নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন ভূঞাকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ডাউকি গ্রামের মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আহত রোকন উদ্দিন ভূঞা ওই গ্রামের আলাল উদ্দিনের ছেলে। এলাকাবাসী, পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় রোকন উদ্দিন বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি ইজিবাইকে সান্দিকোনা বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। ডাউকি গ্রামের মসজিদের সামনে পৌঁছালে প্রতিপক্ষের আলা বক্সের ছেলে তাইজ্জত আলীর নেতৃত্বে মাসুদ মিয়া, রাকিব উদ্দিনসহ কয়েকজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে রোকন উদ্দিনের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। তাঁরা রোকন উদ্দিনের শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করেন। স্থানীয় লোকজন ছুটে এলে হামলাকারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যান। পরে রোকন উদ্দিনকে উদ্ধার করে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

রোকন উদ্দিনের এক স্বজন বলেন, কিছুদিন আগে রোকনের ভাতিজা সজীব মিয়ার সঙ্গে রাকিব উদ্দিনের তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে স্থানীয় লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করেন। তিনি ধারণা করছেন, এর জেরে এ হামলা হয়েছে।

ডাউকি গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, রোকন উদ্দিনের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর স্বজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা তাইজ্জত আলীর বাড়িতে হামলার প্রস্তুতি নেন। এ সময় জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল ইসলাম ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে শান্ত করেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
তাইজ্জত আলী ও রাকিব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এ হামলা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি কি নিছক প্রতীকী অর্জন

দশকের পর দশক ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘের হলগুলোতে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে এবং জনগণের প্রতিবাদ-সমাবেশে প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তবে যে কথাটি সব সময় উপেক্ষিত থেকে গেছে, সেটি হলো স্বীকৃতি শুধু একটি প্রেস রিলিজের শব্দ বা কূটনীতির নথিতে লেখা লাইন নয়। এটি ফিলিস্তিনিদের আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় আইনগত মর্যাদা দেয়, চুক্তি ও সংস্থার দরজা খুলে দেয় এবং তাদের কণ্ঠস্বরকে বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী করে। 

প্রতিটি নতুন স্বীকৃতি একধরনের প্রতীকী ও নৈতিক অর্জন। এটি ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘ লড়াইকে আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে দৃশ্যমান করে। তবে অভিজ্ঞ ফিলিস্তিনিরা জানেন, কথাগুলো কখনো কখনো দোষ ঢাকার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাঁরা জানেন, কেবল স্বীকৃতি দেওয়া গাজার বোমাবর্ষণ থামায় না, পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ করে না বা জেরুজালেমের অবরোধ তুলে দেয় না। 

এ ক্ষেত্রে এক মৌলিক প্রশ্ন সামনে আসে: স্বীকৃতির পেছনে কি সত্যিই আন্তরিক সদিচ্ছা আছে? এটি কি বাস্তব পরিবর্তন চাওয়া পদক্ষেপ, নাকি কিছু পশ্চিমা রাজধানীর দায় এড়ানোর কৌশল মাত্র? 

পশ্চিমা কোনো সরকার খুব সহজেই বলতে পারে: ‘আমরা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছি।’ সংক্ষিপ্ত এই বাক্যটি জনমনের চাপ কমায়, মিডিয়াকে সন্তুষ্ট করে এবং রাজনৈতিক অগ্রগতির ছাপ দেয়। এ ক্ষেত্রে স্বীকৃতি একটি রাজনৈতিক সেফটি ভলভের মতো কাজ করে। এটি জনমনের চাপ কমায়, মিডিয়াকে সন্তুষ্ট করে, অগ্রগতির ছাপ দেয়, কিন্তু মূল নীতি অপরিবর্তিত থাকে। এটি এমন, যেন রোগীকে ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মূল রোগের চিকিৎসা হচ্ছে না। 

তবু এই ‘ব্যথানাশক’ ফিলিস্তিনের বৈধতার রেকর্ডে একটি পয়েন্ট যোগ করে। স্বল্পমেয়াদি হলেও, যদি ফিলিস্তিনিরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এটি কাজে লাগায়, তবে তা দীর্ঘ মেয়াদে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে। 

বছরের পর বছর ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের পর বহু পশ্চিমা রাজধানী আজ অদ্ভুত অবস্থায় রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি সহমর্মিতার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তারা জনগণের ক্রোধের মুখোমুখি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফিলিস্তিন স্বীকৃতি পশ্চিমাদের জন্য এমন একটি সুযোগ হিসেবে আসে, যাতে তারা নিজেদের আবার ‘সৎ মধ্যস্থতাকারী’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইনের রক্ষক’ হিসেবে দেখাতে পারে। 

কিন্তু সমীকরণ এখানে স্পষ্ট। এখানে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমাদের বক্তব্য যতটা শক্তিশালী, তাদের কাজ ততটাই সীমিত। তারা নানা কনফারেন্সে ‘দুই রাষ্ট্র সমাধান’ নিয়ে বারবার কথা বলে কিন্তু তার সঙ্গে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ (যেমন ইসরায়েলের আচরণ অনুযায়ী সামরিক সহায়তা বা অর্থনৈতিক সম্পর্ক সমন্বয়) নেওয়া হয় না। ফলে এই স্বীকৃতি কেবল একধরনের সাজানো ছবি হয়ে থাকে। এটি অনেকটা ফাটল ধরানো দেয়ালে কোনো সুন্দর ছবি ঝুলিয়ে দেওয়ার মতো। ছবিটি ফাটল ঢেকে দেয়, জায়গাটা দেখতেও সুন্দর হয়; কিন্তু দেয়ালের ফাটল সারাই করে না। 

বাস্তব পার্থক্য তখনই আসে, যখন স্বীকৃতির সঙ্গে যুক্ত হয় স্পষ্ট নীতি ও কর্মসূচি। ফিলিস্তিনে গড়ে ওঠা ইসরায়েলি বসতিতে উৎপাদিত পণ্যের অর্থনীতিকে ইসরায়েলি অর্থনীতির বাকি অংশ থেকে আলাদা করা, ইসরায়েলের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ফিলিস্তিনের মামলা সমর্থন করার মাধ্যমে এই স্বীকৃতিকে অর্থবহ করা সম্ভব।

 এই পদক্ষেপগুলো স্বীকৃতিকে কেবল কূটনৈতিক অলংকার নয়, বরং সত্যিকারের প্রভাবশালী হাতিয়ারে পরিণত করতে পারে। 

অনেকে ভাবতে পারেন, ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি পাওয়াকে ইসরায়েল ভয় পায়। কিন্তু বাস্তবতা জটিল। এই ধরনের অন্তঃসারশূন্য স্বীকৃতি ইসরায়েলের স্বার্থেও কাজ করতে পারে। কারণ, এগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ছাপ দেয়, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকে। এ ধরনের স্বীকৃতির পর মনে হতে পারে, ফিলিস্তিন বুঝি রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলি বসতির সম্প্রসারণ, অবরোধ, নিপীড়ন আগের মতো চলতে থাকে। 

তবে এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনিদের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে কিছু সুযোগও তৈরি করে। তার পক্ষে যত স্বীকৃতি জমা হয়, তত নতুন আইনগত ও রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়। যেমন ফিলিস্তিনিদের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া সহজ হয়, তাদের ঐতিহাসিক বর্ণনা শক্তিশালী হয়, বসতি ও অন্যান্য বিষয়ে অর্থনৈতিক ও আইনগত দাবি করার পথ খুলে যায়। ঠিক এই কারণে ইসরায়েল স্বীকৃতিকে শুধু প্রতীকী ও ঝুঁকিমুক্ত কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে। 

এ কারণে আজ খালি প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বাস্তব কাজ দরকার। বসতির সম্প্রসারণ বন্ধ করা, অবরোধ প্রত্যাহার ও দোষীদের দণ্ড নিশ্চিত করা দরকার। এটি করা গেলে স্বীকৃতি হয়ে উঠতে পারে ন্যায়, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতার পথে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। 

ড. ইব্রাহিম হামামি মিডল ইস্ট মনিটর–এর নিয়মিত কলাম লেখক


মিডল ইস্ট মনিটর থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাপলা প্রতীক না পেয়ে সারজিস বললেন, নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেবেন
  • শাপলা প্রতীক না দিলে নির্বাচন কীভাবে হয় দেখে নেব: সারজিস
  • ফিলিস্তিনের এই স্বীকৃতি কি নিছক প্রতীকী অর্জন