দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও আস্থাহীনতার এক চক্রে বন্দী হয়ে আছে। স্বাধীনতা লাভের শুরু থেকে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে, তারা পুলিশকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার পরিবর্তে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি, প্রতিশোধমূলক মামলা, এমনকি নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করার মতো অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। ফলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ক্রমে ক্ষয়ে গেছে।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে রাজনীতিক, পুলিশ কর্মকর্তা, বিচারক ও শিক্ষাবিদেরা অকপটে এ অস্বস্তিকর বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। আলোচনা থেকে যে মূল দাবি উঠে এসেছে তা থেকে স্পষ্ট, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি। এই সংস্থা হতে হবে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা, আমলাতান্ত্রিক স্বার্থ ও পুলিশের নিজস্ব প্রভাব থেকে মুক্ত। কাঠামোগত এ পরিবর্তন ছাড়া বিচ্ছিন্নভাবে করা সংস্কার ব্যর্থ হয়ে পড়বে পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতির চাপের মুখে।

পুলিশের পদোন্নতি নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক আনুগত্য দিয়ে, যোগ্যতা দিয়ে নয়—এ রকম অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। এটা পুলিশ সদস্যদের মনোবল ও পেশাদারত্ব ধ্বংস করে। এ ব্যাপারে সাবেক বিচারপতি ফরিদ আহমেদ বলেছেন, নিয়োগ হতে হবে দ্রুত, স্বচ্ছ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত। 

আলোচনায় উঠে এসেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিশন ও স্বাধীন তদন্ত সেবা গঠন—এগুলো যথেষ্ট নয়। কারণ, এগুলো এখনো রয়ে গেছে মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। যেসব কমিশনে আমলা আর কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা প্রকৃত অপব্যবহার রোধ করতে পারবে না; বরং সেগুলো হয়ে উঠবে নিয়ন্ত্রণের আরেকটি হাতিয়ার।

গোলটেবিলে উপস্থিত কারও কারও মতে, পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে অনেক সময় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীরা ন্যায়বিচার পান না। কারণ, অনেক পুলিশ সদস্য এসব বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। পুলিশ সদস্যদের বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

পুলিশ বা এ রকম কোনো বাহিনীর সংস্কারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হলো দায়মুক্তির সংস্কৃতি। গত আমলে হেফাজতে মৃত্যু ও নির্বিচার গ্রেপ্তার নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ উঠেছিল। সরকার পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক চাপের কারণেই যদি ওই ঘটনাগুলো ঘটে থাকে, তাহলে এখন কেন তা বন্ধ হচ্ছে না—এমন প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। এ থেকে বোঝা যায়, প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশে এখনো জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু হয়নি।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় দেখা গেছে, রাজনৈতিকভাবে ব্যবহৃত পুলিশ কতটা ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে। একই ধারা অব্যাহত থাকলে বৈধতার সংকট আরও গভীর হবে। প্রকৃত সংস্কার মানে হবে ঔপনিবেশিক যুগের আইনের বদল, পুলিশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এমন একটি নজরদারি সংস্থা গঠন করা, যা সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য।

পুরোনো বন্দোবস্তের যারা বড় সুবিধাভোগী, তারাই সংস্কারের সবচেয়ে বড় বিরোধী। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র ও পুলিশ মিলে কীভাবে স্বৈরাচারী শাসনের শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলে হাসিনা সরকার, তার কাছের দৃষ্টান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্বাধীন পুলিশ কমিশনের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিরোধিতা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, সবার আগে এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন হতে হবে।

নাগরিকের প্রত্যাশা হলো, পুলিশ হবে গণতান্ত্রিক, সৎ, নীতিনিষ্ঠ ও নিয়মভিত্তিক। এ রকম আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ ও পুলিশ—সবারই মানসিকতা পাল্টাতে হবে। পুলিশ কোনো সরকার বা দলের নয়, জনগণের সেবক হবে—এই নীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এই প্রেক্ষাপটে পুলিশ সংস্কারের বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংস্কারের জন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ সদস য র জন ত ক স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিআর পদ্ধতি চাইলে জনগণের কাছে যান: ডা. জাহিদ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ চাচ্ছেন, তাদের জনগণের রায়ের জন্য যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, ‘‘পিআর চান, খুব ভালো কথা। পিআরের কথা বলে জনগণের কাছে যান। জনগণকে বুঝান, জনগণ মেনে নিলে আলহামদুলিল্লাহ। জনগণ যে রায় দিবে, সবাই মেনে নেবে।’’

আরো পড়ুন:

আ.লীগ ১৫ বছরে অর্থনীতিকে সম্পূর্ণ ফোকলা বানিয়েছে: মঈন খান

নাহিদ ইসলামের সাফ কথা, ‘নিম্নকক্ষে আমরা পিআর চাই না’

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমীতে পৌর বিএনপির সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।

ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘স্বৈরাচার যদি রুখতে হয়, রাজনৈতিক যে মানসিকতা, রাজনৈতিক যে কালচার; সেটার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে।’’

রাষ্ট্র সংস্কারের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামি কয়েকটি দল মাঠে আন্দোলন শুরু করেছে।

তাদের আন্দোলনের বিষয়ে ইঙ্গিত করে ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন,  ‘‘আজকে অনেকে বলছেন পিআর ছাড়া নাকি নির্বাচন হবে না এবং পিআর ছাড়া নাকি শাসক স্বৈরাচার হয়ে যাবে। আমার জানতে ইচ্ছে করে, দেশের সংবিধানে কোথাও কি স্বৈরাচার হওয়ার কথা লেখা ছিল? সংবিধানের তো দোষ নেই। দোষ হচ্ছে, যারা রাতের ভোট দিনে করেছেন; যারা বিনা ভোটের নির্বাচন করেছেন।’

মৌলভীবাজার পৌর বিএনিপর আহ্বায়ক সৈয়দ মমসাদ আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ুন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন। 

সম্মেলনে জেলা ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 

ঢাকা/আজিজ/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা উচিত: নাহিদ ইসলাম
  • বাগেরহাটে আসন বহালের দাবিতে ফের বিক্ষোভ 
  • ‘নির্বাহী আদেশে নয়, আ.লীগকের আইনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে’
  • হাসিনা আমলের পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্প এখনো কেন চলছে
  • সরকার একটি দলের পকেটে ঢোকার চেষ্টা করছে: রফিকুল ইসলাম
  • ‌দূষণকারীদের নাম প্রকাশে আনুন, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের মনের ভাষা বুজতে হবে: গয়েশ্বর রায়
  • যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক 
  • পিআর পদ্ধতি চাইলে জনগণের কাছে যান: ডা. জাহিদ