দলগুলোর সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণযোগ্য নয়
Published: 4th, August 2025 GMT
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদের আসনসংখ্যা ৪০০–এ উন্নীত করে ১০০ আসনে সরাসরি ভোটে নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করার সুপারিশ করা হয়েছিল। বর্তমান আইন অনুযায়ী, বাকি ৩০০ আসনে নারী–পুরুষনির্বিশেষে সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
এই প্রস্তাব পুরোপুরি নতুন, তা–ও বলা যাবে না। মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন সংসদের নারী আসনসংখ্যা বৃদ্ধি ও সরাসরি ভোটের দাবি জানিয়ে আসছিল। বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও এই দাবির পক্ষে ছিল। এই প্রেক্ষাপটে সংবিধান সংস্কার কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সংকীর্ণ মনোভাব ও একগুঁয়েমির কারণে সেই প্রস্তাব চূড়ান্ত রূপ নিতে পারেনি। রাজনৈতিক দলগুলো নারীর আসনসংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সহমত পোষণ করলেও নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে একমত হতে পারেনি।
বর্তমানে ৩০০ আসন নিয়ে জাতীয় সংসদ এবং প্রতিটির নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারিত। ১০০ আসন বাড়াতে হলে নতুন করে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল সীমানা নির্ধারণ সময়সাপেক্ষ বলে এর বিরোধিতা করেছে এবং পর্যায়ক্রমে আসন বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমান পদ্ধতিতে নারী আসন বাড়ালেও নারীর ক্ষমতায়ন হবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
এরশাদের শাসনামলে সংসদের নারী আসনকে ‘৩০ সেট অলংকার’ হিসেবে ঠাট্টা করা হতো; বর্তমানে নারী আসন ৫০–এ উন্নীত হলেও পরিস্থিতির ইতরবিশেষ হয়নি। ২০৪৩ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রাখা ও পর্যায়ক্রমে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর কথা বলেছে কমিশন। এটা খুবই অগ্রহণযোগ্য প্রস্তাব বলে মনে হয়।
বাংলাদেশে তিন দশকের বেশি সময় ধরে নারী নেতৃত্ব দেশ শাসন করলেও রাষ্ট্র পরিচালনার ‘পুরুষতান্ত্রিক’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেনি। সাবেক দুই নারী প্রধানমন্ত্রীর কেউই নারী আসনে সরাসরি ভোটের ব্যবস্থা করেননি। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্ব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ছিল সীমাহীন উদাসীনতা।
এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের কমিটিতে এক–তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্বের যে বাধ্যবাধকতা জারি করেছিল, সেটাও কেউ মান্য করেনি। সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন দলও আছে, যারা নারী নেতৃত্বের ঘোর বিরোধী। কিন্তু যেসব দল নারী নেতৃত্বের পক্ষের বলে দাবি করে, তারাও কমিটিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর কোনো কার্যকর
উদ্যোগ নেয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকের ফলাফল অত্যন্ত হতাশাজনক। নারী সংগঠন ও অধিকারকর্মীরা শনিবার এক সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁদের দাবি, নারীদের বাদ দিয়ে নারীর অধিকারবিষয়ক প্রস্তাব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ অবশ্য কমিশনের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আমরা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারি না।’ তাঁর এই যুক্তি মেনে নিলেও কমিশনের বৈঠকের ফলাফল মেনে নেওয়া যায় না। আমরা কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারীকে বাদ দিয়ে কিংবা প্রতীকী অংশগ্রহণ রেখে গণতান্ত্রিক কাঠামো সুদৃঢ় করা যাবে না।
সবশেষে বলব, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংসদে নারীর আসন ও নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে যে উপসংহারে এল, তা কোনোভাবে গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব পর য য় আসন ব
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান–সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে আগামীকাল বুধবার আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এই আলোচনা শুরু হবে। আজ মঙ্গলবার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছিল কমিশন। মতৈক্য না হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ৩০টি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে ঐকমত্য কমিশন। গত রোববারও দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা হয়। ওই দিনের আলোচনায় কমিশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতির প্রশ্নে মতৈক্য হয়নি।
এর আগে দুই পর্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছে। সেখানে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এই সনদের খসড়া ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করেছে কমিশন।
গত জুলাই মাসে এই সনদ সই করার লক্ষ্য ছিল। তবে বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় সনদ আটকে আছে। অবশ্য বাস্তবায়নের পদ্ধতি জুলাই সনদের অংশ হবে না। এ বিষয়ে সরকারকে আলাদা সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন।
বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক–অনানুষ্ঠানিক একাধিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে। এ বিষয়ে দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামতও নেওয়া হয়েছে।
সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো আগামী জাতীয় সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের পক্ষে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের মাধ্যমে আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায়। এর বাইরে বেশ কিছু দল সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের রেফারেন্স নিয়ে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে।