বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে শেয়ার কারসাজি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিমা কোম্পানির আভ্যন্তরীণ তথ্যের অপব্যবহার (ইনসাইডার ট্রেডিং) ও আইনের অপব্যবহার করে সুবিধা আদায়সহ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ কারণে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আরো পড়ুন:

শেয়ার কিনেছেন বে লিজিংয়ের উদ্যোক্তা

গোল্ডেন হারভেস্টের নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ

এরই ধারাবাহিকতায় কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মওদুদ মোমেন, সহকারী পরিচালক মো.

মেহেদী হাসান রনি এবং নাভিদ হাসান খান।

বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএসইসির কঠোর পদক্ষেপ মূলধন বাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভিযোগ রয়েছে, ড. মোশাররফ হোসেন তার দায়িত্বপালনকালে একাধিক বিমা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের গোপন তথ্য ব্যবহার করে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছিলেন।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের অনৈতকি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যে কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেনের অভ্যন্তরীণ লেনদেন এবং বাজার কারসাজির অভিযোগের তদন্ত করা প্রয়োজন।

তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ১৭) এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ এর দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কমিশন উল্লিখিত বিষয়ের ওপর তদন্ত করার নির্দেশ দিচ্ছে। এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসইসির তিন জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি ইস্যুকারী কোম্পানি যেমন-ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসি এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগত আভ্যন্তরীণ তথ্য আইন লঙ্ঘেন অপব্যবহার করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

এছাড়া ট্রাস্টি-নিয়ন্ত্রিত প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলকে ব্যবহার করে এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেন হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদন্তের আওতায় আনা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। বিএসইসি তদন্ত করে দেখতে পারে। আমি এই স্টক মার্কেটেই ছিলাম, এখনো আছি। এমন কোনো ননকমপ্লায়েন্স কিছুই তো করিনি। এর আগেও বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব বিষয় চেক করা হয়েছে। বিএসইসি তদন্ত করুক, এটা বরং ভালো।”

বিএসইসি বলছে, মূলধন বাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অটুট রাখতে এ ধরনের অভিযোগ উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২২ সালের ১৫ জুন দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ এনেছিল। প্রতিষ্ঠানটির এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন ওই বছরের ১৪ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠায়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইড আরএর স ব ক চ ম শ ররফ হ স ন র ইন স য র ন স ব যবহ র কর স ক উর ট জ তদন ত কর ব এসইস র ব যবস থ তদন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা এবং সিকিউরিটিজ আইন-বিধি লঙ্ঘনের দায়ে আইএফআইসি ব্যাংক পিলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৮০তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন

‘সমন্বিত রোডম্যাপে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের টেকসই পথ পুঁজিবাজার’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১৫০০ কোটি অভিহিত মূল্যের এবং এক হাজার কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ডের জামিনদার হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক এবং অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক উক্ত বন্ডটি ইস্যু করেনি। মূলত শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড উক্ত বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে আইএফআইসি আমার বন্ড নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ধারনা দেয় যে, এ বন্ডটি আইএফআইসি পিএলসি ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ছিল বন্ডটির জামিনদার। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, উল্লেখ কমিশনের ৯৬৫তম কমিশন সভায় উক্ত বন্ডের অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে ৯৮০তম সভায় আইএফআইসি ব্যাংক পিলসির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শাহ আলম সারওয়ারকে ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত
  • সূচক আবার ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে, বাজারে উদ্বেগ
  • আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক এমডিকে ৫ কোটি টাকা জরিমানা
  • ‘সমন্বিত রোডম্যাপে ব্যাংক খাত পুনরুদ্ধারের টেকসই পথ পুঁজিবাজার’