আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্তে বিএসইসি
Published: 21st, September 2025 GMT
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের কর্মকাণ্ডকে ঘিরে শেয়ার কারসাজি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিমা কোম্পানির আভ্যন্তরীণ তথ্যের অপব্যবহার (ইনসাইডার ট্রেডিং) ও আইনের অপব্যবহার করে সুবিধা আদায়সহ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ কারণে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনুসন্ধান করে খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
আরো পড়ুন:
শেয়ার কিনেছেন বে লিজিংয়ের উদ্যোক্তা
গোল্ডেন হারভেস্টের নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ
এরই ধারাবাহিকতায় কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মওদুদ মোমেন, সহকারী পরিচালক মো.
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বিএসইসির কঠোর পদক্ষেপ মূলধন বাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অভিযোগ রয়েছে, ড. মোশাররফ হোসেন তার দায়িত্বপালনকালে একাধিক বিমা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের গোপন তথ্য ব্যবহার করে শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে সুবিধা নিয়েছিলেন।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের অনৈতকি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন যে কোনো ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেনের অভ্যন্তরীণ লেনদেন এবং বাজার কারসাজির অভিযোগের তদন্ত করা প্রয়োজন।
তাই সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নম্বর ১৭) এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ এর দ্বারা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে কমিশন উল্লিখিত বিষয়ের ওপর তদন্ত করার নির্দেশ দিচ্ছে। এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিএসইসির তিন জন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি ইস্যুকারী কোম্পানি যেমন-ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স পিএলসি এবং ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে সম্পর্কিত নীতিগত আভ্যন্তরীণ তথ্য আইন লঙ্ঘেন অপব্যবহার করা হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া ট্রাস্টি-নিয়ন্ত্রিত প্রভিডেন্ট ফান্ড বা অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক তহবিলকে ব্যবহার করে এ ধরনের তথ্যের ভিত্তিতে লেনদেন হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি। একই সঙ্গে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তদন্তের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাকে এখনো কিছুই জানানো হয়নি। বিএসইসি তদন্ত করে দেখতে পারে। আমি এই স্টক মার্কেটেই ছিলাম, এখনো আছি। এমন কোনো ননকমপ্লায়েন্স কিছুই তো করিনি। এর আগেও বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব বিষয় চেক করা হয়েছে। বিএসইসি তদন্ত করুক, এটা বরং ভালো।”
বিএসইসি বলছে, মূলধন বাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা অটুট রাখতে এ ধরনের অভিযোগ উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২২ সালের ১৫ জুন দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করে আইডিআরএর সাবেক চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) আর্থিক দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ এনেছিল। প্রতিষ্ঠানটির এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন ওই বছরের ১৪ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠায়।
ঢাকা/এনটি/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইড আরএর স ব ক চ ম শ ররফ হ স ন র ইন স য র ন স ব যবহ র কর স ক উর ট জ তদন ত কর ব এসইস র ব যবস থ তদন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার তথ্য চেয়ে সকালে চিঠি, বিকেলে না
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বিনিয়োগ করে ৫০ লাখ টাকা বা তার বেশি মূলধনি মুনাফা করেছে, এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়ে সেটির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ বা সিএসই। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এই তথ্য চেয়ে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে চিঠি পাঠিয়েছিল সিএসই। বিকেলে সিএসই সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কোনো তথ্য দিতে হবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছে বার্তা পাঠায়।
জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সিএসইর পক্ষ থেকে ওই চিঠি ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিতরণ করা হয়। বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফার ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে আজ সকালে চিঠিটি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে পাঠানোর পর তা নিয়ে বাজারে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এরপর বিকেলে তা সিএসই ফিরতি এক বার্তায় তথ্য দিতে হবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে জানিয়ে দেয়।
জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফা করেছে, এমন বিনিয়োগকারীর তথ্য চেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দুই স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে চিঠি পাঠায় বিএসইসি। চিঠিতে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিএসইসিতে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে তথ্য দেওয়ার কোনো সময়সীমা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনবিআর থেকে এ ধরনের তথ্য চাওয়া হলে বাজারে সেটির প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা না ভেবেই বিএসইসির পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের এসব তথ্য চেয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে চিঠি পাঠানো হয়েছিল। তবে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা না করে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর কাছে এ ধরনের চিঠি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। এর কারণ, চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের যে তথ্য চাওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয় তথ্য। তা ছাড়া এমন তথ্য পাঠানোর কোনো সময়সীমাও ছিল না। এ কারণে ডিএসইর পক্ষ থেকে এই চিঠি আর ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে বিতরণ করা হয়নি। তবে সিএসই আজ সকালে এই চিঠি বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে পাঠায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, আপাতত এ বিষয়ে আর অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করে পরে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
গত বছর শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি মুনাফার ওপর ১৫ শতাংশ হারে করারোপ করা হয়। সেই হিসাবে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ টাকার বেশি মুলধনি মুনাফা করেছে, তাদের কর দেওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা কর দিচ্ছেন কি না, তা যাচাইয়ে গত ২৫ আগস্ট এনবিআর থেকে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে বিএসইসিতে চিঠি পাঠানো হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ সেপ্টেম্বর এই তথ্য চেয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিএসই ও সিএসইকে চিঠি দেওয়া হয়।
একাধিক ব্রোকারেজ হাউস জানিয়েছে, আজ সকালে সংস্থাটির সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসে এই চিঠি পাঠিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। তবে বিকেলে তথ্য পাঠাতে হবে না মর্মে নতুন বার্তা পাঠানো হয়েছে।