আদালতের স্থগিতাদেশ সত্ত্বেও সেই প্রকৌশলীদের পদোন্নতির প্রস্তাব এলজিইডির
Published: 21st, September 2025 GMT
প্রকল্প থেকে আসা ২৫৭ প্রকৌশলীর পদোন্নতিসহ অন্যান্য কার্যক্রমের বিষয়ে আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও তাঁদের পদোন্নতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পঞ্চম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলীর শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চলতি দায়িত্ব প্রদান নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, প্রকল্প থেকে আসা কোনো কর্মকর্তা রাজস্ব বাজেটে নিয়মিত না হলে তাঁকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না।
এলজিইডিতে এই ২৫৭ প্রকৌশলীর চাকরি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, চাকরি নিয়মিতকরণে নানা অনিয়ম হয়েছে। এমনকি এই প্রকৌশলীদের সপ্তম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া ও ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া আইনসম্মত হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে পাশ কাটানো হয়েছে সব বিধিবিধান। আইনগত সুযোগ না থাকলেও দেওয়া হয়েছে পদোন্নতি।
এলজিইডিতে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২০১০ সালে ১৩১ জন, ২০১১ সালে ১০৯ জন এবং ২০১৩ সালে ১৭ জনকে এলজিইডির রাজস্ব খাতভুক্ত সহকারী প্রকৌশলী (পুর) পদে স্থানান্তর করা হয়।
এসব প্রকৌশলীর চাকরির অনিয়ম নিয়ে ২০২৩ সালের ২৮ জুন এবং ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী আরিফ চৌধুরী। গত বছরের ২ ডিসেম্বর আদালত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে তদন্ত কমিটি করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ৩ জুলাই বিচারপতি মো.
তদন্তে দেখা গেছে, রাজস্ব খাতে স্থানান্তরে অর্থ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি গ্রহণের আবশ্যকতা থাকলেও তা গ্রহণ করা হয়নি। উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশ বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই ২৫৭ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রে পিএসসিরও সুপারিশ নেওয়া হয়নি।
তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভূতাপেক্ষ তারিখে নিয়মিত করার সুযোগ না থাকায় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে এই প্রকৌশলীদের নিয়মিতকরণের আদেশ জারির বিধিগত প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তদন্ত কমিটির মতে, নিয়মিতকরণ যথাযথভাবে না হওয়ায় তাঁদের জ্যেষ্ঠতা গণনা করারও সুযোগ নেই। এমনকি তাঁদের সপ্তম গ্রেডে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া ও ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার আইনগত সুযোগ ছিল না। তাঁদের যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, সেটি আইনসম্মত হয়নি।
আরও পড়ুনএলজিইডির ২৫৭ প্রকৌশলীর নিয়োগ-পদোন্নতিতে অনিয়ম০৮ জুলাই ২০২৫আরেক ধাপ পদোন্নতির তোড়জোড়উচ্চ আদালতে মামলার কার্যক্রম চলার মধ্যেই এই প্রকৌশলীদের আরেক ধাপ পদোন্নতি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট শুনানিতে ২৫৭ জনের পদোন্নতিসহ অন্যান্য কার্যক্রমের বিষয়ে আদালত স্থগিতাদেশ জারি করেন।
এর মধ্যেই পঞ্চম গ্রেডের নির্বাহী প্রকৌশলীর শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রদানের লক্ষ্যে চলতি (সেপ্টেম্বর) মাসের শুরুতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় এলজিইডি। এলজিইডির প্রস্তাবের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে ২৩ সেপ্টেম্বর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. শাহজাহান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডি থেকে প্রস্তাবের বিষয়ে আলোচনার জন্য সভা ডাকা হয়েছে। আদালতের স্থগিতাদেশ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনসহ নথিপত্র পর্যালোচনা করেই কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
চলতি দায়িত্ব মানে সাময়িকভাবে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে তাঁর মূল পদের চেয়ে উচ্চতর কোনো শূন্য পদে দায়িত্ব দেওয়া। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা ‘শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব প্রদান নীতিমালা, ২০২৩’–এর ৮(৮) অনুচ্ছেদে বলা আছে, প্রকল্প থেকে আসা কোনো কর্মকর্তার রাজস্ব বাজেটে নিয়মিতকরণ না হলে তাঁকে চলতি দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এলজিইডির এই ২৫৭ জন প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলীরা বলছেন, প্রকল্প থেকে আসা এই প্রকৌশলীদের কারণে ২০০৮ সালের পর পিএসসির মাধ্যমে এলজিইডিতে নিয়োগ পাওয়া সহকারী প্রকৌশলীরা প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকার পরও প্রকল্প থেকে আসা প্রকৌশলীদের উচ্চ পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার কার্যক্রম আদালত অবমাননার শামিল।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র প রকল প থ ক স থ ন ন তর প রস ত ব শ ন য পদ কম ট র প এসস তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ ২৪ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে। এতে নারীর নিরাপত্তা, আবাসন, গবেষণা, আধুনিকায়ন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকারসহ নানা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে লিচুতলায় এ ইশতেহার ঘোষণা করেন প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাকুর রহমান (জাহিদ)। ইশতেহারে সাতটি বিষয়কে ‘হ্যাঁ’ ও সাতটি বিষয়কে ‘না’ হিসেবে উল্লেখ করেছে প্যানেলটি। এ ছাড়া তারা ছাত্র সংসদের মেয়াদের ১২ মাসে ২৪টি সংস্কার বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইশতেহারে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ, আবাসনসংকট নিরসন, মানসম্মত খাবার নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ক্যাম্পাস, তথ্যসেবা ও আধুনিকায়ন, সব অংশীজনের মধ্যে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিতকরণকে ‘হ্যাঁ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ৫০ টাকা হল ফি; হল দখল ও আসন–বাণিজ্য; ট্যাগিং ও ফ্রেমিংয়ের রাজনীতি; স্লাটশেমিং, সাইবার বুলিং ও শারীরিক নির্যাতন; ধর্মবিদ্বেষ; মাদক ও ছিনতাই এবং সন্ত্রাস ও সহিংসতাকে ইশতেহারে ‘না’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের দেওয়া ২৪টি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি হলো জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে রাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তকরণ, জুলাইয়ের হামলাকারীদের বিচার, জাদুঘর স্থাপন ও ১৬ জুলাইকে ‘সন্ত্রাস প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা করা; ক্যাম্পাসে মানসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা প্রদানে ডাইনিং, ক্যানটিনসহ অন্যান্য জায়গায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা ও মূল্য নির্ধারণ করা।
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণে শতভাগ আবাসিকতার রোডম্যাপ ঘোষণা এবং এর আগপর্যন্ত আবাসন ভর্তুকি দেওয়া; শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্বারোপ করতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা বৃত্তি দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো; লাইব্রেরি ও রিডিং রুম সম্প্রসারণ ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার শীতাতপনিয়ন্ত্রণে আনা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অন্যান্য আধুনিক সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষা কারিকুলাম আন্তর্জাতিকীকরণে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এমওইউ চুক্তি করা ও শিক্ষক বিনিময় প্রথা চালু করা।
প্রশাসনিক কার্যক্রম আধুনিকায়নে একটি অ্যাপের মাধ্যমে সব সুবিধা নিশ্চিত করা এবং টিএসসিসি ও মিলনায়তনের ভাড়া শিক্ষার্থীদের সাধ্যের মধ্যে আনা; চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারকে ২০ শয্যাবিশিষ্ট করা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া; নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট–সেবা দেওয়া; ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সিসিটিভি ও আলোকবাতির ব্যবস্থা করা।
পরিবহনব্যবস্থা উন্নত করতে ক্যাম্পাসের ভেতরে চলাচলকারী গাড়ির নিবন্ধনের ব্যবস্থা করা এবং বাসের ট্রিপ বাড়ানো; নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক হেল্পলাইনের আওতায় আনা, ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রেজেন্টেশনে হিজাব-নিকাব ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত করা এবং ‘চাইল্ড ডে–কেয়ার’ স্থাপনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; শিক্ষক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা; তথ্যসেবা নিশ্চিতকরণে একটি অ্যাপ চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়ন কোর্স চালু করা; শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন অন ক্যম্পাস জব নিশ্চিত করা; পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন করা।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় লিফট, ব্রেইল পদ্ধতি, অডিও বুক, বিশেষ বাথরুম–সুবিধা ও নানা প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা; ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার রক্ষায় উপাসনালয় ও ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা বাড়ানো; সংস্কৃতির বৈচিত্র্য বাড়াতে হামদ, নাত, কাওয়ালি ইসলামি দর্শনভিত্তিক নানা আয়োজন করা এবং এর সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা; স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়া; ক্রীড়া উন্নয়নে বাজেট বাড়ানো ও ক্রীড়াসংশ্লিষ্ট সুবিধার বৃহৎ সংস্কার করা। সাহিত্য, প্রকাশনা ও সামাজিক সংগঠনের উন্নয়নে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করা; পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ক্যাম্পাসের জন্য প্রকৃতি রক্ষা কমিটির মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া; অপরাধ দমনে অনলাইন-অফলাইনে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া এবং দলীয় শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা।
ইশতেহার ঘোষণা শেষে প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজা বলেন, ‘এটি আকাশকুসুম কোনো প্রস্তাব নয়। আমরা এ সংস্কার বাস্তবায়ন করব। এ ছাড়া জবাবদিহির জন্য আমরা চার্ট টাঙানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সেখানে কোন কাজ কতটুকু হলো, তা উল্লেখ করা থাকবে।’