সংবিধানের মূলনীতিতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র বদলে কাছাকাছি ভিন্ন কোনো শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্ক এড়ানো যাবে বলে মনে করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম।

আজ রোববার বিকেলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শেষে এক ব্রিফিংয়ে সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে চলমান বিতর্ক নিয়ে হাসনাত কাইয়ূম এসব কথা বলেন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল মাল্টিপারপাস হলে এই বৈঠক শুরু হয়।

হাসনাত কাইয়ূম বলেন, ‘আলোচনা এই পর্যায়ে এসেছে যে আগের মূলনীতিগুলো অটুট থাকবে আর এর সঙ্গে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের তিন মূলনীতি যুক্ত হবে নাকি আগের চার মূলনীতিকে বাদ দিয়ে নতুন চার মূলনীতি হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো ঐকমত্য হয়নি।’

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটা নিয়ে যতটা আপত্তি আছে, শব্দটার কনটেন্ট নিয়ে সে রকম আপত্তি নেই। এ জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দের বদলে “ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি” লেখার পরে ধর্মনিরপেক্ষতা অনুচ্ছেদের মধ্যে যা কিছু আছে, সেটা নিয়ে কোনো তর্ক থাকবে না।’

একই ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘আমরা দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পজিশন (মেয়াদ) চাই। কিন্তু কেউ যদি সরাসরি ১০ বছরের কথা আনেন, এখানে ফাঁকি থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের বিষয়ে উপসংহার টানার সময় অভিন্ন কী শব্দ ব্যবহার করা যায়, সেটির ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেব।’
সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে রুহিন হোসেন বলেন, ‘এই মূলনীতি বিশেষ কোনো দলের, এমনটি মনে করি না। বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতির বিষয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা ছাড়া সব দল একমত ছিল। তাই ওই চার মূলনীতিতে একমত ছিলাম, এখনো অনড় আছি।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, উচ্চ পরিষদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, এনসিসি কীভাবে গঠিত হচ্ছে এবং সংরক্ষিত ১০০ নারী আসনে নির্বাচনের বিষয়টি প্যাকেজ আকারে উত্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এটিকে প্যাকেজ আকারে বিবেচনা করতে সম্মত নয়। নির্দিষ্ট বিষয়ে নির্দিষ্ট আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্রিফিংয়ে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মোস্তাক হোসেন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে আশার আলো দেখছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি আশার আলো দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আশা রাখছি সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটা নির্বাচন হবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘গত ১০ মাসে বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে আমরা একটু সন্দিহান হয়ে পড়েছিলাম যে শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে। আমরা অত্যন্ত অনুপ্রাণিত হয়েছি, আশ্বস্ত হয়েছি। যখন আমরা দেখলাম এ আন্দোলনের প্রধান দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস একটা সভা করলেন। সভায় তাঁরা কতগুলো বিষয়ে একমত হলেন। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের সকলের কাছে আশা সামনে এনে দিয়েছে। আশা রাখছি সামনের ফেব্রুয়ারি মাসে একটা নির্বাচন হবে। এর মধ্য দিয়ে আমাদের আশাগুলো পূরণের সুযোগ হবে।’

আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকার ভালো কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘তাঁরা শুরু করেছেন, নিঃসন্দেহে তাঁরা ইতিমধ্যে অনেক কাজ করেছেন এবং ভালো কাজ করছেন, আমাদের পথ দেখাচ্ছেন। আমরা আশা করব, যে সকল রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, সবাই মিলে তাঁদের সহযোগিতা করব।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন সংস্কারকাজ এগিয়ে চলেছে, কতগুলো বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি, কতগুলো বিষয়ে একমত হচ্ছে না। যতগুলো বিষয়ে আমরা একমত হব, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করব। আর যেগুলোতে একমত হওয়া যাচ্ছে না, সেগুলো নিয়ে নির্বাচনের পর সংসদে আমরা আলোচনা করব। সেগুলোতে আমরা একমত হব।’ শুধু কথা বা আলোচনার মাধ্যমে সংস্কারের এই বিশাল কাজ সম্ভব হয় না বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।

আগামীকাল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। সে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই তরুণদের প্রতি আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাঁদের নেতৃত্ব আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছর, আলোচনায় ঐকমত্য হয়নি
  • ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রিত্ব নয়, বিএনপির নারাজি
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল একমত: জোনায়েদ সাকি
  • ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বেশ অগ্রগতি দেখছে জামায়াত
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে বিএনপিসহ তিনটি দল ছাড়া সবাই একমত: আলী রীয়াজ
  • প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল নিয়ে তিনটি দল ছাড়া সবাই একমত: আলী রীয়াজ
  • এভাবে চলতে থাকলে কেয়ামত পর্যন্ত ঐক্যের সম্ভাবনা নেই : নুরুল হক নুর
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকে আশার আলো দেখছে বিএনপি: মির্জা ফখরুল
  • ‘আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয়’