কার ‘গুনা’য় বরগুনা এখন ডেঙ্গুর ‘রাজধানী’
Published: 25th, June 2025 GMT
বরগুনা এখন ডেঙ্গুর রাজধানী। শহরের কোনো কোনো মহল্লাকে ডেঙ্গুপাড়ার তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভাড়াটেরা নিরাপদ অঞ্চল খুঁজছেন। গাজার মতো বরগুনা পৌর এলাকায় নিরাপদ অঞ্চল বলে কিছু নেই। ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গায়।
চলতি বছরের শুরু থেকে গত মঙ্গলবার ১৭ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৬ হাজার ৪৬৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মারা গেছেন ৩০ জন। চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীদের ২৩ শতাংশ রাজধানী ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছেন। আর বাকি ৭৭ শতাংশই রাজধানীর বাইরে। এককভাবে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে বরিশাল বিভাগে।
দক্ষিণাঞ্চলের এই বিভাগে এ পর্যন্ত রোগী ২ হাজার ৯৮০ জন। এর মধ্যে বরগুনায় ১ হাজার ৮৩২ ও বরিশাল জেলায় ৫৭৫ জন। রাজধানীতে ১৭ জন আর রাজধানীর বাইরে ১৩ জন মারা গেছেন। শুধু বরিশাল বিভাগেই ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত বছর বিভাগে ৮ হাজার ৪৫৭ জন হাসপাতালে এসেছিলেন। এর মধ্যে বরগুনারই ছিলেন ২ হাজার ৩৬৭ জন। এক হিসাবে বলা হয়েছে, দেশের মোট আক্রান্তের ৪৫ শতাংশই বরিশাল বিভাগের। এ বিভাগের বরগুনায় দেশের মোট আক্রান্তের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বরগুনা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অন্য রোগীদের চিকিৎসা গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তার ওপরে আছে প্রকট চিকিৎসক-সংকট। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় হয়ে পড়েছে।
কেন বরগুনানদীর মালা গলায় নিয়ে বড় হতে থাকা বরগুনা পৌর এলাকা এবং সদর উপজেলা ১৯০৪ সালের আগেও ছিল বিষখালী নদীপাড়ের এক অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি। পরে ১৯০৪ সালে আমতলী থানা থেকে আলাদা করে বরগুনাকে একটি স্থায়ী থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৯ সালে বরিশাল জেলা থেকে পটুয়াখালী জেলা তৈরির সময় সেই থানা বরগুনাকে এক ধাপ প্রমোশন দিয়ে বানানো হয় মহকুমা। বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা, আমতলী ও বরগুনা সদর থানা নিয়ে হয় নতুন মহকুমা। সেই মহকুমায় কোনো পৌরসভা ছিল না। ছিল না কোনো পৌরসেবা। ‘গ’শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে বরগুনা সদরে পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালে।
এর মধ্যে মহকুমার মোহ কাটিয়ে রাতারাতি সব মহকুমাকে জেলা বানিয়ে দেওয়া হয়। ১৯ জনের জায়গায় চাকরি হয় ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের। সেই হিড়িকে ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি বরগুনা মহকুমা হয়ে যায় জেলা। জেলা সদরের পৌরসভাকে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভা বলতে ইজ্জতে লাগে, তাই সেটিকে প্রমোশন দিয়ে ১৯৯৫ সালে প্রথমে ‘খ’ শ্রেণিতে এবং ১৯৯৯ সালে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত করা হয়।
ধনী বেয়াইয়ের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য লুঙ্গির ওপরেই মরহুম বড় চাচার আচকান চড়ানোর মতো অবস্থা। অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি আর থানা সদরের অবকাঠামোয় চলতে থাকল জেলা সদর। আশপাশের জনপদ থেকে মানুষ আসতে থাকল বরগুনা সদরে কাজের আশায় ঠিকাদারি ব্যবসা উকালতি মাস্টারির আশায়।
প্রায় ১৫ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভায় ৩২ হাজার ২৩৫ জন (২০১১ জনশুমারি) মানুষের বসবাস। বরগুনা পৌরসভার অভ্যন্তরে পাকা ও কাঁচা মিলে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার ড্রেন থাকলেও বৃষ্টি এবং জোয়ারের কারণে শহরের অধিকাংশ ওয়ার্ডে পানি জমে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুম ছাড়াও শুকনো মৌসুমেও জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।
মানচিত্র দেখলে অনুমান করা যাবে নদীঘেরা একটা সম্ভাবনাময় জনপদকে অপরিকল্পিত রাস্তা আর গলিপথ দিয়ে কীভাবে মুড়ে ফেলা হয়েছে। নদীকে বানানো হয়েছে ভাগাড়। পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর এবং হরিণঘাটা ছাড়াও আছে, খাকদোন, টিয়াখালী নদী, টিয়াখালী দোন, বগীরখাল, বেহুলা নদী, চাকামাইয়া দোন, নিদ্রাখাল এবং আমতলী নদী। যে জনপদের চারদিকে এত খাল, নদী, দোন সেখানে পয়োনিষ্কাশন আর জলাবদ্ধতা কেন গলার কাঁটা হবে?
একে তো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অনুপস্থিতি, পানি নিকাশের ভঙ্গুর অবস্থা তার ওপরে শহরজুড়ে চলছিল পাল্লা দিয়ে উঁচু উঁচু বাড়ি তৈরির বেরহম প্রতিযোগিতা। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর সেটার দৌড় একটু কমলে সেটা আবার ডেঙ্গুবাহক মশার জন্য শাপেবর হয়ে যায়। ফুল/হাফ পরিত্যক্ত এসব নির্মাণাধীন ইমারত মশার খামারে পরিণত হয়।
বরগুনার গোদের ওপর বিষফোড়া হয়েছে যথাযথ পরামর্শ আর নিবিড় নজরদারি ছাড়ায় ঘরে ঘরে বিনা মূল্যে পানির ট্যাংক বিতরণ।
এটা প্রথম নজরে পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গবেষক ড.
এ রকম এক প্রকল্পের নাম ‘উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে পানি সরবরাহ’। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর আওতাধীন এ প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা।
১০টি জেলার (গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা) ৪৪টি উপকূলীয় উপজেলার ২২২টি ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য দুই লাখ পরিবারকে পানির ট্যাংক সরবরাহ করার কথা। প্রতিটি ট্যাংকের পানি ধারণক্ষমতা ৩ হাজার লিটার। গত দুই অর্থবছরে এ প্রকল্পের ২১৮ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতির হার ৩৫ শতাংশ। বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, পাথরঘাটা ও বামনাতে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। কীটতত্ত্ববিদ শিক্ষক গবেষক কবিরুল বাশার অবৈজ্ঞানিক পন্থায় এসব পানির ট্যাংক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন অনেক আগেই।
মশার খাসলত বদলবিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহর পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, ‘মশার আচরণগত সব পরিবর্তন হয়ে গেছে। উপসর্গও পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসার ধরনও পরিবর্তন হয়েছে। ডেঙ্গুর পাশাপাশি এখন চিকনগুনিয়াও শুরু হয়েছে।’
আগে বলা হতো দিনের বেলায় এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু ছড়ায়। সে স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে, দিনে চলাফেরা করে। এখন রাতদিনের বালাই নেই। আর শুধু এডিস নয়, অন্য মশাও ডেঙ্গু ছড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে। ঢাকা বা বড় বড় নগরীর বাইরের মশা অ্যালবোপিকটাস আগে ডেঙ্গু ভাইরাসবাহী ছিল না। এখন হদিস মিলছে যে তারাও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। তা ছাড়া এডিস ইজিপ্টা এখন আর নগরীতে বন্দী নেই অর্থাৎ দুই জাতের মশা এখন ডেঙ্গু বহনের কাজ করছে।
লবণাক্ত পানিতে এডিস মশার বিস্তারের প্রমাণ মিলেছে। গত সাড়ে পাঁচ মাসে বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু সংক্রমণ সর্বোচ্চ হওয়ার একটা কারণ এটাও হতে পারে বলে মনে করছেন কীটতত্ত্ব ও অণুপ্রাণবিশেষজ্ঞরা। সেখানে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে মৃত্যুও। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল বলছেন, ‘এ প্রবণতা গত বছরও ছিল।’
গত ২৪ এপ্রিল নেচার ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে উপকূলীয় এলাকায় নতুন আতঙ্কের নাম উঠছে নোনাপানির মশা। সমুদ্রের নোনাপানি ও নদীর মোহনায় জন্ম নেওয়া এসব মশা রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে মিঠাপানির মশার চেয়েও ভয়ংকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘এডিস মশার সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি স্বচ্ছ পানিতে জন্মে। লবণাক্ত পানিতে এডিস মশা জন্মানোর কথা নয়। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের লোনাপানিতে এডিস মশার অভিযোজনের বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশাসহ সব প্রাণীর মধ্যেই একধরনের অভিযোজনক্ষমতা তৈরি হয়। লোনাপানিতে জন্ম ও ভাইরাস বহনের ক্ষেত্রে মশাও সহনশীল হয়ে উঠেছে।’ (নোনাপানি সহনশীল হচ্ছে এডিস মশা, ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে উপকূলবাসী ১৫ জুন, ২০২৫ বণিক বার্তা)
লোনাপানিসহনশীল এডিস মশার কারণে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা আর ঢাকার বাইরের মশার প্রকৃতি এক হবে না। আবার মিঠাপানি ও নোনাপানির মশার বৈশিষ্ট্যও এক হবে না। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রকে কাজ শুরু করতে হবে। আমাদের দেশের ভাইরাস প্রতিরোধ ও মশা নিধন পদ্ধতি অনেক ত্রুটিপূর্ণ। এ পদ্ধতিতে মশা ও ভাইরাস কোনোটাই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নোনাপানির মশা নিয়ন্ত্রণেও যদি ভুল পদ্ধতি প্রয়োগ হয়, তাহলে দেশের মশক ব্যবস্থাপনা লেজেগোবরে হয়ে উঠবে।’
শিশুবিশেষজ্ঞ শফিউদ্দিন মোয়াজ বলেন, দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আগামী জুলাইয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়া পাওয়া যাচ্ছে। টেস্ট করলে নেগেটিভ, কিন্তু রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত। এ জন্য ‘আর্টিফিশিয়াল’ টেস্ট করা প্রয়োজন। শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুর চারটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে তেমন আতঙ্কের কিছু নেই। দ্বিতীয়বারও ভাইরাসের একই ধরনে আক্রান্ত হলেও ভয়ের কিছু নেই। তবে কেউ যদি প্রথমবার একটি ধরন এবং দ্বিতীয়বার ভিন্ন ধরনে আক্রান্ত হয়, তাহলে মৃত্যুঝুঁকি রয়েছে।
উপায়বরগুনার জন্য
• দেশের প্রায় অর্ধেক ডেঙ্গু রোগী যেহেতু বরগুনায়, তাই জরুরি ভিত্তিতে সেখানে ‘হটস্পট ম্যানেজমেন্ট’ প্রয়োজন। এর মানে হলো, যেই বাড়িতে ডেঙ্গু রোগী আছে, সেই বাড়ির চারপাশে ২০০ মিটারের মধ্যে ধোঁয়া দিয়ে লার্ভিসাইড করার মাধ্যমে সব মশা মেরে ফেলতে হবে। যেখানে এখনো ডেঙ্গু ছড়ায়নি, সেসব জায়গায় লার্ভিসাইডিং করে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
• কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, পূর্ণাঙ্গ মশা মারার চেয়ে তা লার্ভা থাকা অবস্থায় নির্মূলের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সহজ। কিন্তু সেদিকে আমাদের নজর কম।
• চিকিৎসাসেবা দানকারীদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। প্রশিক্ষণার্থী নার্স এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দল গঠন করে বরগুনার চিকিৎসক–সংকট দূর করা যায়।
• নির্মাণাধীন সব ভবনে পানি জমা বন্ধ করতে হবে এই কাজে স্কাউট, ক্যাডেট কোর এবং সিপিপির স্বেচ্ছাসেবী তরুণদের দলকে দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
• যাঁরা ট্যাংকে পানি ধরে রাখছেন, তাঁরা যেন পানির পাত্রগুলো ঢেকে রাখেন। এ বিষয়ে তাঁদের জানাতে হবে। পাত্রের ঢাকনা একটু ফাঁক থাকলে এডিস মশা ঢুকে ডিম পাড়বে। ফলে সেই বাড়িতে ডেঙ্গু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে যায়।
• সিটি করপোরেশনের বা পৌরসভার দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের ঘরের আঙিনা নিজেই পরিষ্কার রাখা উচিত। বাসাবাড়ি, ছাদ, নির্মাণাধীন ভবনে জমাটবদ্ধ পানি নিজেদের পরিষ্কার করতে হবে।
সারা দেশের জন্য
• মৃত্যুঝুঁকি কমানোর জন্য ভাইরাস নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করা প্রয়োজন। কেউ যদি আগে থেকে জানতে পারে এবার ভাইরাসের কোন টাইপের প্রকোপ বেশি বা কোন এলাকায় কোন টাইপ ছড়াচ্ছে, তাহলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু প্রতিরোধ করা যাবে। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা কমানোর জন্য প্রয়োজন বিস্তর গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত। সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে।
• জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে চিকিৎসাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ না হলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমানো সম্ভব না। বর্তমান চিকিৎসাব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। কোনো ব্যক্তি জ্বরে আক্রান্ত হলেই যেন তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে পারেন যে তার ডেঙ্গু হয়েছে কি না। এ জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকসহ পরীক্ষাব্যবস্থা মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে যেতে হবে। সরকার যদি ডেঙ্গুর চিকিৎসাব্যবস্থা প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চপর্যায়—এই তিন ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা দেয়, তাহলে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ও মৃত্যুহার কমানো সহজ হবে।
• ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রোটোকল নিয়মিত বিরতিতে হাল নাগাদ এবং তা চিকিৎসকদের ধারাবাহিকভাবে অবহিত করতে হবে।
• জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেনসহ অনেকেই সঠিকভাবে মনে করেন, হাসপাতালে ভর্তির বাইরেও প্রচুর রোগী রয়েছেন, যাঁদের শনাক্ত করা হচ্ছে না। সঠিক রেকর্ড রাখতে হবে। প্রতিরোধ কার্যক্রমের ঘাটতি এ রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, ডেঙ্গুর ব্যাপারে আমাদের অবহেলা পাহাড়সম অথবা সিরিয়াসনেসের অভাব আছে। মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকা দপ্তর আর আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা দপ্তরের মধ্যে কার্যকরী সমন্বয় খুবই জরুরি। নীতিনির্ধারকদের অলসতা আর অসচেতনতায় ডেঙ্গু ক্রমেই বিধ্বংসী হয়ে উঠছে। এ বিষয়ে কারও ডাকের অপেক্ষায় না থেকে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিগুলোয় তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের অংশগ্রহণ ছাড়া মশা নির্মূলে সাঁড়াশি অভিযান সফল হবে না।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায়ও প্রয়োজনে পরিবর্তন এনে ডেঙ্গুর বিভিন্ন ধরন বিনাশে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ধারাবাহিক গবেষণায় মনোযোগী হতে হবে।
গওহার নঈম ওয়ারা গবেষক। মেইল: [email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল ব ভ গ প রকল প র বরগ ন র বরগ ন য় ব যবস থ উপক ল য় র প রসভ র জন য এল ক য় র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। হলগুলোতে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কোনো ধরনের রাজনীতি করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন ঘোষণায় ছাত্রনেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। ইতিমধ্যে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনসহ শিক্ষার্থীদের নানা পর্যায়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না–থাকা নিয়ে আলোচনা চলছে।
গত শুক্রবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবাসিক হলে রাজনীতি বন্ধের ওই ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল শনিবার দিনভর এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি। এ বিষয়ে করণীয় ও রূপরেখা ঠিক করতে গতকাল দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত হল প্রভোস্টসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বৈঠক করেছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আজ রোববার বিকেলে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন তাঁরা।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের জন্য সংগঠনটির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে। এরপর ওই দিন মধ্যরাতে হলে রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। বিভিন্ন হল থেকে কয়েক শ ছাত্র–ছাত্রী বাইরে বেরিয়ে আসেন। রাত একটার দিকে শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা। শুক্রবার রাত দুইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তাঁদের সঙ্গে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা হয়। তখন উপাচার্য বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই হল প্রভোস্টের নেওয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘হল পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে।’ উপাচার্যের এ বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা ‘না, না’ বলে আপত্তি জানান এবং হলগুলোতে সম্পূর্ণভাবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করেন। পরে রাত তিনটার দিকে বিক্ষোভের মুখে প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদ হলগুলোতে ‘প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি’ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে উল্লাস প্রকাশ করে হলে ফিরে যান। প্রক্টরের ওই ঘোষণার আধঘণ্টা পর স্যার এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অফিস থেকে এক প্রজ্ঞাপন আসে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের কমিটিভুক্তরা পদত্যাগ ও মুচলেকা প্রদান সাপেক্ষে হলে অবস্থান করতে পারবেন। অন্যথায় তাদের হল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিল ছাত্রলীগ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই দিন পর ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয় ছাত্রলীগ। সে সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিটি হলের হল প্রাধ্যক্ষদের কাছ থেকে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে—এমন বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর নেয়। মূলত সেই বিজ্ঞপ্তির আলোকে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করায় ক্ষোভ জানায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার প্রতিবাদে শুক্রবার মধ্যরাতে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে এসে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করেন