রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের দিন অনেক শিক্ষার্থীই স্কুলব্যাগ, বই, খাতাসহ নানা শিক্ষা উপকরণ ফেলে গিয়েছিল। স্কুলে ফেলে যাওয়া এসব উপকরণের খোঁজ করতে এখন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক স্কুলে যাচ্ছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষও তাঁদের ওই ব্যাগ, বই ও খাতা বুঝিয়ে দিচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ফেলে যাওয়া শিক্ষা উপকরণের খোঁজে স্কুলে যেতে দেখা যায়। স্কুলের মূল ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা পরিচয় যাচাই করে তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছিলেন।

সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মীদের এক শিক্ষার্থীর নাম, পরিচয় নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য লেখা একটি চিরকুট দেখাচ্ছেন আঞ্জুমান আরা নামের এক নারী। নিরাপত্তাকর্মীরা ওই চিরকুট নিয়ে তাঁকে ফটকের সামনে অপেক্ষা করতে বলেন। এই ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফেলে যাওয়া শিক্ষা উপকরণ সংরক্ষণ করে রেখেছিল। স্কুলের নিয়ন্ত্রণকক্ষে এসে যোগাযোগ করলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে সেগুলো দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শাহ বুলবুল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

আঞ্জুমান আরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন হুড়োহুড়ির মধ্যে মেয়ে ব্যাগ ফেলে চলে গিয়েছিল। মেয়ের এক সহপাঠীর মা জানাল, স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র নিরাপদে রেখেছে, তাই নিতে এসেছি।’ ওই সময় নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে স্কুলের ভেতরে যাওয়ার জন্য ডাকেন। বেরোনোর সময় তাঁর হাতে একটি স্কুলব্যাগ দেখা যায়।

স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারদিন আবরার। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের সময় ক্লাস শেষ করে সহপাঠীদের সঙ্গে মাঠে খেলছিল সে। ফারদিনের স্কুলব্যাগটি রাখা ছিল মাঠের এক কোণে। সেই ব্যাগের খোঁজেই গতকাল বেলা ১১টার দিকে স্কুলে গিয়েছিল সে। ফারদিন আবরার জানায়, ব্যাগের খোঁজে স্কুলে এলে তাকে অভিভাবক নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, বিমান বিধ্বস্তের পর হুড়োহুড়িতে অনেক শিক্ষার্থীই তাদের ব্যাগ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ফেলে চলে যায়। এখন প্রতিদিন অনেকেই এগুলোর খোঁজে স্কুলে আসছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই সব জিনিস সংরক্ষণ করে রেখেছিল। স্কুলের নিয়ন্ত্রণকক্ষে এসে যোগাযোগ করলে যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে সেগুলো দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মেয়ের খোঁজে স্কুলে মা

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয় গত সোমবার। এর পর থেকে প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সামনে মানুষের ভিড় লেগেই থাকছে। দুর্ঘটনার চতুর্থ দিন গতকালও সেখানে ভিড় ছিল। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে জনসাধারণের প্রবেশ বন্ধ রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে স্কুলে নিখোঁজ মেয়ের খোঁজে যান এক মা। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই নারীর মেয়ের নাম মারিয়ম উম্মে আফিয়া। সে স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ‘স্কাই’ (আকাশ) শাখায় পড়ত। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ওই শিক্ষার্থীর স্বজনেরা দুপুর ১২টার দিকে স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান। তাঁদের একজনের হাতে পোড়া একটি ব্যাগ ছিল। পরে মারিয়মের মা তামিমা জানতে পারেন, ডিএনএ পরীক্ষায় মেয়ের মরদেহ শনাক্ত হয়েছে।

এদিকে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে স্কুলের শিক্ষার্থী ওকিয়া ফেরদৌসের অভিভাবক দাবি করেন। সন্তান ‘নিখোঁজের’ খবর জানাতে সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের ডাকেন তিনি। উত্তরার নয়াপাড়া রফিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সন্ধ্যা ছয়টায় ওই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। পরে সেখানে গেলে তাঁরা জানান, সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) থেকে জানানো হয়েছে, তাঁদের সন্তানের লাশ পাওয়া গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম ন ব ধ বস ত গতক ল ব য গ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের গুদামে ইতোমধ্যেই এসব নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো শুরু হয়েছে।

সোমবার বিকেলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নির্বাচন ভবনের বেসমেন্টে অবস্থিত ইসির গুদামে নির্বাচনী সরঞ্জাম দেখতে যান। এ সময় তারা সংগৃহীত ভোটগ্রহণের বিভিন্ন সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখেন।

এসব নির্বাচনী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট ইত্যাদি।

ইসি ঘোষিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৬ নভেম্বরের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের নির্বাচনী দ্রব্য, ফরম, প্যাকেট বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বাসসকে বলেন, ‘আজ বার্ষিক দ্রব্য সংগ্রহের পরিকল্পনা সংক্রান্ত মিটিং করেছি। ইতিমধ্যে নির্বাচনী সরঞ্জাম আসা শুরু হয়েছে।’

ইসি সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বাসসকে বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা কোনো কোনো নির্বাচনী উপকরণ প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। আবার কোনো কোনো উপকরণ এখনো আসেনি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নির্বাচনী দ্রব্য সামগ্রী পেয়ে যাব।’

ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বর্তমানে দেশের ১০টি অঞ্চলের আওতায় ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। এবার গড়ে প্রতি ৩ হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র করার ভিত্তিতে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি ভোটকেন্দ্র প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া সব মিলিয়ে ভোটকক্ষ হবে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। আগামী ২০ অক্টোবর চূড়ান্ত ভোটকেন্দ্রের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহের বিষয়ে সম্প্রতি ইসি সচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত ব্রাস সিল ও সিলগালা বাদে অন্যান্য উপকরণগুলো আমরা পাচ্ছি। সময়সীমা দেওয়া আছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উপকরণগুলো পাচ্ছি। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সকল দ্রব্য পাওয়া যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনী উপকরণ সংগ্রহ শুরু করেছে ইসি