মতিউর রহমান:

আপনার বিভিন্ন ভাইবোনের বিভিন্ন লেখায় আমরা পাই, তিনি গাছের চারা লাগাতেন আপনাদের ধানমন্ডির বাসায়। আমগাছ, ফুলগাছসহ অন্যান্য গাছ তিনি নিজে পরিচর্যা করতেন, নিড়ানি দিতেন। এভাবে গাছের ও পশুপাখির যত্ন নিতেন। এটাও দেখা যায় যে আপনার বোনদের নিয়ে তিনি চিড়িয়াখানায় গেলেন পশুপাখি দেখাতে। যে কথা আপনি বলছিলেন যে প্রকৃতির প্রতি.

..

শারমিন আহমদ: আমরা যখন সকালে হাঁটতাম আব্বুর সাথে, রাস্তার কুকুরগুলোকে আব্বু ঘরে নিয়ে যেতেন। রিমি একটু ভয় পেত। আমি আর আব্বু মিলে ওগুলোকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে খাওয়াদাওয়া করাতাম। আমাদের বাসায় পাঁচ-ছয়টা কুকুর দেখাশোনা করা হতো। ওরাই আমাদের সঙ্গী হতো, খেলা করত। আমার মনে হয়, সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সার্বিকভাবে সবার কষ্ট বুঝতে পারেন—একটা সমাজে এমনকি একটা কুকুর, বিড়াল বা পাখির কষ্টও যিনি হৃদয়ে ধারণ করেন মানুষের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি। তিনিই প্রকৃত অর্থে একজন ভালো নেতা।

আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।মতিউর রহমান:

আমরা দেখি যে সাধারণ জীবনযাপনের পাশাপাশি তিনি তখন যেকোনো সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকতেন। প্রবীণ ও তরুণদের কাছে নিয়মিত যেতেন, কথাবার্তা বলতেন এবং ছোট-বড় যেকোনো কাজে যুক্ত হতেন। এভাবে তিনি একটা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। আমরা দেখলাম, তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপর সাধারণ সম্পাদক। তিনি হঠাৎ কারও প্রভাবে, অর্থবলে বা অন্য কোনোভাবে কিন্তু নেতা হয়ে ওঠেননি। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর ডায়েরিগুলো দেখলে কিন্তু এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা তাঁর পাঁচটি ডায়েরি প্রকাশ করেছি এখন পর্যন্ত। তাঁর রাজনৈতিকভাবে গড়ে ওঠার পেছনে আপনার কোনো মন্তব্য বা পর্যালোচনা থাকলে বলতে পারেন।

শারমিন আহমদ: আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।

এখানে আমি একটা বুলবুলি পাখির মৃত্যুর কথাই বলি। আমার বইয়ে উল্লেখ আছে, ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড় যখন হলো, আমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ আশ্রয় পেল। ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের পরে। তখন আমাদের বাড়ির বাইরে ঝোলানো টবের মধ্যে মানিপ্ল্যান্টে একটা বুলবুলি পাখি বাসা বেঁধেছিল। আব্বু সব সময় পাখিটাকে যত্ন করতেন। ওটাকে ভেতরে নিয়ে আসতে আব্বু বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন। যেভাবে হোক পাখিটা মরে গেল। আম্মা আমাকে পাঠিয়েছিলেন আব্বুকে ডাকতে। গিয়ে দেখি, আব্বুর এ রকম করে দুই হাত...হাতের মধ্যে বুলবুলি পাখিটা। আব্বু কিন্তু কাঁদছেন। আমাকে দেখে তিনি একটু বিব্রত হয়ে গেলেন। পরে তিনি সারা দিন ঠিকমতো খাননি। আর ওটাই আফসোস, ‘কী করে আমি ভুললাম।’ তিনি কিন্তু অন্যকে দোষারোপ করলেন না। বললেন না, ‘তোমরা আনতে পারো নাই। আমাকে মনে করাতে পারো নাই।’ অথচ তিনি কিন্তু ব্যস্ত মানুষ। ইলেকশনের কাজে তাঁর ব্যস্ততার কমতি নেই। আব্বু বলছেন, ‘এত লোকের আশ্রয় দিলাম লিলি, আর বুলবুলি পাখির বাসাটা ভেতরে আনতে ভুলে গেলাম।’ আমি অনেক বড় হয়ে বুঝেছি—দিস ইস কলড হিউম্যানিটি। বর্ন লিডার, বর্ন স্টেটসম্যান—যার চোখের আলোটার মধ্যে একটা সামান্য বুলবুলি পাখির বেদনাটাও স্থান পায়।

তাজউদ্দিনকন্যা শারমিন আহমদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইন ট গ র ট স ন দর য র আম দ র র ক জট

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে কিছু সময়ের জন্য ওয়াকআউট করার পর আবারও আলোচনায় যোগ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে বলে তিনি সতর্ক করেছেন।

আজ সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ২০তম দিনে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশে যেন আর কখনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ জন্ম নিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিএনপি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব ছিল, কেউ যেন ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন, সেটি গৃহীত হয়েছে। আমরা আরও প্রস্তাব দিয়েছি, নির্বাচন কমিশন গঠনে একটি স্বাধীন সার্চ কমিটি গঠন করা হোক, যেখানে সরকারি দল, বিরোধী দল ও বিচার বিভাগের প্রতিনিধি থাকবে, সেটিও গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরাই প্রস্তাব করেছি যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে সংসদ কোনো সংশোধনী আনলে, তা রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আগে গণভোটে যেতে হবে। এটি গৃহীত হওয়া মানে, দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।’

তবে এসব অগ্রগতির মধ্যেও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিএনপির এই নেতা। বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগের জবাবদিহি যেমন সংসদের কাছে, তেমনি জনগণের কাছেও রয়েছে। কিন্তু যদি কর্তৃত্ব না থাকে, কেবল দায়িত্ব আর জবাবদিহি থাকে, তাহলে তা কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়।’

সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগে নির্বাহী বিভাগের হাত–পা বাঁধা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাহী বিভাগকে শক্তিশালী হতে হবে, দুর্বল নয়।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা গঠনমূলক লক্ষ্য নিয়ে সংলাপে অংশ নিচ্ছে। তবে যেখানে মৌলিক দ্বিমত রয়েছে, সেখানে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা বা মতপার্থক্য প্রকাশ করাও গণতন্ত্রের ভাষা।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, এমন দাবি কেউ করেননি। দ্বিমত থাকবে, ভিন্নমত থাকবে, আর সেগুলোর মধ্য দিয়েই তো গণতন্ত্রের সংগ্রাম এগিয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে কাউকে ঐকমত্যে বাধ্য করা উচিত। ঐকমত্যের অর্থই হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। বিএনপি অংশ না নিলে কীভাবে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।’

বক্তব্য শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, সংলাপের পরবর্তী পর্যায়ে বিএনপি অংশ নেবে এবং ইতিবাচক আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকবে।

আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠক: ফায়ার অ্যালার্ম বেজে ওঠায় হুড়োহুড়ি করে বের হলেন সবাই৫৪ মিনিট আগেবিএনপির ওয়াকআউট

কমিশনের প্রস্তাবিত সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান আলোচনায় অংশ নেয়নি বিএনপি। বেলা সাড়ে ১১টার পর বিষয়টি আলোচনার জন্য উপস্থাপন করেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, তাঁরা আলোচনায় অংশ নেবেন না।

পরে আলী রীয়াজ বলেন, বিএনপির পক্ষে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় থাকবে না। একটি রাজনৈতিক দল আলোচনায় অংশ না নিলে আলোচনা করা যাবে না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।

আজ আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

আলোচনায় সভাপতিত্ব করছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত আছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, এমদাদুল হক, সফর রাজ হোসেন, ইফতেখারুজ্জামান ও আইয়ুব মিয়া।

আরও পড়ুনজাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক থেকে বিএনপির ওয়াক আউট, পরে যোগদান২ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
  • জুলাই সনদের খসড়ায় ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের চিত্র নেই: ইসলামী আন্দোলন
  • কক্সবাজারের সোনাদিয়া উপকূলে ভেসে এল অজ্ঞাতনামার লাশ, এখনো নিখোঁজ অরিত্র
  • তাজউদ্দীন আহমদ দেশের স্বাধীনতার প্রধান পুরুষ
  • মানবাধিকার মিশন নিয়ে উদ্বেগ, আলোচনা ছাড়া সিদ্ধান্ত ন্যায়সংগত হয়নি: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হলে রাষ্ট্র পরিচালনায় ভারসাম্য নষ্ট হবে: সালাহউদ্দিন
  • দিনলিপির দর্পণে তাজউদ্দীন আহমদ
  • সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫% আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়নের প্রস্তাব বিএনপির
  • পিয়াইন নদীতে ভেসে উঠল নিখোঁজ পর্যটকের লাশ
  • দুর্নীতির অভিযোগে কেনাকাটা আটকে দিয়েছিলেন নাহিদ, তোড়জোড় ফয়েজ আহমদের