নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নতুন চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার
Published: 29th, June 2025 GMT
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আজিজ আল কায়সার। তিনি আজিম উদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। গতকাল শনিবার বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যবসায়ী আজিজ আল কায়সার বর্তমানে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অনেক দূর এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সবার কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারণে। আমি এই প্রতিষ্ঠানকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। যেন এটি বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।’
আজিজ আল কায়সারের নেতৃত্বে এনএসইউ আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্বাভাবিক দ্রুততায় লালদিয়া পানগাঁও টার্মিনালের চুক্তি
চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য বন্দরের সঙ্গে ডেনমার্কের মালিকানাধীন এপিএম টার্মিনালসের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হবে আজ সোমবার। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এদিন সকালে এই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। অস্বাভাবিক দ্রুততায় এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
একই দিন বিকেলে একই স্থানে ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল নিয়েও চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। পানগাঁও নৌ টার্মিনাল ২২ বছর মেয়াদে পরিচালনার জন্য সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএর হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি হবে ৩৩ বছর মেয়াদি। এই মেয়াদ আরও ১৫ বছর বাড়ানোর সুযোগ থাকছে চুক্তিতে। এপিএম টার্মিনালস ডেনমার্কের মালিকানাধীন হলেও এটির নিবন্ধন নেদারল্যান্ডসে।
লালদিয়ার প্রকল্পে বাংলাদেশের পক্ষে মধ্যস্থতাকারী (ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার) বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) প্রতিবেদনে টার্মিনাল অপারেটরের (এপিএম টার্মিনালস) প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর চুক্তি পর্যন্ত কার্যক্রম শেষ করতে ৬২ দিন সময়সীমা ধরা হয়েছিল। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ অস্বাভাবিক দ্রুততায় মাত্র দুই সপ্তাহে এই কার্যক্রম শেষ করেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হলেও সে সময় তাড়াহুড়া ছিল না। স্বাভাবিক গতিতে এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। তবে ৪ নভেম্বর এপিএম টার্মিনালস লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দাখিলের পরই অস্বাভাবিক দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেয় বন্দর ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।
লালদিয়া চুক্তি৪ নভেম্বর: এপিএম টার্মিনালসের প্রস্তাব দাখিল।
৫ নভেম্বর: কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন।
৬ নভেম্বর: আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন।
৯ নভেম্বর: বন্দর ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে নেগোসিয়েশন। (৭–৮ নভেম্বর ছুটির দিনে নেগোসিয়েশন হয়েছে বলে অভিযোগ)
৯ নভেম্বর: বন্দর বোর্ড সভায় অনুমোদন।
১০–১১ নভেম্বর: নৌপরিবহন ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন।
১২ নভেম্বর: অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় অনুমোদনের সুপারিশ।
১৬ নভেম্বর: প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদন।
১৬ নভেম্বর: এপিএম টার্মিনালসকে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান
১৭ নভেম্বর: চুক্তির দিন।
পানগাঁও নৌ টার্মিনাল চুক্তি:
৬ নভেম্বর: কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা।
৯ নভেম্বর: আর্থিক মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন জমা।
১০ নভেম্বর: বন্দর থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়।
১৭ নভেম্বর: চুক্তির দিন।
বন্দরের বিষয়ে অভিজ্ঞ দুজন ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, এই ধরনের চুক্তি খুব সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হয়। কারণ, চুক্তির কোনো শর্তের কারণে দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত না হলে পরে তার খেসারত দিতে হতে পারে। যার বড় উদাহরণ রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জিবুতিতে। সেখানে ২০০৪ সালে একটি টার্মিনাল নির্মাণে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে জিবুতির যে চুক্তি হয়, তার শর্তগুলো ছিল অপারেটরের অর্থাৎ ডিপি ওয়ার্ল্ডের পক্ষে। পরে জিবুতি সরকার চুক্তি বাতিল করলেও ডিপি ওয়ার্ল্ড আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালত জিবুতি সরকারকে সুদসহ ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ এবং স্বত্ব বাবদ আরও ১৪৮ মিলিয়ন ডলার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
যেভাবে অস্বাভাবিক দ্রুততায় চুক্তিজানা গেছে, ৪ নভেম্বর এপিএম টার্মিনালস কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব দাখিল করে। ৫ নভেম্বর প্রস্তাবের কারিগরি মূল্যায়ন করা হয়। আর ৬ নভেম্বর আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের পর ওই দিনই শুরু হয় দর–কষাকষি। বন্দর সূত্র জানায়, সরকারি ছুটির মধ্যে ৭ ও ৮ নভেম্বর শুক্র ও শনিবার দর–কষাকষি শেষ হয়। তবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, ৯ নভেম্বর দর–কষাকষি শেষ হয়েছে।
একই দিন বন্দরের বোর্ড সভায় এ–সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সভায় অনুমোদনের পর সারসংক্ষেপ একই দিন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরদিন তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আর ১২ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই প্রস্তাব তোলা হলে তা অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় অনুমোদনের সুপারিশে গতকাল রোববার চূড়ান্ত অনুমোদনে দেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর এপিএম টার্মিনালসের কাছে চুক্তির জন্য লেটার অব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় গতকালই। লেটার অব অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পর চুক্তির জন্য সাধারণত দুই সপ্তাহ সময় থাকে। অথচ এ ক্ষেত্রে এক দিনের কম সময়ে চুক্তি হতে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
পানগাঁও চুক্তিও দ্রুত হচ্ছেলালদিয়ার মতো পানগাঁও নৌ টার্মিনালের চুক্তিও দ্রুত সময়ে হচ্ছে। ৬ নভেম্বর পানগাঁও নৌ টার্মিনালের কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন জমা দেয় এ–সংক্রান্ত কমিটি। এরপর ৯ নভেম্বর আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়ন করা হয়। পরদিন তা অনুমোদনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। গতকাল পর্যন্ত দরপত্রের অন্যান্য ধাপের প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। অর্থাৎ কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নের এক থেকে দেড় সপ্তাহের মাথায় সব প্রক্রিয়া শেষ করে চুক্তি হচ্ছে।
এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য মেডলগ এসএ ১০৮ কোটি টাকার আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে দর-কষাকষিতে করে তা প্রায় ১২১ কোটি টাকায় চূড়ান্ত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ২০১৩ সালে ১৫৬ কোটি টাকায় এই টার্মিনাল গড়ে তোলে।
তাড়াহুড়ায় সন্দেহলালদিয়ার দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তির সব বিষয় প্রকাশ করার সুযোগ নেই। কারণ, এতে ‘নন–ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট’ অর্থাৎ গোপনীয়তা বজায় রাখার অংশ রয়েছে। চুক্তির কতটুকু প্রকাশ করা হবে আর কতটুকু প্রকাশ করা হবে না, তা জানা যাবে চুক্তির দিন।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, গোপনীয়তা ও তাড়াহুড়া করে এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ। এই চুক্তি জনগণের প্রতি গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দায়িত্ব নেওয়া সরকারের চরম বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলার মতো জরুরি বিষয় বাদ দিয়ে বন্দর নিয়ে সরকারের তাড়াহুড়া সন্দেহ তৈরি করে। এতে বোঝা যায়, বিদেশি কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা কমিশনভোগীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
অবশ্য চুক্তি নিয়ে নৌপরিবহন উপদেষ্টা গত সপ্তাহে বন্দরে পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের বলেছেন, দেশের ক্ষতি করে কাউকে বন্দরের কোনো টার্মিনাল দেওয়া হবে না। চুক্তির পর চুক্তির বিষয়ে জানা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।