সিদ্ধিরগঞ্জে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে ডিজিটাল জরিপের দুই কর্মকর্তা ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ, থানায় হস্তান্তর
Published: 23rd, July 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জে ডিজিটাল ভূমি জরিপ কার্যক্রমকে ঘিরে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে হিরাঝিল এলাকা থেকে ভূমি জরিপের সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মো. মহসিন আলী সরদার ও সার্ভেয়ার নজরুল ইসলাম সরকার নামে দুই কর্মকর্তাকে স্থানীয় ছাত্র ও জনতা ৫ ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে।
পরে ছাত্র-জনতা তাদেরকে পুুলিশের তুলে দেয়। বুধবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত হীরাঝিল এলাকায় গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল ক্যাম্পাসে অস্থায়ী অফিসে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, প্রায় এক মাস যাবত সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ডিজিটাল ভূমি জরিপের কাজ শুরু করা হয়েছে। জরিপে জমি ও বাড়িঘর সঠিকভাবে রেকর্ড করে নিতে মালিকপক্ষ সার্ভেয়ারের দাঁড়স্থ হোন।
তাদের দাঁড়স্থ হওয়া সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য ও হয়রানি করে আসছিল অবরুদ্ধ কর্মকর্তারাসহ তাদের বেশ কয়েকজন সহকর্মী।
একপর্যায়ে তাদের এমন কৃতকর্মে অতিষ্ঠ হয়ে ফুঁসে উঠে স্থানীয় বাসিন্দারা। আরো অভিযোগ রয়েছে, ডিজিটাল ভূমি জরিপের নামে নানা জটিলতা দেখিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারীরা জানান, কোনো জমির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও কর্মকর্তারা ‘সমস্যা’ দেখিয়ে টাকা দাবি করতেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ জানাতে স্থানীয় একটি মসজিদ থেকে মাইকিং করে ভুক্তভোগীদের ডাকা হয়। এরপর অনেকেই ঘটনাস্থলে এসে তাদের অভিযোগ জানান।
শাহজালাল নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার সকল কাগজপত্র সঠিক থাকা সত্বেও আমার কাছে ৮০ হাজার টাকা দাবি করেছিল। একপর্যায়ে তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ৩০ হাজারে কাজ করিয়েছি।
হীরাঝিল এলাকার বাসিন্দা অহিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ভূমি জরিপ ক্যাম্পে গেলে তারা আমার মূল দলিল না থাকায় জরিপ কাজ করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন। পরে তারা ইঙ্গিত দেন টাকা দিলে কাজ হবে। বাধ্য হয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়।
আরেক ভুক্তভোগী মোখলেছুর রহমান জানান, জমির একটি অংশ নাকি অন্য কারও জমিতে পড়ে গেছে এই অভিযোগ তুলে তারা কাজ করতে হলে ১ লাখ টাকা লাগবে বলে জানিয়ে দেন। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়েই কাজটি করিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি।
আমেনা বেগম নামে আরেক ভুক্তভোগী এক নারী জানান, আমি কিডনি রোগী। আমার ছেলেকে আমি কাগজপত্র দিয়ে পাঠালে তাকে বলে আমাদের জায়গা নাকি কম আছে এখন কাজ করতে হলে টাকা লাগবে। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে করাতে হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মেহরাব হোসেন প্রভাত জানান, বেশ কিছু দিন ধরে মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছিল এখানে ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না। ঠুনকো যুক্তি আর কাগজপত্রে মিথ্যা ত্রুটি দেখিয়ে জমি মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ বাাড়তে থাকে ভুক্তভোগী সহ সাধারণ মানুষের মধ্যে। ভূমি জরিপের নামে মানুষের ভোগান্তির খবরে আজকে (বুধবার) আমরা এসে হাতে-নাতে ধরেছি। যেখানেই অপরাধ আর দুর্নীতি হবে সেখানেই ছাত্র-জনতা ছুটে যাবে।
তিনি আরও বলেন, এই দেশ সকলের। সংস্কারের দায়িত্বও সকলের। প্রতিবাদ করতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। যদি ভাবেন আপনি একা তাহলে সেটা ভুল। এক ছাড়া একশো যেমন পূর্ণ হয় না, তেমনি কেউ শুরুনা করলে শেষ করা সম্ভবও হবে না।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলুন, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আজকে একজন দিয়ে শুরুহলেও শেষ হয়েছে ১০০ জন ভুক্তভোগী দিয়ে এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আজকের এই ঘটনা আমাদের এটাই শিক্ষা দেয়, দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ।
এমন বাংলাদেশ ই তো চেয়েছিলাম। ধন্যবাদ জানাই সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা এবং ডিসি মহোদয়কে, তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
এ বিষয়ে ডিজিটাল ভূমি জরিপের ঢাকা জোনের প্রধান মাহমুদ জামান জানান, আমি ঘটনাটি শুনেছি, ইতোমধ্যে আমাদের লোক পাঠানো হয়েছে। ছাত্ররা দুইজনকে থানায় নিয়ে গেছে। তাদেরকে আটক করা হয়নি। তবে এ বিষয়ে কোন ভূক্তভোগী অভিযোগও করেননি। অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহীনুর আলম বলেন, ছাত্ররা দুইজনকে আটক করে আমাদের কাছে দিয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহিনূর আলম জানান, আমি অবরুদ্ধের খবর পেয়ে থানার এসআই ওয়াসিম আকরামকে টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ কর মকর ত ক গজপত র অবর দ ধ ক জ কর আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অটোরিকশার চালকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকেরা। রবিবার (২৭ জুলাই) সকাল থেকে জেলাজুড়ে এই কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা। সকালে স্ট্যান্ড থেকে কোনো অটোরিকশা ছেড়ে যায়নি। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন।
একাধিক যাত্রী জানান, সিএনজিচালিত অটোরিকশা না থাকায় তারা টমটম নিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তার মধ্যে অটোরিকশার চালকরা টমটম থামিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘সড়কে ট্রাফিক পুলিশের লাগাতার হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ দাবি, বিনা কারণে গাড়ি জব্দ এবং লাইসেন্স সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রতিবাদে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। ট্রাফিক পুলিশকে ঘুষ না দিলে মামলা ও জরিমানার ভয় দেখিয়ে হয়রানি করছেন। আমাদের ৫২টি অটোরিকশা জব্দ করা রয়েছে।’’
আরো পড়ুন:
গাইবান্ধায় ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ
কুড়িগ্রামে সেতুর পাটাতন দেবে আটকে গেল ট্রাক, যান চলাচল বন্ধ
তিনি আরো বলেন, ‘‘বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে গেলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সিএনজি অটোরিকশার লাইসেন্স কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে মালিক-চালকেরা আইনি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের পদে পদে হয়রানি করা হচ্ছে।’’
অটোরিকশার মালিক সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘আমাদের জব্দকৃত অটোরিকশা নিঃশর্তভাবে ছাড়তে হবে। পারমিট অনুযায়ী আমাদের জেলার সর্বত্র চলতে দিতে হবে ও জেলা ট্রাফিকের নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।’’
দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানান অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতারা।
শনিবার (২৬ জুলাই) শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিক ও চালকেরা।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। যাদের কাগজপত্র নেই বা রেজিস্ট্রেশন ছাড়া চলছে, তাদের গাড়ি আটক করা হচ্ছে। কাগজপত্র আনলে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যাদের কাগজপত্র আছে, তারা নির্বিঘ্নে চলতে পারছেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তারা চাচ্ছেন, তাদের কোনো গাড়ি যেন আমরা না ধরি। ট্রাফিক পুলিশ যেন কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারে। এটা তো হয় না।’’
ঢাকা/পলাশ/বকুল