স্বাস্থ্য খাতের সিন্ডিকেট ভাঙাসহ তিন দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বরিশালের ছাত্র-জনতা। অবরোধের কারণে হাজারো যাত্রীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা মহাসড়কে অবরোধ করে বসে পড়েন। বিকেলে তাঁরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা দিয়ে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়েন। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার পর ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিকেল সাড়ে চারটায় অবরোধস্থলে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনকারী ব্যক্তিরা। এতে বক্তব্য দেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দিন যত গড়াচ্ছে, ততই এই যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সমাবেশ বাড়ছে। আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরছি না। আন্দোলন আরও কঠোর হবে দিন দিন। আমরা চাই, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরিশালে আসবেন। বরিশালবাসীর দাবিদাওয়া নিয়ে বৈঠক করে এবং সরেজমিন ঘুরে এসব দাবি পূরণের উদ্যোগ নেবেন। অন্যথায় সময়সীমার পর কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হবে।’

আন্দোলনকারী ব্যক্তিদের তিন দফা দাবি হলো শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল নিয়োগ, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ দেশের সব হাসপাতালে দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক চিকিৎসকদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা, ডিজিটাল অটোমেশন ও স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক টাস্কফোর্স গঠন এবং স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনকে জনগণের ভোগান্তির বিষয় শুনে তদন্ত সাপেক্ষে আবার সুপারিশ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়া।‎

এদিকে এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে বিকেল চারটার দিকে অবরোধস্থলে যান ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন বরিশালবাসীর প্রাণের আন্দোলন। বরিশালের মানুষ দীর্ঘদিন স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে চরম অবহেলার শিকার। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা বলতে কিছু নেই। চিকিৎসক নেই, যন্ত্রপাতি নেই, যা–ও আছে, তা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল নেই। এর ওপর আছে ভোগান্তি, হয়রানি এবং পদে পদে সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি। এই অবস্থার অবশ্যই নিরসন করার এখন সময় এসেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরাও শামিল হয়েছি।’

যাত্রীদের দুর্ভোগ

অবরোধের কারণে ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজারো যাত্রী বাসে চরম দুর্ভোগে পড়েন।

মহাসড়কে চলছে অবরোধ। তাই উজিরপুর থেকে আসা এক বাবা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। আজ বিকেলে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ এলাকায়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল অবর ধ লনক র

এছাড়াও পড়ুন:

রোগী সেজে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান দুদকের 

ঢাকার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোগীদের টিকিট কাটা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ক্ষেত্রে টাকা লেনদেন, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকালে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-২–এর সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অভিযান পরিচালনা করে। সাদা পোশাকে রোগী সেজে হাসপাতালের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তারা।

আরো পড়ুন:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

হাসপাতালের নতুন ভবন চালুতে ১০ লাখ টাকা অনুদান দিল জামায়াত 

অভিযানকালে দুদক দল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে হাসপাতালে অনুপস্থিত পান। তবে রোগীদের টিকিট কাটা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অনিয়ম পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

অভিযান শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আরিফ আহমেদ বলেন, “অভিযোগ ছিল এখানে টিকিট কাটার সময় টাকা নেওয়া হয়। ওষুধ বিতরণে টাকা নেওয়া হয়। পাশাপাশি এখানে কনসালটেন্টসহ যারা কর্মরত আছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ তারা অনুপস্থিত থাকেন, ওয়াশরুমগুলো নোংরা— এমন অভিযোগও ছিল।”

তিনি আরো বলেন, “এ সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা আজ এখানে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে অনুপস্থিত পেয়েছি। তবে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ডিজি অফিসে মিটিংয়ে আছেন। আরো কয়েকজনকে অনুপস্থিত পেয়েছি। তাদের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা আমরা নিয়েছি। টিকিট কাটা ও ওষুধ বিতরণে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি নিজে রোগী সেজে দেখেছি, সেক্ষেত্রে তেমন ব্যত্যয় পাইনি। তবে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে আমি খুবই অসন্তুষ্ট। বিষয়টি এখানকার আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে জানিয়েছি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকেও টেলিফোনে বলেছি। এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভয়াবহ অবস্থা।”

চলমান ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের মধ্যে হাসপাতালের পরিবেশ উপযুক্ত নয় বলেও মন্তব্য করেন এই দুদক কর্মকর্তা।

হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেনটেটিভ) দৌরাত্ম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা জেনেছি, সরকারিভাবে গেজেটে দুই দিন নির্ধারিত আছে, তবে এখানে একদিন করা হয়েছে। এ বিষয়ে আরো তৎপর হওয়ার জন্য বলা হয়েছে।”

তিনি আরো জানান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যের মান সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।

দুদক কর্মকর্তার মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাইদুল ইসলাম বলেন, “মূলত আমাদের লোকবলের সংকট রয়েছে। আউটডোরে প্রচুর রোগীর চাপ হয়। তবে ব্যবহারকারী যারা আছেন, তারা টয়লেট ব্যবহারের পর পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার করেন না। তবু আমাদের ক্লিনারদের আমরা সম্প্রতি শোকজ করেছি। ইনডোর নিয়ে দুদক কর্মকর্তারা মোটামুটি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখানেও জনবল ঘাটতি আছে। আমাদের দুইজন আয়া আছেন, দুজনই অবসরের দারপ্রান্তে। তারপরও আমরা চেষ্টা করব আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে কীভাবে এটি সমাধান করা যায়।’’ 

বিষয়টি নিয়ে আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) মিটিং ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা/সাব্বির/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দফা দাবিতে রুয়েট শিক্ষার্থীদের আবারও বিক্ষোভ, হুঁশিয়ারি
  • রোগী সেজে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান দুদকের