সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সবার কষ্ট বোঝেন
Published: 23rd, July 2025 GMT
মতিউর রহমান:
আপনার বিভিন্ন ভাইবোনের বিভিন্ন লেখায় আমরা পাই, তিনি গাছের চারা লাগাতেন আপনাদের ধানমন্ডির বাসায়। আমগাছ, ফুলগাছসহ অন্যান্য গাছ তিনি নিজে পরিচর্যা করতেন, নিড়ানি দিতেন। এভাবে গাছের ও পশুপাখির যত্ন নিতেন। এটাও দেখা যায় যে আপনার বোনদের নিয়ে তিনি চিড়িয়াখানায় গেলেন পশুপাখি দেখাতে। যে কথা আপনি বলছিলেন যে প্রকৃতির প্রতি.
শারমিন আহমদ: আমরা যখন সকালে হাঁটতাম আব্বুর সাথে, রাস্তার কুকুরগুলোকে আব্বু ঘরে নিয়ে যেতেন। রিমি একটু ভয় পেত। আমি আর আব্বু মিলে ওগুলোকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে খাওয়াদাওয়া করাতাম। আমাদের বাসায় পাঁচ-ছয়টা কুকুর দেখাশোনা করা হতো। ওরাই আমাদের সঙ্গী হতো, খেলা করত। আমার মনে হয়, সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সার্বিকভাবে সবার কষ্ট বুঝতে পারেন—একটা সমাজে এমনকি একটা কুকুর, বিড়াল বা পাখির কষ্টও যিনি হৃদয়ে ধারণ করেন মানুষের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি। তিনিই প্রকৃত অর্থে একজন ভালো নেতা।
আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।মতিউর রহমান:আমরা দেখি যে সাধারণ জীবনযাপনের পাশাপাশি তিনি তখন যেকোনো সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকতেন। প্রবীণ ও তরুণদের কাছে নিয়মিত যেতেন, কথাবার্তা বলতেন এবং ছোট-বড় যেকোনো কাজে যুক্ত হতেন। এভাবে তিনি একটা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। আমরা দেখলাম, তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপর সাধারণ সম্পাদক। তিনি হঠাৎ কারও প্রভাবে, অর্থবলে বা অন্য কোনোভাবে কিন্তু নেতা হয়ে ওঠেননি। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর ডায়েরিগুলো দেখলে কিন্তু এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা তাঁর পাঁচটি ডায়েরি প্রকাশ করেছি এখন পর্যন্ত। তাঁর রাজনৈতিকভাবে গড়ে ওঠার পেছনে আপনার কোনো মন্তব্য বা পর্যালোচনা থাকলে বলতে পারেন।
শারমিন আহমদ: আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।
এখানে আমি একটা বুলবুলি পাখির মৃত্যুর কথাই বলি। আমার বইয়ে উল্লেখ আছে, ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড় যখন হলো, আমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ আশ্রয় পেল। ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের পরে। তখন আমাদের বাড়ির বাইরে ঝোলানো টবের মধ্যে মানিপ্ল্যান্টে একটা বুলবুলি পাখি বাসা বেঁধেছিল। আব্বু সব সময় পাখিটাকে যত্ন করতেন। ওটাকে ভেতরে নিয়ে আসতে আব্বু বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন। যেভাবে হোক পাখিটা মরে গেল। আম্মা আমাকে পাঠিয়েছিলেন আব্বুকে ডাকতে। গিয়ে দেখি, আব্বুর এ রকম করে দুই হাত...হাতের মধ্যে বুলবুলি পাখিটা। আব্বু কিন্তু কাঁদছেন। আমাকে দেখে তিনি একটু বিব্রত হয়ে গেলেন। পরে তিনি সারা দিন ঠিকমতো খাননি। আর ওটাই আফসোস, ‘কী করে আমি ভুললাম।’ তিনি কিন্তু অন্যকে দোষারোপ করলেন না। বললেন না, ‘তোমরা আনতে পারো নাই। আমাকে মনে করাতে পারো নাই।’ অথচ তিনি কিন্তু ব্যস্ত মানুষ। ইলেকশনের কাজে তাঁর ব্যস্ততার কমতি নেই। আব্বু বলছেন, ‘এত লোকের আশ্রয় দিলাম লিলি, আর বুলবুলি পাখির বাসাটা ভেতরে আনতে ভুলে গেলাম।’ আমি অনেক বড় হয়ে বুঝেছি—দিস ইস কলড হিউম্যানিটি। বর্ন লিডার, বর্ন স্টেটসম্যান—যার চোখের আলোটার মধ্যে একটা সামান্য বুলবুলি পাখির বেদনাটাও স্থান পায়।
তাজউদ্দিনকন্যা শারমিন আহমদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইন ট গ র ট স ন দর য র আম দ র র ক জট
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব: সালাহউদ্দ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুর সমাধান আলোচনার টেবিলেই সম্ভব।’’
তিনি মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান এলে যেকোনো অসাংবিধানিক প্রক্রিয়া ঠেকানো যাবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনকে যদি অনিশ্চিত করা হয় বা বিলম্বিত করা হয়, তাহলে তার সুযোগ নেবে ফ্যাসিবাদী বা অসাংবিধানিক শক্তি। এর পরিণতি জাতি অতীতে বহুবার ভোগ করেছে। আমরা আবার সে পরিস্থিতি চাই না।’’
অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা নিয়ে পৃথক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতেই সাংবিধানিকভাবে এই সরকার গঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সে দেওয়া সেই মতামত এখনো বহাল আছে। এর বিপরীতে সুপ্রিম কোর্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। তাই এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা আসলে রাজনৈতিক বক্তব্য, এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘যেকোনো সাংবিধানিক আদেশ জারি হলে তা আগামীকাল বা পরশু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আমরা এমন খারাপ নজির জাতির সামনে আনতে চাই না। তাই সমাধানের বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। সবাইকে বিবেচনায় নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।’’
পিআর পদ্ধতি প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের অধিকার আছে। তবে পিআর পদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, শেষ পর্যন্ত জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে।’’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘‘পিআর পদ্ধতিতে ঝুলন্ত পার্লামেন্টের ঝুঁকি থেকে যায়। তাতে রাষ্ট্র ও জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব হয় না। আমরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যেতে পারি না।’’
সালাহউদ্দিন আহমদ আরো বলেন, ‘‘জনগণই হলো সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এই দেশের জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বারবার গণতন্ত্রকে সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।’’
আগামী সংসদে কিছু মৌলিক বিষয়ে সংশোধনের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘‘আমরা কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে একমত হয়েছি। তবে, ঐকমত্য কমিশনের সনদের ভেতরে যেসব পরিবর্তন হবে, সেগুলোতে অবশ্যই গণভোট নিতে হবে।’’
ঢাকা/আসাদ/রাজীব