কোরআনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে ‘কোরআন জার্নালিং’
Published: 23rd, July 2025 GMT
নিয়মিত কোরআন পাঠ করেন, এমন কাউকে আমরা যখন জার্নালিং করেন কি না জিজ্ঞাসা করি, প্রথমেই তাঁরা অবাক হন। অনেকে বিষয়টি বুঝতেই পারেন না ‘কোরআন জার্নালিং’ কী?
কোরআন জার্নালিং হলো আপনার একটি ব্যক্তিগত নোটবুক, যেখানে আপনি কোরআনের আয়াত থেকে শিক্ষা, অনুভূতি ও বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার উপায় লিখবেন। এটি কোরআনের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরির এক অসাধারণ মাধ্যম।
যাঁরা কোরআনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে চান, অথচ নিয়মতান্ত্রিক মাদ্রাসায় ভর্তি হওয়ার সময় বের করতে পারেন না, তাঁদের জন্য এটি একটি অনন্য উপায় হতে পারে। একটা ছোট কোরআন নোটবুক রাখুন। এটা আপনার জীবন বদলে দেবে। নোটবুকের সঙ্গে সঙ্গে সমৃদ্ধ হবে আপনার জীবন।
কোরআন জার্নালিং হলো আপনার একটি ব্যক্তিগত নোটবুক, যেখানে আপনি কোরআনের আয়াত থেকে শিক্ষা, অনুভূতি ও বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করার উপায় লিখবেন।কীভাবে? যখনই কোরআন পড়বেন, তখন অর্থগুলোও ৫ থেকে ১০ মিনিট মন দিয়ে পড়ুন। যেখানে চোখ আটকে যাবে বা হৃদয় বিগলিত হয়ে অশ্রু ঝরবে, সে শব্দগুলো লিখে রাখুন। একই সঙ্গে এ সময় নিজের জীবনের যে ঘটনাগুলো মনে পড়বে, তা–ও লিখুন। আল্লাহর কোন প্রতিশ্রুতি শুনে শান্তি লাগছে, লিখে রাখুন।
কোরআনের কথাগুলো লিখে রাখুন থেরাপির মতো। এর মাধ্যমে যে হেদায়েত আপনি পাবেন, সেটা অন্য কোথাও পাবেন না।
আরও পড়ুনকোরআন কেন আরবি ভাষায়২৭ মে ২০২৫কীভাবে শুরু করবেনযদি মনে হয় আপনি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাহলে কোরআন জার্নালিং শুরুর এখনই আদর্শ সময়। অথবা নিজেকে আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করার চ্যালেঞ্জ নিন, যা আপনাকে আল্লাহর প্রতিশ্রুতির ওপর ফোকাস করতে উৎসাহিত করবে। আল্লাহর কথা আপনাকে এই অন্ধকার সময়ে সঙ্গ দেবে এবং শেষ পর্যন্ত নিশ্চয় আলোর পথ দেখতে পাবেন।
এমন হলে সবচেয়ে ভালো হয় সুরা দুহা দিয়ে জার্নালিং শুরু করলে। এই সুরার মাধ্যমে আপনি আশাবাদ ও আল্লাহর প্রতি ভরসার গুরুত্ব শিখতে পারবেন। সুরাটি হজরত মুহাম্মদ (সা.
‘আখিরাত তোমার জন্য এই দুনিয়ার চেয়ে অনেক ভালো।’ (আয়াত: ৪)
‘তিনি কি তোমাকে অভাবী পাননি এবং তারপর তোমার অভাব পূরণ করেননি?’ (আয়াত: ৮)
কোরআন জার্নালিংয়ের উপকারিতাকঠিন সময়ে আমরা প্রায়ই প্রশ্ন করি, ‘কেন আমার সঙ্গে এটা হচ্ছে’, ‘আল্লাহ কি আমাকে ভুলে গেছেন’, ‘আমি কীভাবে এটি অতিক্রম করব?’ কোরআন জার্নালিং আপনাকে ভবিষ্যতের জন্য আশা, সাফল্যে আস্থা ও আল্লাহর সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণের কথা মনে করিয়ে দেবে। কোরআন জার্নালিং শুধু নোট করা নয়, এটি শক্তি, নিরাময় ও ব্যক্তিগত বিকাশের উৎস। সাধারণত যে উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়, তা হলো—
প্রথমত, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়। যদি আপনি মাঝেমধ্যে কোরআনের তাফসিরে চোখ বোলান, তা হলে আপনার পড়া আয়াতগুলো বুঝতে ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে জার্নালিং সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, কঠিন সময়ে জার্নালিং আপনাকে দুঃখ–কষ্টের মধ্যে পথ খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
তৃতীয়ত, আপনার চিন্তাভাবনাকে আরও গভীর করবে এবং আপনাকে ধৈর্য ধরতে ও কৃতজ্ঞ থাকতে শেখাবে।
আরও পড়ুনঅর্থ বুঝে কোরআন পড়া ও বিশ্লেষণের গুরুত্ব০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কোরআন জার্নালিংয়ের পদ্ধতিজার্নালিংয়ের অনেক উপায় থাকতে পারে, তবে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো—
শুরুটা হোক সৃজনশীল: একটি শিরোনাম পৃষ্ঠা তৈরি করুন, তাতে সুরা বা আয়াতের নাম সুন্দরভাবে লিখুন।
পড়া ও গবেষণা: একটি ছোট সুরা বা আয়াতের অংশ পড়ুন, এটি কোথায়, কখন ও কেন নাজিল হয়েছিল, তা জানার চেষ্টা করুন।
হৃদয়গ্রাহী আয়াত: এমন একটি আয়াত বেছে নিন, যা আপনার হৃদয় স্পর্শ করে। আয়াতটি লিখুন এবং আয়াতের অর্থ সম্পর্কে সামান্য ভাবুন।
চিন্তাভাবনা প্রকাশ: আয়াতটি আপনাকে কী শেখাল, এবার তা লিখুন। আপনার জীবনের সঙ্গে কীভাবে আয়াতের অর্থ মিলে যাচ্ছে, সেটাও লিখুন।
দোয়া দিয়ে শেষ: শেষ করার আগে সব সময় দোয়া করুন, যেন আল্লাহ তাঁর রহমত দিয়ে আপনাকে পথ দেখান।
জার্নালিং থেকে শেখা কয়েকটি পাঠএখানে জার্নালিং থেকে পাওয়া কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা শেয়ার করছি—
১. ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা: কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরুন এবং কৃতজ্ঞ থাকুন। কৃতজ্ঞতার গাছই ইতিবাচক ফল দেয়। ‘আল্লাহ কীভাবে উপমা দেন, তা কি দেখ না? একটি পবিত্র কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উঁচু, যা তার রবের ইচ্ছায় সব সময় ফল দেয়।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২৪)
আরও পড়ুনকোরআন বোঝা কি কঠিন০২ মে ২০২৫একটি পবিত্র কথা এমন একটি ভালো গাছের মতো, যার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উঁচু, যা তার রবের ইচ্ছায় সব সময় ফল দেয়।সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২৪২. কঠিন সময়ের আসমানি ব্যাখ্যা: আমার দুঃখ–কষ্ট শত বছর আগে কোরআনে আলোচিত হয়েছে। ‘আল্লাহ কোনো ব্যক্তির ওপর তার সাধ্যের বাইরে বোঝা চাপান না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬)
৩. আল্লাহর ওপর ভরসা: আল্লাহর ওপর ভরসা রাখলে তিনি অপ্রত্যাশিত উৎস থেকে সাহায্য পাঠান। ‘যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, আল্লাহ তার জন্য পথ বের করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করেনি।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ২–৩) ‘আমি আমার বিষয় আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। আল্লাহ তার বান্দাদের সম্পর্কে সব জানেন।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৪৪)
৪. পছন্দের স্বাধীনতা: আল্লাহ আমাদের পছন্দ করার স্বাধীনতা দিয়েছেন এবং দেখেন, আমরা কীভাবে তা ব্যবহার করি। ‘মানুষ কি মনে করে, তারা বলবে “আমরা বিশ্বাস করেছি” এবং তাদের পরীক্ষা করা হবে না?’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ২)
৫. কষ্টকে শক্তির পথ হিসেবে দেখা: কষ্ট মানে পিছিয়ে পড়া নয়; বরং শক্তির দিকে একটি পদক্ষেপও হতে পারে। ‘তিনি মহিমান্বিত, যিনি সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে রাখেন; যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য, কে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১–২)
কোরআন জার্নালিং হলো আল্লাহর কথার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ার একটি সুন্দর উপায়। এটি আমাদের ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা ও আশাবাদ শেখায় এবং কঠিন সময়ে শক্তি দেয়। এখনই এই যাত্রা শুরু করে আপনি আল্লাহর সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে আরও গভীর করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের কোরআনের আলোয় জীবনযাপনের তৌফিক দিন। আমিন।
সূত্র: মুসলিম ম্যাটার্স
আরও পড়ুনসহজে কোরআন বোঝার পাঁচটি কৌশল০৩ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রআন জ র ন ল এমন একট ক রআন র আল ল হ র জন য র জ বন র ওপর আপন ক ন একট আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে বকেয়া বেতন ও কারখানা চালুর দাবিতে ঢাকায় শ্রমিকদের ‘ভুখা মিছিল’
গাজীপুরে বন্ধ হয়ে যাওয়া উইনটেক্স গ্লোভস কারখানা পুনরায় চালু ও শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনের ১৭তম দিনে রাজধানীতে ভুখা মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকেরা।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিজয়নগরের শ্রম ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পল্টন, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর হয়ে পুনরায় শ্রম ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন আন্দোলনরত শ্রমিকেরা।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সমাবেশে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. রুহুল আমিন বলেন, ১৫ জুন বেআইনিভাবে কারখানা বন্ধ করা হয়। পরদিন ১৬ জুন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের ডিআইজি, জেলা প্রশাসক এবং পরে শ্রম উপদেষ্টা ও শ্রমসচিবকে দুইবার লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চাওয়া হয়। আজ (বুধবার) ১৭তম দিন যাবৎ শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান আন্দোলনের পর অদ্যাবধি তাঁরা কোনো উদ্যোগ নেননি, এমনকি শ্রমিকদের সাথে কথাও বলেননি, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কাজী মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে শ্রমিকদের সুসম্পর্কের পরিবর্তে মুখোমুখি দাঁড়ানো কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
সমাবেশে অন্য বক্তারা বলেন, অতীতের সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকার যদি মালিক পুষে শ্রমিক মারার পথ অনুসরণ করে, তাহলে এর পরিণতি হবে ভয়াবহ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উইনটেক্স গ্লোভস শ্রমিক-কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক মো. তুহিন এবং সঞ্চালনা করেন শ্রমিকনেতা জালাল হাওলাদার। আরও বক্তব্য দেন শ্রমিকনেতা মুর্শিকুল ইসলাম শিমুল, সেকেন্দার হায়াত, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।