন্ন কী শব্দ ব্যবহার করা যায়, সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব।’
সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘এই মূলনীতি বিশেষ কোনো দলের, এমনটি মনে করি না। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সব দল একমত ছিল। তাই ওই চার মূলনীতিতে একমত ছিলাম, এখনো অনড় আছি।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, উচ্চ পরিষদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, এনসিসি কীভাবে গঠিত হচ্ছে এবং সংরক্ষিত ১০০ নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়টি প্যাকেজ আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এটিকে প্যাকেজ আকারে বিবেচনা করতে সম্মত নয়। নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য হয়েছে: জহির উদ্দিন স্বপন
বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা ও বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া উপজেলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় সংকটের বিকল্প কোনো সমাধান নেই। কিন্তু একটি চিহ্নিত মহল এই ঐকমত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বানচালের অপচেষ্টা করছে।
ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মঙ্গলবার দুপুরে বিজয় মিছিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জহির উদ্দিন এ কথাগুলো বলেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে জহির উদ্দিন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অনুকরণে বিএনপির কেউ যদি গডফাদার সংস্কৃতির প্রবর্তন করতে চায় তাদের চিহ্নিত করে দল এবং আইনের মুখোমুখি করার জন্য আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নকে আমরা মোকাবিলা করবই।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহীদুল্লাহ, সদস্যসচিব মো. মিজানুর রহমান খান, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন অঙ্গরাজ্যের নিউ ইংল্যান্ড সিটি বিএনপির সভাপতি সৈয়দ বদরে আলম প্রমুখ।
বিজয় মিছিল উপলক্ষে সকাল থেকে গৌরনদী শহীদ মিনার চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দুপুরে শুরু হয় বিজয় মিছিল। মিছিলে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া দুই উপজেলার দলীয় নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।
এক নেতার মৃত্যু, অসুস্থ ১০
বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মিরাজ ফকির (৪৬) নামের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আরও অন্তত ১০ জন নেতা-কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের গৌরনদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সভায় যোগ দিতে আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন থেকে অন্য নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ছোট যানবাহনে রওনা হন স্থানীয় বিএনপি নেতা মিরাজ ফকির। পথে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মো. মুনীম জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মিরাজের মৃত্যু হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
মিরাজ আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ছিলেন। পাশাপাশি তিনি রাজিহার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন।
মিরাজ ফকিরের মৃত্যুতে জহির উদ্দিন শোক প্রকাশ করে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
একই দিন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে প্রচণ্ড গরম ও রোদে অন্তত ১০ জন নারী ও পুরুষ নেতা-কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসক মুনীম জানান, অসুস্থ সবার চিকিৎসা দেওয়া হয় বহির্বিভাগে।