১৯৮০-র দশকে আসাদ গেটের সামনে আমার স্কুল সেন্ট জোসেফ। একদিন শুনি সামনের কাতারের ছাত্র চিৎকার করে বলছে, ‘এই দেখ দেখ, চিঙ্কু যায়!’ চীনা লোক? মাও সে–তুংয়ের হাজার ফুল? তারা মোহাম্মদপুরে কী করছে, এই আদি ১৯৮৫ সালে? ভালোমতো তাকিয়ে দেখি গেটের বাইরে একজন আদিবাসী ছেলে। সে পাহাড়ি না সমতলের, বাংলাদেশের ২৭টি আদিবাসী সম্প্রদায়ের কোনটি—তাতে কিছু আসে যায় না। মুখের গড়নের কারণে বাঙালি, প্রধানত বাঙালি মুসলমান, ছাত্ররা তাঁকে নিষ্ঠুর বর্ণবাদী গালি দেওয়ার অধিকার পেয়ে গেল।

১৪ বছর বয়সে প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামে যাই, কাপ্তাই বিদ্যুৎ প্রকল্প দেখতে। মেশিনের শব্দ প্রচণ্ড। তার ওপর দিয়ে আমার চাচা যন্ত্রপাতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি সবেমাত্র বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর প্রকৌশলী কৌতূহল জলবিদ্যুৎ নিয়ে। আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম, মেশিনগুলো ছিল প্রযুক্তিগত বিস্ময়। আমি স্কুলে ফিরে একটি বিজ্ঞান প্রকল্পের স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু এই বিদ্যুৎজাদুর পেছনে ১৯৬৫ সালে চাকমা সম্প্রদায়ের হাজার হাজার পরিবার ও গ্রামের উচ্ছেদের ঘটনা আমার চাচা হয়তো জানতেন না। নির্মম সেই ঘটনামালা প্রকাশিত হতে লেগেছে বহু দশক। অতি সম্প্রতি অ্যাডভোকেট সমারী চাকমা লিখেছেন মৌখিক ইতিহাসের যুগান্তকারী কাজ কাপ্তাই বাঁধ বর-পরং: ডুবুরিদের আত্মকথন (ইউপিএল, ২০২৪)।

সেন্ট জোসেফ শিক্ষা পর্ব শেষ করার পরে আমি পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার যাই। এবার আমার সঙ্গী জুম্ম জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক কর্মীরা, তাঁদের মধ্যে সমারি চাকমাও ছিলেন। সে সময়ে দেখি, আমাদের বেড়ে ওঠার সময়ের রূপকথা (‘বাংলাদেশে সকল জনগোষ্ঠী মিলেমিশে থাকে’) এবং জুম্ম জনগণের প্রতিরোধ আন্দোলনের বাস্তবতার মধ্যে এক বিশাল ফারাক। আমি ভাবতাম, বোধ হয় শুধু একাত্তরের প্রজন্মেরই এই দেখার ভুল। তারা মেঘের অনেক রং চলচ্চিত্র (১৯৭৬) এবং সেটির অভিনেত্রী মাথিনকে নিয়ে পত্রিকার প্রচ্ছদকাহিনি করে ক্ষান্ত হয়েছে। পরের দশকে বুঝেছি বাঙালি মুসলমান পুরুষের পক্ষে ভিন্ন জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গকে সমান কাতারে না দেখার রেওয়াজ কোনো প্রজন্ম ভাঙতে পারেনি।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পর ‘কী পেলাম’-জাতীয় বিষয়ে গোলটেবিল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাগ্​যুদ্ধ চলছে। আলোচনার স্বরে চলে এসেছে অবসাদের ছায়া। ঘটনাপ্রবাহ এবং বিশেষত আবারও নারী অধিকার খর্বের জলসা দেখে, বিজয় প্রসাদের আরব বসন্ত, লিবিয়ার শীত (একে প্রেস, ২০১২) বইয়ের কথা মনে পড়ে যায়। প্রসাদের বয়ানে পশ্চিমা দেশের সহায়তায় লিবিয়ার গাদ্দাফিকে উৎখাত করার পর আরব বসন্তের আশা ধূলিসাৎ হয়। গাদ্দাফি-পরবর্তী লিবিয়ায় ‘আমরা সবাই রাজা’ জোশে স্থায়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, যার অবসান আজও ঘটেনি। তবে প্রসাদের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলা যায়, বসন্তের মৃত্যুঘণ্টা সবার আগে সেই মিসরের তাহরির স্কয়ারেই শোনা যায়। তাহরিরে যুব-বিপ্লবের মধ্যেও কিছু সাংবাদিক লেখেন যে নারী অধিকার প্রশ্নে ইতিমধ্যে বিপজ্জনক সংকেত দেখা যাচ্ছে। হোসনি মোবারকের পতনের পর আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতা ছিলেন আরেক নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, মোহাম্মদ আল বারাদায়ী। বারাদায়ীর অধীনে এক অস্থির পরিস্থিতি, অবশেষে নির্বাচনের আগে নিষিদ্ধ মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয় এবং এক বছর পর ব্রাদারহুডের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে প্রথমে রাস্তার আন্দোলন এবং পরে মুরসির সেনা অভ্যুত্থান।

সমতল থেকে পাহাড়ে সমান অধিকারের দাবিতে গ্রাফিতি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস

জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।

বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ