টিএসসিতে রাজাকারদের ছবি টানানোটা অবিশ্বাস্য ঘটনা: অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম
Published: 9th, August 2025 GMT
দেশের বাম নেতাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক বিপ্লব তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরই বামপন্থীদের কর্তব্য ছিল, সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করা। কিন্তু এক বছর চলে গেছে, সেটি হয়নি। এই সুযোগে বুর্জোয়া শক্তিশালী হয়ে উঠছে, ধর্মনিরপেক্ষ বুর্জোয়া, সেক্যুলার বুর্জোয়া এবং নন–সেক্যুলার বুর্জোয়া, ধর্ম ব্যবসায়ী বুর্জোয়া। একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানো হচ্ছে।’
এই শিক্ষাবিদ বলেন, বাম নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে এই বিপ্লব করতে না পারলে মুক্তি আসবে না। উনসত্তরের পর একবার যুক্ত ফ্রন্ট গঠনের সুযোগ এসেছিল, চব্বিশে চরম ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরে এই সুযোগ আবার এসেছে।
আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘চব্বিশের এই অভ্যুত্থানকে বিপ্লব বলা হচ্ছে। তবে এটা শুধুই একটা সরকারের পতনমাত্র। আসল বিপ্লব হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব। সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়েই সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের মুক্তি আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন ধনীদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শাসকেরা লুণ্ঠন করে, সম্পদ পাচার করে। যেটা এখন বাংলাদেশে চলছে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সরকার পতনের মাধ্যমে মনে হয়েছিল, ফ্যাসিবাদ শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদ চরম মাত্রায় রূপ নিয়েছে, যার কারণে দক্ষিণপন্থীরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদীদের আধিপত্য ঘটছে।’
করণীয় সম্পর্কে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘আমাদের করণীয় হচ্ছে, সামাজিক বিপ্লব গড়ে তোলা, যারা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করে, তাদের নিয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে। এই যুক্ত ফ্রন্ট ৫৪–এর যুক্ত ফ্রন্টের মতো হযবরল যুক্ত ফ্রন্ট হবে না। এই যুক্ত ফ্রন্ট হবে বামপন্থীদের। এই যুক্ত ফ্রন্ট শক্তিশালী হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই যুক্ত ফ্রন্টের ওপর। একা বিচ্ছিন্নভাবে সম্ভব নয়, ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নিজেদের মতাদর্শের পার্থক্য থাকলেও সামাজিক বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরই বামপন্থীদের কর্তব্য ছিল সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করা। কিন্তু এক বছর চলে গেছে, সেটি হয়নি। এই সুযোগে বুর্জোয়া শক্তিশালী হয়ে উঠছে, ধর্মনিরপেক্ষ বুর্জুয়া, সেক্যুলার বুর্জোয়া এবং নন–সেক্যুলার বুর্জোয়া, ধর্ম ব্যবসায়ী বুর্জোয়া। একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা, টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানো হচ্ছে। এই চেষ্টা আরও শক্তিশালী হবে, যদি না বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ থাকে। ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে, তারাও বুর্জোয়া, ব্যক্তিমালিকানায় বিশ্বাস করে। সে জন্য আমরা যারা সমাজ পরিবর্তন করতে চাই, তাদের একত্র হয়ে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে বুলেটকে উপেক্ষা করে ছাত্র–শ্রমিক–জনতা বিজয় এনেছে। কিন্তু রক্তের দাগ না শুকাতেই হতাশা গ্রাস করেছে তাদের। কারণ, বর্তমান সরকার বুর্জোয়া ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে সংকটের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে। মুক্তবাজার অর্থনীতিকে প্রধান করে তারা সমাধান খুঁজছে। অথচ দুঃশাসনের ব্যবস্থা বহাল তবিয়তে আছে। ব্যবস্থা বদল ছাড়া মুক্তির পথ নেই। সমাধান হলো বাম গণতান্ত্রিক জোটকে বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে তুলে আরেকটা অভ্যুত্থান সংঘটিত করা। তবেই প্রকৃত মুক্তি অর্জন সম্ভব।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকার একটা সংস্কার করতে চাচ্ছে, সেটা হলো বুর্জোয়া সংস্কার। সংস্কারের নামে তারা চুনকাম করতে চায়। গতকালও দেখলাম, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে বলেছেন ’২৪–এর গণ–আন্দোলন নাকি একাত্তরকে অতিক্রম করেছে, আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ৭১ কে ২৪ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। একাত্তরকে ভুলিয়ে দিতে চাইবে, এটা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করলে চলবে না, এই বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় আসছে, তারা ফ্যাসিবাদ হয়ে উঠছে, তাই আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চলতে থাকবে। আর এই আন্দোলনকে বেগবান করতে হলে বাম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
সভায় ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার নেতা হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলী, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সংগঠক সুনয়ন চাকমাসহ বাম নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স র জ ল ইসল ম চ ধ র সরক র পতন র ব মপন থ ন করত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
কারাগারে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে ইসিকে চিঠি
দেশের সকল কারাগারে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবিতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছে বরগুনা জেলা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটি। একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলমের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে ইসি বরাবর চিঠি দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল।
আরো পড়ুন:
৬ জেলা ও ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলর ছাড়া খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ
চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামালের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘‘প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আরেকটি সিদ্ধান্ত নিতে আবেদন জানাচ্ছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় বাংলাদেশে বিভিন্ন কারাগারে কয়েক লাখ বন্দি (যারা মামলার আসামি হিসেবে কারাবন্দি থাকলেও সাজা হয়নি) কারাগারে থাকবেন। কারাবন্দিরা বিগত দিনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাননি। আমেরিকা, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের সময় কারাগারে থেকেও ভোট দিতে পারেন। কারাগারে নির্বাচনী বুথ করে তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।’’
এতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘কারাবন্দিরা ভোট দিতে পারেন না। যে কারণে ভোটের শতকরা হারও কমে যায়। কারাগারে বুথ করলে অতিরিক্ত আইন-শৃংখলা বাহিনীর দরকার হবে না। ২-৩ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্ভব।’’
এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হলে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন মনির হোসেন কামাল।
মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কারাবন্দিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। আমাদের দাবি হচ্ছে, কারাগারে ভোটগ্রহণ করলে লাখ লাখ ভোটার আর বঞ্চিত হবেন না। এতে যেমন ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন, তেমনি সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’’
ঢাকা/ইমরান/বকুল