সামাজিক ব্যবসা বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে
Published: 29th, June 2025 GMT
সামাজিক ব্যবসা এখন শুধু একটি ধারণা নয়, এটা বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শুধু ব্যক্তিগত মুনাফা নয়, মানব কল্যাণ ও টেকসই ভিত্তির ওপর পুনর্নির্মাণ করতে হবে। আজ রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) প্রধান মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ সকালে এনএসইউ মিলনায়তনে এনএসইউ ও ইউনূস সেন্টার যৌথভাবে ‘সোশ্যাল বিজনেস একাডেমিয়া ডায়ালগ’ ও ‘থ্রি জিরোজ ক্লাব কনভেনশন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এর আগে গত শুক্রবার সাভারের জিরাবো সামাজিক কনভেনশন সেন্টারে দুই দিনের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসা সর্বোত্তম পন্থা’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের ‘সোশ্যাল বিজনেস ডে’ পালন করা হচ্ছে।
আজকের সেমিনারে ভিডিও বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এই সংলাপ একটি বিশেষ আয়োজন যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তরুণ মেধাবী গবেষক, শিক্ষক ও শিল্পসংশ্লিষ্ট পেশাজীবীরা একত্রিত হয়েছেন। সামাজিকভাবে সচেতন বিশ্ব গড়ার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা একত্রিত হয়েছেন। এই লক্ষ্য থ্রি জিরোজ বা তিনটি শূন্যকে কেন্দ্র করে: শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। এই সময়ে সামাজিক ব্যবসা আর শুধু একটি ধারণা নয়, এটি এখন একটি বৈশ্বিক আন্দোলনে রূপ নিয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চিরস্থায়ী কিছু নয়। আমরা এটি পুনর্গঠন করতে পারি এমন একটি ব্যবস্থায় যা ব্যক্তিগত মুনাফার ওপর নয়, বরং মানব কল্যাণ ও টেকসই পৃথিবী নির্মাণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। সামাজিক ব্যবসা এমন একটি কাঠামো, যার মাধ্যমে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনএসইউ ভবিষ্যতেও সৃজনশীল চিন্তক ও সামাজিক উদ্যোক্তা তৈরি করবে, যারা চ্যালেঞ্জকে সুযোগে রূপান্তর করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, বিশ্ব এখন নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মধ্যে। কয়েক মাস আগেও বাংলাদেশের সব মানুষ সড়কে নেমে এসেছিল সমাজ পুনর্গঠনে। এক হাজারের বেশি মানুষ তাঁদের প্রিয়জন হারিয়েছেন। বিশ্বে প্রতিদিন যুদ্ধের মধ্যে হাজার হাজার শিশু ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। সামাজিক সচেতনতার মাধ্যমে মানবকল্যাণকেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমাদেরকে থ্রি জিরো লক্ষ্য পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গবেষণা করার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, সামাজিক ব্যবসা জানায় কীভাবে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে, কীভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাবে। এই ব্যবসায় মুনাফা সমাজের ক্ষমতাশালীদের পকেটে চলে যায় না। তিনি বলেন, আরও মানবিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ বলেন, এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য বিশ্বব্যাপী অগ্রাধিকারের সঙ্গে সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের দর্শনকেও ধারণ করে। এসডিজি ও থ্রি জিরোজ নিয়ে তরুণেরা সমস্যা সমাধানে প্রস্তাব করবেন আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তরুণদের প্রস্তাবই আগামী দিনের নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনায় স্থান পাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নিযামী গঞ্জাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের কো-চেয়ার এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইসমাইল সেরাগেলদিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কী বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবে তা যথাযথভাবে চিহ্নিত হয় না। বাংলাদেশে এখন শক্তিশালী নতুন কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন নৈতিক ও কৌতূহল মন। শুধু অর্থ উপার্জন নয়, দরকার সামাজিকীকরণ। অধ্যাপক ইউনূসের ধারণা নিয়ে দরিদ্রদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
আরেক বিশেষ অতিথি নরওয়ের পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ও ইউএন এনভায়রনমেন্ট-এর সাবেক নির্বাহী পরিচালক এরিক সোলহেইম বলেন, অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশকে সামাজিক ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। বাংলাদেশের জন্য সময় এখন একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জের ও বড় সুযোগের। সোলার সিস্টেম, বায়ো সিস্টেমকে কাজে লাগানোর সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের।
অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ও সিটি ব্যাংক পিএলসি’র চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, বিশ্ব এখন নজিরবিহীন জটিলতার সম্মুখীন। সমস্যা সমাধানে দরকার নতুন চিন্তাভাবনা। তরুণেরাই হবেন বাংলাদেশের আগামী দিনের স্থপতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, পুঁজিবাদের প্রথাগত বাধার সামনে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে সামাজিক ব্যবসা তিন দশক ধরে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করছে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এনএসইউর অ্যাকাউন্টিং ও ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এফ জে মোহাইমেন এবং ইংরেজি ও আধুনিক ভাষা বিভাগের চেয়ারম্যান নাজিয়া মানজুর।
অনুষ্ঠানটি শেষ হয় তিনটি কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে: এনএসইউ সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার, এনএসইউ সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি সেন্টার এবং এনএসইউ ক্লাইমেট অ্যান্ড ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্স সেন্টার। এই কেন্দ্রগুলোর যাত্রা এনএসইউর শিক্ষাগত উৎকর্ষ ও সামাজিক প্রভাব তৈরির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় অনুষ্ঠানে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স শ য ল ব জন স স ম জ ক ব যবস অন ষ ঠ ন ব যবস থ লক ষ য ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নতুন চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) বোর্ড অব ট্রাস্টিজের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন আজিজ আল কায়সার। তিনি আজিম উদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন।
আজ শনিবার বোর্ডের বার্ষিক সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ব্যবসায়ী আজিজ আল কায়সার বর্তমানে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পারটেক্স স্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আজিজ আল কায়সার বলেন, ‘নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি অনেক দূর এগিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে সবার কঠোর পরিশ্রম ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বের কারণে। আমি এই প্রতিষ্ঠানকে আরও উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। যেন এটি বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার একটি কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।’
আজিজ আল কায়সারের নেতৃত্বে এনএসইউ আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হান্নান চৌধুরী।
১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি দেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।